ad
ad

Breaking News

Lord Jagannath's

প্রভু জগন্নাথের ছাপান্ন ভোগ

জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ হলেন পুরষোত্তম প্রভু জগন্নাথের ভক্ত। রথযাত্রায় ভগবানের পবিত্র রথের রশি টানেন ভক্তরাই।

Lord Jagannath's fifty-six enjoyments

Bangla Jago Desk , Mou Basu : জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আপামর জনসাধারণ হলেন পুরষোত্তম প্রভু জগন্নাথের ভক্ত। রথযাত্রায় ভগবানের পবিত্র রথের রশি টানেন ভক্তরাই। ধনী-দরিদ্র, জাত-ধর্ম নির্বিশেষে ভক্তদের প্রেমে মিলেমিশে একাকার হয়ে যান জগতের নাথ প্রভু জগন্নাথদেব। রাস্তায় রথে চেপে খোদ ভগবানই বের হন ভক্তদের খোঁজ নিতে। এমনটা আর কোনো উৎসবে হয় না।

প্রভু জগন্নাথদেব আসলে সর্ব ধর্মের এমন ১ সমন্বয়ী দেবতা যাঁর ওপর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী থেকে ১ জন ভূমিহীন অন্ত্যজেরও সমান অধিকার। তিনি একাধারে যেমন শবরদের দেবতা তেমনই তিনি বৈষ্ণবদের কৃষ্ণ। তিনিই শিব আবার তিনিই গণপতি, কালী। ঐশ্বর্যের গজদন্তমিনার থেকে প্রভু জগন্নাথ ভক্তদের মাঝে নেমে আসেন বলেই আক্ষরিক অর্থে রথযাত্রা পতিতপাবন যাত্রা। কেন না রথযাত্রায় অনিবার্যভাবে মিশে থাকে সাধারণ ভক্তদের প্রতি পরম করুণাময় ঈশ্বরের আশ্বাসবাণী—‘আমি তোমাদেরই লোক।’
জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ যেমন আলাদা তেমনই আলাদা দেবতাদের নিবেদন করা ভোগ। ছাপান্ন ভোগ করা হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরকে বলা হয় বিশ্বের বৃহত্তম রান্নাঘর। মাটির উনুনে কাঠ জ্বাল দিয়ে রান্না হয়। ৭৫২টি উনুনে রান্না করা হয়। ৪০০ জন সূপকার বা রাঁধুনি রান্না করেন মহাভোগ। এই মহাভোগ পুরোপুরি সাত্ত্বিক। এতে ব্যবহার করা হয় না নুন, আলু, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি, ঢ্যাঁড়শ, লঙ্কা ও মশলা। মাটির পাত্র উনুনের ওপর একের ওপর এক চাপিয়ে রান্না করা হয়। আশ্চর্যজনক হল, সবচেয়ে আগে রান্না হয় সবচেয়ে ওপরে থাকা পাত্রের খাবার।

কী কী থাকে ছাপান্ন ভোগে?
চিনির আস্তরণ দেওয়া মুড়ি বা উখুড়া, নারকেল নাড়ু বা নাড়িয়া কোরা, খুয়া বা খোয়া ক্ষীর, দই, পাচিলা কদলী বা পাকা কলা, কণিকা বা সুগন্ধি ভাত, তাতা খেচুড়ি বা শুকনো খিচুড়ি, মেন্ধা মুন্ডিয়া (এক রকম মিষ্টি), বড়া কন্তি (ভাজা মিষ্টি), মাঠা পুলি (সরু চাকলির মতো এক ধরনের পীঠে), হংস কেলি (এক রকমের মিষ্টি), ঝিলি (সরু চাকলি), এন্দুরি, আদাপাছেড়ি (আদা বাটা), সাগ ভাজা (শাক ভাজা), কদলী ভাজা (কাঁচকলা ভাজা), মরিচ বা ঝাল লাড্ডু, সান পীঠা (ছোটো আকারের মিষ্টি), বড়া, চালগুঁড়ি দিয়ে তৈরি ভাজা মিষ্টি আরিশা, বোঁদে, পাখাল ওড়িয়া (পান্তা ভাত), ক্ষীরি বা ক্ষীর, কদম্ব (মিষ্টি), পাট মনোহর (মিষ্টি), টাকুয়া (জিভে গজা), ভাগা পীঠে, গোটাই (নোনতা), ডালমা, বড়া কাকারা, লুনি খুরুমা (নোনতা), আমালু (মালপোয়া), পোড়া পীঠে, বিড়ি বুয়া, ঝাড়াই নাদা, খাস্তা পুরি, সাকার (চাটনি), কদলী বড়া (কলার বড়া), সানা আরিশা, পোড়ো পীঠা, কাঞ্জি (টক ভাত), দই পাখাল (দই ভাত), বড়া আরিশা, তিপুরি (ত্রিস্তরবিশিষ্ট পুরভরা খাবার), সাকারা, সুজি ক্ষীর, মুগা সিঝা, মনোহরা, মগজ লাড্ডু, পানা (শরবত), ঘি অন্ন, মিষ্টি ডাল, পালং শাক, বেসর (তরকারি)।





প্রত্যেক বছর রথের দিন পুরীর মূল মন্দির ছেড়ে ৩ দেবতা সুদৃশ্য রথে চেপে গুন্ডিচা মন্দিরের দিকে যাত্রা করেন। মূল মন্দির থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গুন্ডিচা মন্দির। গুন্ডিচা দেবী হলেন সম্পর্কে জগন্নাথদেবের মাসি। সপ্তাহখানেক সেখানে থেকে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে আসেন জগন্নাথদেব। রথের দিন সকালে সকাল ধূপ বা খিচুড়ি ভোগ খেয়ে ‘পহান্ডি বিজয়’ করে রথে ওঠেন জগন্নাথদেব, বলরাম আর সুভদ্রা। রথে অবস্থানের পর একে একে দ্বিপ্রহর ধূপ, সন্ধ্যা ধূপ বা বড় শৃঙ্গার ধূপ হয়ে থাকে। গমের তৈরি দ্রব্য দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। প্রভু জগন্নাথদেব রথে উঠে গুন্ডিচা মন্দিরে যাওয়ার সময় পথে যেসব ভোগ দেওয়া হয় তাকে দাণ্ডপন্তি ভোগ বলে। নানা ধরণের ফলমূল ভোগে দেওয়া হয়। প্রভু জগন্নাথই হলেন সাম্যবাদেরপ্রকৃষ্ট উদাহরণ একমাত্র সাম্যবাদী জন দেবতা। ভারত যে সব জাতি ও ধর্মের মিলনক্ষেত্র তা যেন সর্বার্থেই সজীব হয়ে ওঠে রথযাত্রায়।