ad
ad

Breaking News

Telovelo's dacoit Kali

তেলোভেলোর ডাকাত কালীর সঙ্গে জড়িয়ে মা সারদা, নিত্যভোগে থাকে চালভাজা, মুড়িমুড়কি

পার্থিব জগতের সব প্রাণীকে যিনি সর্বদা কলন বা গ্রাস করে নিচ্ছেন, তাঁর নাম মহাকাল। এঁর কর্মের কোনো বিরাম নেই। সব সময় সংহার কার্যে রত।

Sarada, the mother of Telovelo's dacoit Kali, eats rice, murimurki on a daily basis.

Bangla Jago Desk, Mou Basu  :পার্থিব জগতের সব প্রাণীকে যিনি সর্বদা কলন বা গ্রাস করে নিচ্ছেন, তাঁর নাম মহাকাল। এঁর কর্মের কোনো বিরাম নেই। সব সময় সংহার কার্যে রত। আর এই মহাকালকে যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন তিনিই কালী। জগতের সৃষ্টি, স্থিতি সংহারকারিণী মহীয়সী মহাবিদ্যা মা কালী রজোগুণ দ্বারা সৃষ্টিকর্ত্রী, সত্ত্বগুণ দ্বারা পালনকর্ত্রী আর তমোগুণ দ্বারা সংহারকর্ত্রী। বাংলার মাটি শক্তিপীঠ। সাধারণভাবে জানা যায়, আনুমানিক ষোড়শ শতকে নবদ্বীপবাসী তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ প্রথম বাংলায় কালীমূর্তি স্থাপন করে পুজো শুরু করেন। তারপর যুগ যুগ ধরে পরম শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা ও গভীর ভক্তিতে এই বঙ্গভূমে মহাদেবী নিত্য পূজিতা হচ্ছেন। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত শত প্রাচীন কালীমন্দির। যেমন, হুগলির আরামবাগের কাছে তেলোভেলোর ডাকাত কালীর মন্দির। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শ্রীশ্রী মা সারদা-ও।
আরামবাগের পরেই তেলোভেলোর মাঠ। তেলো আর ভেলো হল পাশাপাশি ২টি গ্রাম। একসময় তেলোভেলো ছিল ডাকাতদের ঘাঁটি। কথিত, একদিন মা সারদা ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে দেখা করতে পায়ে হেঁটে কামারপুকুর থেকে রওনা দেন। পথে ক্লান্ত মা সারদা তেলোভেলোর মাঠে ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন। ডাকাত সর্দার মা সারদার মধ্যে নিজের আরাধ্য দেবী মাকালীর দর্শন পান। সে রাতে মা সারদাকে মুড়ি, মুড়কি ও চালভাজা দিয়ে যত্নআত্তি করে ডাকাত সর্দার ও তার স্ত্রী। ডাকাত সর্দারের প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে সেই থেকে এখনো মায়ের নিত্য ভোগের সঙ্গে মুড়ি, মুড়কি ও চালভাজা দেওয়া হয়।

মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কী জনশ্রুতি?

কথিত, দক্ষিণেশ্বরে রয়েছেন ঠাকুর শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব। শ্রীশ্রী মা সারদা কামারপুকুর থেকে পায়ে হেঁটে দক্ষিণেশ্বরে যাচ্ছেন। সঙ্গে ছিলেন আরও বেশ কয়েক জন মহিলা। কামারপুকুর থেকে আরামবাগ কয়েক মাইল পথ। আরামবাগ থেকে তারকেশ্বরের মধ্যে পড়ে তেলোভেলোর মাঠ। এখানে ছিল ডাকাত দলের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। অনেক পথ হেঁটে মা সারদা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। সঙ্গীরা ভয় পান সন্ধ্যা নামলেই ডাকাতদের খপ্পরে পড়তে হবে। তাঁরা তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকেন। কিন্তু তাঁদের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেন না ক্লান্ত মা সারদা। তিনি নিজেই বলেন তাঁর কথা না ভেবে সঙ্গীরা যেন এগিয়ে যান। তারকেশ্বরে সবার সঙ্গে দেখা হবে। এদিকে, জনমানবহীন তেলোভেলোর মাঠে যখন মা সারদা ক্লান্ত হয়ে কোনো রকমে হাঁটছেন তখনই চারিদিক কাঁপিয়ে নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে শোনা যায় এক হাড় হিম করা গর্জন—“কে যায়?”। মায়ের সামনে এসে দাঁড়ায় দৈত্যাকার চেহারার ডাকাত সর্দার ভীম। কিন্তু মা সারদা তাঁকে দেখে বিচলিত হননি। শিশুসুলভ সরলতায় তিনি বলেন তোমার মেয়ে গো বাবা। আমি সারদা। যাচ্ছি তোমার জামাইয়ের কাছে দক্ষিণেশ্বর। একথা শুনেই রুক্ষ কঠিন ডাকাত সর্দারের মনও গলে। তিনি ভাবেন এতদিন ডাকাতি করলেও কেউ তাঁকে এভাবে বাবা বলে ডাকেনি। এমন সময় তিনি দেখতে পান তেলোভেলোর মাঠ যেন অদ্ভুত এক আলোর জ্যোতিতে ভরে গেল। মা সারদার মধ্যে ডাকাত সর্দার ভীম নিজের আরাধ্য দেবী মা কালীকে দেখতে পান। মা সারদার মধুর কণ্ঠ শুনেছিলেন ডাকাত সর্দারের স্ত্রী-ও। তিনি মা সারদাকে নিজেদের কুটিরে নিয়ে গিয়ে যত্নআত্তি করেন। ঘরে ছিল মুড়িমুড়কি ও চালভাজা। তাই তিনি খেতে দেন মা সারদাকে। তৃপ্তি করে খেয়ে মাটির দাওয়াতেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন মা সারদা। পরদিন ভোরে ডাকাত সর্দার ভীম নিজেই মা সারদাকে তাঁর সঙ্গীদের কাছে পৌঁছে দেন। ডাকাত সর্দার ভীম ভাবেন বহু জন্মের পূণ্য ফলে মা ভবতারিণী নিজে এসেছেন তাঁর কাছে। তারপরই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন প্রাচীন এই মন্দির। এখনো মায়ের নিত্যভোগে দেওয়া হয় চালভাজা ও মুড়িমুড়কি।