চিত্রঃ নিজস্ব গ্রাফিক্স
Bangla Jago Desk:সুদীপ্ত ভট্টাচার্য: প্রিয় জটা, গত বৃহস্পতিবার, ছিল ৩ জুলাই, ২০২৫। দুপুরের মধ্যেই স্পেনে এক মর্মান্তিক গাড়ি দুর্ঘটনায় তোমার মৃত্যুর খবর বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল সকলকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া তোমার মৃত্যুর খবর, প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না গোটা বিশ্বের ফুটবল দুনিয়ার আট থেকে আশি সকলের। কিন্তু পরে সংবাদ মাধ্যমে তোমার ছবি দেওয়া ‘প্রয়াত জটা ও তাঁর ভাই আন্দ্রের মৃত্যুর খবরটা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা।’ খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেল না। এতটা তাড়াতাড়ি না হলেই তো ভাল হত! চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে নেশন কাপ জয়, কিংবা ছোটবেলার বান্ধবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। মনে হয় তোমার বিদায় নেওয়ার খুব তাড়া ছিল দিয়াগো জটা! কিন্তু এতটা অস্থির বা তাড়াহুড়ো তো তুমি কখনও করোনি। এমনকি ফুটবল পায়ে মাঠে নেমেও না। তবু কেন এত তাড়াহুড়ো! লক্ষ টাকার এই প্রশ্নটার উত্তর যে আর কারও কাছেই পাওয়া যাবে না। কিংবা আর কখনও সমাধান হবে না অজানা অঙ্কের। (Diogo Jota)
ফুটবলারদের চোট-আঘাত থাকবে। থাকবে নানা ঘাত-প্রতিঘাতও। কিন্তু তবুও নিজেদের লক্ষ্য স্থির থাকতে হয়। জটাও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। নিজের প্রতিভা, দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও যখন দিনের পর দিন রিজার্ভ বেঞ্চে বসে কাটালেও হতাশ হননি। হতাশায় হারিয়ে যেতে দেননি নিজের লক্ষ্যকেও। পর্তুগাল দলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মত তারকা রয়েছেন, যার কারণে অনেকটা সময়ই বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছে জটাকে। তবুও কখনও তাঁর রাগ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাননি। সেই ছোট থেকেই যে তোমার হৃদয়ে বহমান শান্ত ও স্নিগ্ধতার বীজ রোপণ করে দিয়েছিল তা কখনই ভেঙে যেতে দাওনি। যেনো কোনও এক ধর্মীয় সন্তের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে ধ্যানে বসেছিলে এসেছিলে তুমি। যে ধ্যানে আর ভাঙেনি শত চেষ্টাতেও। কিন্তু কেউ জানত মাত্র ২৮-ই চির শান্তির দেশে পাড়ি দেবে তুমি! তোমার মৃত্যু হার মানিয়েছে দার্শনিক বিল শ্যাঙ্কলির ভাবনাকেও।(Diogo Jota)
[আরও পড়ুনঃ Malda: সরকারি হাসাপাতালে নিঃখরচায় জটিল অস্ত্রোপচার, অসাধ্য সাধন করল মালদা মেডিক্যাল কলেজ]
পর্তুগালের পোর্তর ছোট একটি শহর মাসেরেলার ধুলো-বালি মেখেই তোমার উত্থান জটা। যে ধুলোবালির কণাকে তুমি কখনও মুছে যেতে দাওনি শিরোনামের শীর্ষে থেকেও। ছোটবেলায় তাই তোমার শরীরের গঠন দেখে অনেকেই আদর করে ডাকতেন ‘স্মল গাই বলে।’ আজ তুমি এমন জায়গায় চলে গেলে, যেখানে শত চেষ্টা করেও পৌঁছবে না তাঁদের আদরের ডাক। আর তুমিও সাড়া দেবে না কখনও। আর কখনও দেখা যাবে না, পর্তুগাল কিংবা লিভারপুলের জার্সি গায়ে ফুটবল নিয়ে সবুজ গালিচায় তোমার দাপাদাপি বা ছটফটানি। দেখা যাবে না মাঠে নামার জন্য জটার ওয়ার্মআপ করার দৃশ্য-ও। কেননা দৃশ্যপটের সেই ছবির বক্সে আজ যে তালা গেল জটা। যে তালা তুমি নিজের হাতেই লাগিয়ে দিয়ে গেলে নিয়তির নিষ্ঠুর এক পরিহাসের বলি হয়ে। এত তাড়াহুড়ো তোমার কিসের ছিল সেটা ভেবেই তো এখন রাতের পর রাত চায়ের তুফানে ভাবার জন্য রেখে গেলে।(Diogo Jota)
[লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/Banglajagotvofficial]
জটা, তোমার আকস্মিক প্রয়াণে আজ কথা হারিয়েছেন ফুটবলপ্রেমীরা। চিরশয্যায় শায়িত হয়ে তুমি আনফিল্ডের সমস্ত মানুষকে একত্রে এনে দিলে। তোমার মৃত্যুতে ফুটবলপ্রেমীরা অসহায়, নিঃস্ব। তুমি প্রমাণ করে দিলে মানুষ্য জাতির সব চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বেই চিরকাল বিরাজ করবে মৃত্যু নামক চির সত্য নামক অমোঘ সত্যটা।
কিন্তু তবুও সব জেনে নশ্বর পৃথিবীতে তুমি অবিনশ্বর হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলে গোলাকার ওই বস্তুটাকে আঁকড়ে ধরে। স্বয়ং ঈশ্বরও তাই চেয়েছিলেন অল্প সময়ের জন্য। তাই ফুটবলকে তোমার পা থেকে কখনও কেড়ে নেননি তিনি। আজ বড্ড মনে পড়ছে তোমার উলভসে আসার সেই দিনটার কথা। কেননা এখান থেকেই তুমি স্বপ্নের বীজ রোপণ করার প্রথম কাজটা শুরু করেছিলে। তারপর ধীরে ধীরে ফুটবলের জন্য আরও কিছু দেওয়ার আশায় পাড়ি দেওয়া লিভারপুলে। অল রেডসদের শিবিরে এসে তৎকালীন কোচ যুর্গেন ক্লপের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা। কতকিছু। দল বিপদে পড়েছে, ঝলসে উঠেছ তুমি। ম্যাচ শেষে শান্তির হাসি হেসে, তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন ক্লপ। সেই দৃশ্য ধরে রাখতে ক্যামারাম্যানের ফ্ল্যাশের সেই ঝলকানি আজও ভোলেননি বিশ্বের ফুটবল দুনিয়া। কিন্তু তুমি নির্বিকার।(Diogo Jota)
পর্তুগিজরাও তোমার পারফরম্যান্সে গর্বিত। তাই তোমাকে তাঁরা স্থান দিয়েছিলেন প্রাক্তন কিংবদন্তী ফুটবলার লুইস ফিগোর ওপরে। এমনকি তাঁদের হৃদয়ে এতটাই তুমি জুড়ে ছিলে যে তাঁরা তোমাকে নিয়ে গানও লিখে ফেলেছিল। তবে সেই গান নাকি তুমি নিজে কখনও গাওনি একটি বারের জন্যও।
জটা তোমাকে নিয়ে লিখতে হলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে। তবুও লেখা শেষ হবে না। শেষে শুধু একটাই বলি, তুমি ও আন্দ্রে যখন কফিনে নিশ্চিন্তে শুয়েছিলে, তখন তোমার কফিনের সামনেই ফুল হাতে দাঁড়িয়ে তোমাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন জাতীয় দলে তোমার ক্যাপ্টেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, তোমার কবরের সামনে শ্রদ্ধায় নত হয়েছেন মেসিও। তোমার মৃত্যুর খবর পেয়ে তোমাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে এসেছেন তোমারই আর এক সতীর্থ বার্নান্দো সিলভাও। তুমি সবাইকে নিয়ে এলে একত্রে। কিন্তু তবুও বলছিল খুব তাড়া ছিল তোমার!(Diogo Jota)