Bangla Jago Desk: চীনের অর্থনীতি সম্পর্কে গত ছয় মাস ধরে একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে, প্রবৃদ্ধির ধীরগতি, তরুণদের মধ্যে রেকর্ড বেকারত্বের হার, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা, দুর্বল রপ্তানি আয়, স্থানীয় মুদ্রার দর পতন এবং আবাসন শিল্পে সংকট। ধার আর লগ্নির মধ্যে ভারসাম্য গিয়েছে হারিয়ে। মন্দার মুখে দাঁড়িয়ে দেশ চালাতে হিমশিম শি জিনপিং। অর্থনীতিবিদরা বলছেন চিনে শুরু হয়েছে ব্যালেন্স শিট রিসেশন। এ হল এমন এক অবস্থা যখন সম্পদের মূল্য ক্রমশ কমতে থাকে। মানুষ খরচের বদলে সঞ্চয়ে জোর দেন। নানা খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যায়। রিটার্ন না মেলার আশঙ্কায় মানুষ ধার নিয়ে লগ্নির কথা ভুলে যান।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চিনে এখন সেটাই হয়েছে। ফলে চাহিদার অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ছে বাজার। নতুন লগ্নি কমে যাওয়ায় কমছে কাজের সুযোগ। আমদানি প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে উত্সাহ কমাতে ব্যাঙ্কগুলিকে সুদ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বৈদ্যুতিক গাড়ি কিনলে করছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে আবার সরকারের নিজের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে। গত কয়েক বছরে সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। সূত্রের খবর, চিনে সরকারি ঋণ এখন জিডিপি-র চেয়ে ৩ গুণ বেশি। চিনের অর্থনীতির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রিয়েল এস্টেট। সেখানেও এখন চরম সঙ্কট।
এদিকে বেজিংয়ের ওপর চাপ কমাতে জিয়োংয়ান নামে এক জায়গায় নতুন শহর তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বলা হয়েছিল জিয়োংয়ানের এই নতুন শহর হবে চিনের মধ্যে সেরা। দুনিয়ার মধ্যেও অন্যতম সেরা। ২০১৭ সালে কাজ শুরু হলেও তা আর এগোয়নি। বরং তৈরি হয়ে যাওয়া নানা নির্মাণ এখন ভেঙে পড়ছে। দেশে কেনাকাটা বাড়াতে দেশজুড়ে বহুতল তৈরি করা শুরু করে বেজিং। এখন দেখা যাচ্ছে যত বাড়ি তৈরি হয়েছে তত বাড়ি কেনার মতো কেউ নেই। ফলে ভেঙে ফেলতে হচ্ছে বহুতল। স্বভাবতই নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাধিক বড় সংস্থা দেউলিয়া হওয়ার পথে। তাতেই আরও বেড়েছে চিন্তা।
সমীক্ষা বলছে আর্থিক দুরবস্থার কারণেই সাধারণ মানুষ বাড়ি কিনতে পারছেন না। সূত্রের খবর, কর্মক্ষমতা কমার অজুহাতে আর যাতে মাইনে বাড়াতে না হয় সেজন্য ৩৫ বছর বয়স হলেই কর্মীদের ছেঁটে ফেলছে নানা সংস্থা। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে চিনের মুদ্রা ইউয়ানের দামও পড়তে শুরু করেছে। ডলারের সাপেক্ষে প্রায় ৫ শতাংশ পড়ে গেছে ইউয়ানের দাম। এক ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮ ইউয়ান। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাতে থাকা ডলার বিশ্ব বাজারে বেচে দিচ্ছে বেজিং। তবে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না বলে খবর। আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীরা লগ্নি গুটিয়ে নিচ্ছেন। পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না জিনপিং। আর ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ মানুষ।
Free Access