Bangla Jago Desk , Mou Basu : দেবী অন্নপূর্ণাকে শাস্ত্রে শাকম্ভরী দেবীর অপর রূপ বলে মনে করা হয়। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে বিশ্বচরাচরের অন্নদায়িনী রূপে অন্নপূর্ণার পুজো হয়ে থাকে। মার্কণ্ডেয় পুরাণে দেবী নিজেই বলেছেন একশো বছর অনাবৃষ্টি হলে আমি জনশূন্য দেশে হঠাৎ আসব আর নিজের দেহ থেকে উৎপন্ন শাক দ্বারা সবার প্রতিপালন করব। তখন সবাই আমাকে শাকম্ভরী বলে জানবে। এই শাকম্ভরীই নবপত্রিকা হিসাবে দুর্গাপুজোর সময় পূজিতা হন। মা দুর্গার আরেক রূপ হল অন্নপূর্ণা। বাসন্তী পুজোর অষ্টমী তিথিতে মা অন্নপূর্ণার পুজো করা হয়। অন্ন শব্দের অর্থ হল ধান। আর পূর্ণা কথার অর্থ হল পূর্ণ। মা অন্নপূর্ণা কে বলা হয় অন্নদাত্রী। তিনি শক্তির অপর রূপ। দেবী অন্নপূর্ণা শক্তির এক রূপ। পুরাণ বা তন্ত্রে কোথাও অন্নপূর্ণাকে দ্বিভুজা কোথাও চর্তুভুজা বলা হয়েছে। গায়ের রঙ লাল, বিচিত্র বসন পরিহিতা, ত্রিনয়না। তিনি সব সময় অন্ন বিতরণ করছেন। বাঁ হাতে মধুর রসপূর্ণ মাণিক্য পাত্র আর ডান হাতে মণিখচিত বালা পরে আছেন আর সেই হাতেই ধরা আছে রত্নখচিত হাতা।
তাঁর মাথায় নবচন্দ্র, একপাশে ভূমি ও অন্যপাশে শ্রী। দেবী পার্বতীরই আর এক রূপ হলেন অন্নপূর্ণা। মা অন্নপূর্ণা অন্নদা নামেও পরিচিত। দেবী পার্বতী ভিক্ষারত শিবকে অন্নপ্রদান করে এই নাম পান। পুরাণ মতে চৈত্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কাশীতে আভির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী অন্নপূর্ণা। সেই সূত্রে এই তিথিতেই দেবীর বাৎসরিক পুজো হয়। হিন্দু বিশ্বাস অণুযায়ী, অন্নপূর্ণার পুজো করলে গৃহে অন্নাভাব থাকে না। কৃষ্ণানন্দ আগমবীশ রচিত তন্ত্রসার গ্রন্থে এই পূজার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। কাশীতে অন্নপূর্ণার একটি বিখ্যাত মন্দির আছে; এই মন্দিরে অন্নপূর্ণা পূজা ওঅন্নকূট উৎসব প্রসিদ্ধ। পশ্চিমবঙ্গে অন্নপূর্ণা পূজার বিশেষ প্রচলন রয়েছে।
রায়্গুনাকার ভারতচন্দ্র দেবী অন্নপূর্ণার কথা উল্লেখ করে অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন, যেখানে মা অন্নপূর্ণার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। মাইকেল মধুসূদন দত্তও দেবী অন্নপূর্ণা ও অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রশস্তি করেছেন তাঁর “অন্নপূর্ণার ঝাঁপি”কবিতায়। মার্কণ্ডেয় পুরাণের কাশীখণ্ড, দেবী ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ এবং কাশীপরিক্রমা ইত্যাদি গ্রন্থে দেবী অন্নপূর্ণা সংক্রান্ত নানা কাহিনি রয়েছে। অন্নপূর্ণা পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আর এক পৌরাণিক কাহিনী। পুরান মতে বিবাহের পর শিব পার্বতী সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের জেরে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। দু’জনের মধ্যে মতবিরোধে দেবী পার্বতী কৈলাশত্যাগ করে চলে আসেন। সেই সময় দেখা যায় মহামারি, খাদ্য কষ্ট। ভক্তরা আকুল হয়ে পড়ে, তারা দেবাদীদেবকে ডাকতে থাকে। সেই সময় ভিক্ষার ঝুলি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মহাদেব। কিন্তু দেবীর মায়ায় কোথাও ভিক্ষা জোটে না তাঁর। তখন শোনা যায় কাশিতে এক নারী সকলকে অন্ন দান করছেন। ভোলানাথ সেখানে উপস্থিত হলে, ভোলেনাথের কিন্তু দেবীকে চিনতে একটুও অসুবিধা হয় না। মহাদেব মায়ের কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করেন। সেই ভিক্ষা গ্রহণ করে মহামারী এবং খাদ্য ভাব থেকে ভক্তকুলকে রক্ষা করেন তিনি। এরপর কাশিতে মা অন্নপূর্ণার মন্দিরের স্থাপন করা হয়।চৈত্র মাসে শুক্লা অষ্টমী তিথিতে কাশীতে আভির্ভূতা হয়েছিলেন দেবী অন্নপূর্ণা।
আশ্বিন মাসে দুর্গা পুজো হয়ে থাকে। কিন্তু শরৎকালে যে দুর্গাপুজো হয় তা অকালবোধন বলে পরিচিত।লঙ্কারাজ রাবণকে বধের উদ্দেশে শ্রীরামচন্দ্র অকাল বোধন করেন এবং তখন থেকে দুর্গাপুজো শরৎকালে শুরু হয়। আদি দুর্গাপুজো কিন্তু চৈত্র মাসে হয়, যা বাসন্তী পুজো নামে আমাদের কাছে পরিচিত। দেবী দুর্গার প্রথম পুরোহিত হিসাবে পুরাণে রাজা সুরথের কথা উল্লেখ রয়েছে। যোদ্ধা হিসাবে রাজা সুরথ ছিলেন খুব দক্ষ। রাজা সুরথকে চিত্রগুপ্তবংশী রাজা (চিত্রগুপ্তের বংশধর) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দুর্গা সপ্তশতী দেবী মাহাত্ম্য এবং মার্কণ্ডেয় পুরাণে। সুরথ সুশাসক ও যোদ্ধা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। কোন যুদ্ধে নাকি তিনি কখনও হেরে যাননি। একবার প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা তাঁকে আক্রমণ করলে তিনি পরাজিত হন, এই সুযোগে তাঁর সভাসদরা লুঠপাঠ চালায়। নিজের কাছের লোকেদের এমন আচারনে তিনি অবাক হয়ে যান। এই সময় তিনি ঘুরতে ঘুরতে ঋষি মেধসের আশ্রমে পৌঁছান। ঋষি তাঁকে সেখানেই থাকতে বলেন। কিন্তু রাজা মনের শান্তি পান না। এর মধ্যে একদিন তাঁর সঙ্গে সমাধি বলে একজনের দেখা হয়। তিনি জানতে পারেন সমাধিকে তার স্ত্রী ও ছেলে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, তবুও তিনি বউ ছেলের ভালো-মন্দ এখনও ভেবে চলেছেন। তাঁরা দুজনেই বিস্মিত হলেন যে, যাদের কারণে তাঁরা আজ সব হারিয়েছে, এখনও তাঁরা তাদের ভালো চেয়ে যাচ্ছেন। ঋষিকে একথা জানাতে তিনি বলেন যে এসবই মহামায়ার ইচ্ছা। এরপর ঋষি মহামায়ার কাহিনী বর্ণনা করেন। ঋষির পরামর্শ মতই রাজা সুরথ কঠিন তপস্যা শুরু করে। পরে মহামায়ার আশীর্বাদ পেতেই রাজা বসন্তকালের শুক্লপক্ষে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন সেই সময় থেকে শুরু হয় বাসন্তী পুজো।
বসন্তকালে চৈত্র নবরাত্রির নবম দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রামনবমী পালিত হয়। হিন্দুশাস্ত্রে এই দিনটির অনেক মাহাত্ম্য। মনে করা হয় অযোধ্যারাজ রাজা দশরথ ও রানি কৌশল্যার সন্তান হিসাবে এই দিন দেবতা রামের জন্ম হয়। তাই এই দিনটি রামনবমী হিসাবে পালন করা হয়। ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার হলেন দেবতা রামচন্দ্র। মনে করা হয় ভগবান বিষ্ণু পৃথিবীতে লঙ্কার রাজা রাবণকে শাস্তি দেওয়ার জন্যই মানব রূপে মর্ত্যে এসেছিলেন। রাবণ ছিলেন বরপ্রাপ্ত। দেববতারা তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করে এঁটে উঠতে পারছিলেন না। তাই বিষ্ণু মানুষরূপে পৃথিবীতে এসে ধর্মরক্ষার জন্য রাবণকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। সেই যুদ্ধে রাবণ প্রাণ হারান।