ad
ad

Breaking News

Paila Baisakh

আবেগ ও আন্তরিকতায় কে এগিয়ে, পয়লা বৈশাখ নাকি ইংরেজি নববর্ষ

আনন্দ বসন্ত সমাগম শেষে গুটিগুটি পায়ে এসে পড়ল আবার এক নতুন বছরের যাত্রা। নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে আর পুরনো বছরের মূল্যায়ণ বাংলা সনের আর একটি শুভ সূচনা

Who is ahead in passion and sincerity, Paila Baisakh or English New Year?

Bangla Jago Desk : আনন্দ বসন্ত সমাগম শেষে গুটিগুটি পায়ে এসে পড়ল আবার এক নতুন বছরের যাত্রা। নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে আর পুরনো বছরের মূল্যায়ণ বাংলা সনের আর একটি শুভ সূচনা। পুরনো থেকেই সমিধ সংগ্রহ করেই নতুন বছর আসে। আর এই পারস্পরিক ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের জীবন হয় সঞ্জীবিত, উদ্দিপিত। এভাবেই এগিয়ে চলে সময়, এগিয়ে চলে জীবন। সাফল্য বা ব্যর্থতা, পূর্ণতা-অপূর্ণতা পাল্লা যে দিকেই ভারী হোক না কেন- আমাদের একটা আবেগ জুড়ে থাকে নববর্ষকে ঘিরে। সহসা যেন নব পল্লবদল আর আম্র মঞ্জরী শোভিত গাছ আর সোনালি রোদের পরশ পেয়ে মনে পড়ে আজ ‘পয়লা বৈশাখ’।
কিন্তু সেই অর্থে বাঙালি জীবনে কি পয়লা বৈশাখের সেই গুরুত্ব আর আছে? ব্যবহারিক জীবনে কি বছরের প্রথম দিনটি এখনও সারা বছরের অক্সিজেন হয়ে দেখা দেয়? দেখা যাক, ঠিক কতটা খাঁটি বাঙালি অস্মিতা জাগায় আমাদের চেতনায় পয়লা বৈশাখ।

সাঁই সাঁই করে জেট গতিতে ছুটে চলা ছুটে চলা আধুনিক “আত্মঘাতী” বাঙালি তো কবেই বিশ্বনাগরিক হয়ে গেছে। তার রোজনামচায় আজ নবরাত্রি তো কাল ছটপুজো,পরশু ভ্যালেন্টাইন ডে তো তারপর ক্রিসমাস পরব। বারো মাসে তেরো পার্বণের কনসেপ্ট বদলে গিয়ে চলমান পরবের সংখ্যা এখন চতুর্গুন। কিন্তু এসবের মধ্যে পয়লা বৈশাখ যেন সত্যিই একা। তার না আছে আবাহন, না আছে বিসর্জন। এখন পারিবারিক বাতাবরণই আমূল বদলে গেছে বাঙালি জীবনে। পশ্চিমী সভ্যতার অমোঘ আকর্ষণে আমাদের জীবন এখন ছোট পরিবার সুখী পরিবারের খণ্ডচিত্র। সেখানে ভালোদাদু, ছোটঠাকমা, মণিপিসি, ফুলকাকিমা বা রাঙাকাকুরা কোথায়? তারা সব ফিনিক্স পাখীর মতো লুপ্তপ্রায়। জমজমাট পারিবারিক বাতাবরণে সকাল থেকে পুজো, খাওয়া-দাওয়া, নতুন জামাকাপড় পরা- হইচই আনন্দ সব ভাগাভাগি হয়ে যেত এবাড়ি থেকে ওবাড়ি সেখান থেকে পাড়া। সবাই যেন একই পরিবার-এই মনোভাব যেন ছোট থেকে বড় সবার মধ্যে চারিত হত। কিন্তু এখন সেই পরিবারতন্ত্রও টুকরো টুকরো তাই পয়লা বৈশাখের সকালও যেন আর রোদ ঝলমল নয়।

ফ্ল্যাট কালচার এখন পাড়া শব্দটাই ভুলিয়ে দিয়েছে। পরিবার বলতেই তিন বা চার জনের সংখ্যা। সব থেকে বড় কথা অবাধ, স্বাধীন পশ্চিমী জীবনমুখিতার অমোঘ আকর্ষণে বেশিরভাগই বাড়িতে না কাটিয়ে বাইরে আনন্দ উপভোগ করতে বেশি উত্সাহী। আর এই ধারণাকে মান্যতা দিতে চারিদিকে ভুরিভোজের আয়োজন। শুদ্ধ বাঙালি খানা খেতে হুজুগে বাঙালি এখন পাঁচতারা হোটেলে প্রায় হত্যে দেয়। পুজো দেওয়া, মন্দিরে দেবদর্শন এখন ব্যাকডেটেড। বাঙালির নববর্ষ উদযাপন এখন ফিউশন উত্সবের চেহারা নিয়েছে।সময় বদলেছে, সমাজচিত্রও বদলেছে। তারই ফলশ্রুতি এখন ১লা বৈশাখের আনন্দ অনুষ্ঠানে পাশ্চাত্য রীতির প্রাবল্য। বাড়ির বদলে হোটেলে খাওয়া-দাওয়া, বৈঠকি আড্ডা ছেড়ে রাতভর পার্টি-এসবের চল এখন বেশি। কোথাও আবার উঠতি ছেলেমেয়েরা ডিজে চালিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে। তাদের কাছে দিনটার কোনো মাহাত্ম্য নেই আছে শুধু তাত্ক্ষণিক আনন্দটুকুর নির্যাস পাওয়া। কিন্তু ভাবলে অবাক লাগে এই নববর্ষকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কি সুন্দর ভাবে আমাদের সাংস্কৃতিক জীবনে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। নতুন বছরের প্রতম দিনটি তাঁর কাছে ছিল বিশ্ববন্দনার দিন, দীক্ষার দিন। তাঁর চোখ দিয়েই আমরা নববর্ষের প্রথম দিনটিকে প্রাত্যহিকতা ও লোকাচারের জীর্ণতা মুক্ত হয়ে নিখিল বিশ্বেশ্বরকে প্রণাম করার প্রয়াস দেখি। ১৩০৯ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখ আশ্রম বিদ্যালয়ে প্রথম নববর্ষ উত্সব পালনের সূচনা করেছিলেন তিনিই। শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি এমনই যে সেখানে প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে কোনো বেড়াজাল ছিল না। তাই প্রকৃতির প্রসন্নতা আর রুদ্রতা সেখানে সমান ভাবে অভিঘাত রচনা করত মানব মনে। বিশ্বপথিক কবি তাই নববর্ষের প্রথম দিনটিকে দেখেছিলেন প্রার্থনার স্তব্ধক্ষণ রূপে আবার কখনো চিত্তের উদ্বোধন ও জাগরণের উত্সবক্ষণ হিসাবে। আমরা সত্যিই আত্মঘাতী বাঙালি-রৌদ্রোজ্জ্বল বৈশাখের শত আড়ম্বরতার মাঝে কোথাও যেন লুকিয়ে একাকীত্বের ছায়া। যেখানে প্রতীক্ষার ব্যগ্রতাও যেমন নেই তেমনই নেই সমাপ্তির আক্ষেপ। সত্যি ১লা বৈশাখ আজ একা। একলাই তার পথচলা