চিত্র: সংগৃহীত
মুহাম্মদ নাসের উদ্দিন: ভারতের প্রখ্যাত চিকিৎসক, জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ বিধান চন্দ্র রায় বিহারের পাটনার বাঁকিপুরে ১৮৮২ সালের ১ জুলাই ভূমিষ্ঠ হন। পিতা প্রকাশ চন্দ্র রায় যশোহরের রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশের পরবর্তী সপ্তম পুরুষ। আবগারি দফতরের ইনস্পেক্টর পদ গ্ৰহণ, পরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চেয়ারে আসীন হন। পাঁচ সন্তানের প্রথম দুই কন্যা সুশর্বাসিনী, সরোজিনী, তিন পুত্র সুবোধচন্দ্র, বিধানচন্দ্র, সাধনচন্দ্রদের মাতা অঘোরকামিনী দেবী ছিলেন অত্যন্ত সুন্দরী ও বুদ্ধিমতী রমণী এবং বিপিন চন্দ্র বসুর কন্যা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতা-মাতাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করতেন। ১৮৮৫ সালে পাটনার স্থানীয় পাঠশালায় পাঠচর্চা শুরু হয়। এরপর ইংরেজি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। স্কুল জীবনে বিধান চন্দ্র ক্রীড়ায় মনোযোগী ছিলেন। মাতা ভীষণ অসুস্থ হয়ে ১৮৯৬ সালের ১৫ জুন অকাল মৃত্যু হয়। পত্নীর মৃত্যুতে পিতা প্রকাশচন্দ্র ভীষণ দুঃখিত হন (Dr. Bidhan Chandra Roy)।
আরও পড়ুনঃ Carlos Nodar Paz: কোচ হিসেবে ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএল ট্রফি দিতে চান নোদার
অতঃপর বিধান চন্দ্র প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হয়ে কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হয়ে পরীক্ষায় সফল হলেন। ১৯০১ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে কলকাতায় বসবাস আরম্ভ করেন। কলকাতায় ওয়াইএমসিএ ছাত্রাবাসে অবস্থান করে পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের হস্টেলে চলে যান। ডাক্তারি পাঠকালে কলেজের অধ্যক্ষ জেনারেল বমফোর্ড, সহকারি অধ্যক্ষ কর্নেল লুকিস তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি ইংরেজিদের মতো বিসি রায়কে বেঞ্জামিন চার্লস রায় লিখতেন। ১৯০৬ সালে এলএমএস পরীক্ষায় সফল হয়ে প্রাদেশিক ডাক্তারি বিভাগের চাকরিতে ভর্তি হয়ে মেডিক্যাল কলেজের সহকারি হাউস ফিজিসিয়ান পদে নির্বাচিত হন। হাসপাতালে চাকরির সঙ্গে এমডি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯০৮ সালে সফল হয়ে প্রাদেশিক মেডিক্যাল সার্ভিসের সভ্য হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সফর করেন (Dr. Bidhan Chandra Roy)।
কর্নেল লুকিসের পরামর্শে এফআরসিএস ও এমআরসিপি পরীক্ষার জন্য ১৯০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ড পাড়ি দেন। অতঃপর উক্ত ডিগ্রি অর্জন করে ১৯১১ সালের জুন মাসে দেশে ফিরে আসেন। ১৯১১ সালের ৭ ডিসেম্বর পিতার অকালপ্রয়াণ হয়। এরপর ৮৪ নম্বর হ্যারিসন রোডের বাড়িতে চিকিৎসা প্রাকটিস সূচনা করেন। ১৯১৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সভা মনোনীত হন। ১৯১৯ সালে বিধানচন্দ্র ক্যাম্বেল স্কুল থেকে পদত্যাগ করে কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজে (বর্তমানে আরজি কর) মেডিসিনের অধ্যাপক পদে যোগ দেন। ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ফেলো নিযুক্ত হন। ১৯২৩ সালে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯২৮ সালে কলকাতার পার্ক সার্কাস কংগ্ৰেস অধিবেশনে যোগাযোগ করেন। ১৯২৯ সালে এআইসিসি সভায় নেতাজিকে সভাপতির রুলিংকে চ্যালেঞ্জ করে মুলতবি প্রস্তাব করেন। ১৯৩০ সালের ২৬ আগস্ট ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্ৰেফতার হন। ১৯৩১ সালে কলকাতা পুরসভার মেয়র হন (Dr. Bidhan Chandra Roy)।
Bangla Jago fb page: https://www.facebook.com/share/193NB43TzC/
১৯৩৪ সালের অক্টোবর মাসে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্ৰেস সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। ১৯৪৭ সালের ২ জুন ইউরোপ যাত্রা করেন। ১ নভেম্বর স্বদেশে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৫৭ সালের ২৬ এপ্রিল তৃতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হন। ১৯৫৭ সালের ৩০ এপ্রিল পূর্ব আঞ্চলিক পরিষদের উপপ্রধান মনোনয়ন পান। ১৯৬১ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারত সরকার প্রদত্ত ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। মহান সমাজসেবক, খ্যাতনামা চিকিৎসক, জননায়ক, ভারতরত্ন এই মানুষটি ১৯৬২ সালের ১ জুলাই পরলোকগমন করেন। তাঁর ইচ্ছা অনুসারে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিটের বাসভবনটিতে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (Dr. Bidhan Chandra Roy)।