Bangla jago desk, জয়ন্ত চক্রবর্তী: দেবাদিদেব মহাদেব এর এবার বড় আপত্তি দেবী দুর্গার মর্ত্যে বাপের বাড়ি যাওয়া নিয়ে। সঙ্গে আবার ছেলেপুলেরা আছে! মর্ত্যের যা অবস্থা! তাক বুঝে জুনিয়র ডাক্তারদের কেউ কামড়ে দিলেই হল! না না, এবার আর বাপের বাড়ি গিয়ে কাজ নেই! তার চেয়ে চলো বরং কিছুদিন বৈকুণ্ঠতে কাটিয়ে আসি। সাইট সিনও হবে, জল হওয়ারও বদল হবে! লক্ষ্মীটা ক’দিন ধরেই ঘ্যান ঘ্যান করছে একবার বৈকুণ্ঠতে যাওয়ার জন্যে। এবার সেখানে গেলেই তো হয়! আর যাই হোক চার পাঁচদিন ধরে তো উই ওয়ান্ট জাস্টিস এর চিল চিৎকার শুনতে হবে না! পিতৃপক্ষের অবসানে দেবী পক্ষের শুরুতে মা দুর্গা বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্যে বাক্সপাটরার ওপর বসেই পড়লেন – দেবাদিদেব মহাদেবের কথায় তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই! যা হচ্ছে হোক না, আমার আর কি! বাপের বাড়ি যাবো না! সম্বৎসর আমার পরিবারের লোকরা তাকিয়ে থাকে এই কটা দিনের দিকে! আমি গেলে একটু আনন্দ ফুর্তি হয়।
আর আমি যাবো না? গুটিকয়েক ছোঁড়া আর ছুঁড়ি আন্দোলন করল আর আমার বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল! না না, শম্ভু, তুমি আর বাধা দিওনা। আজ আবার মহালয়া। মণ্ডপে মণ্ডপে আলোর ফোয়ারা। আর এখন আমার বাপের বাড়ি না গেলে চলে! দেবাদিদেব মহাদেব গাঁজার কল্কেতে একটা টান দিয়ে বলেন, দেবী, তোমাকে ওরা কিছু করতে পারবে না। তুমি তো অসুরদলনী! কিন্তু যদি আমার লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ কিংবা কার্তিককে কামড়ে দেয়! জলাতঙ্ক না হোক, স্থলাতঙ্ক হবেই – তুমি সহ্য করতে পারবে তো তোমার ছেলেমেয়েরা হুপ হাপ শব্দ তুলে গাছে উঠে বসে আছে! দেবী দুর্গা এবার একটু থমকান। বলেন, তা ওরা আমার ছেলেপুলেদের কামড়াবে কেন? দেবাদিদেব গাঁজার ঘোরে চক্ষু একটু মুদিত করে বলেন-কামড়াবে কেন? আরে ওরা কি আর সজ্ঞানে কামড়াবে! ওরা তো অজ্ঞান তাই এই উৎসবের মরসুমেও আন্দোলন করছে! দেবী দুর্গা এবার যেন একটু সহনাভূতি সম্পন্না হন- তা ওরা আন্দোলন তো করবেই।
ওদেরও তো দাবি দাওয়া আছে। দেবাদিদেব এবার একটু হুঁশ মে আয়া। বললেন -দেবী, তুমি আরজি করের নাম শুনেছো! দেবী দুর্গা উত্তর দেন – তা আবার শুনিনি। আমার পিসতুতো ভাই এর মাসতুতো শালা ওখানে সিভিক ভলান্টিয়ার। আর আমি শুনবো না আর জি করের কথা! দেবাদিদেব বলেন জ্যাকপট মেরে দিয়েছো মাইরি। সিভিক ভলান্টিয়ার, তাও আবার আর জি করের! দেবী দুর্গা গাছকোমড় বেঁধে ঝগড়ার জন্য তৈরি হন -আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার সঙ্গে আর জি করের কি সম্পর্ক! এই তো সেদিন মর্নিং ওয়াকে যাওয়ার সময় আরজি কর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা রাধাগোবিন্দ কর এর সঙ্গে দেখা হল। উনি কি একটা বলছিলেন, উনি নাকি ভাবতেও পারেন না ওঁর ওখানে এই সব কান্ড কারখানা চলছে। দুর্গা মহাদেবের কাছ ঘেঁষে বসে বলেন – হ্যাঁ গা, কি হয়েছে গো! মহাদেব নিমীলিত চক্ষু মেলে বলেন – রাধাগোবিন্দ বাবুর হাসপাতালে একটা মেয়ে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে! দুর্গা গালে হাত দিয়ে বলেন – সে তো কবেই হয়েছে! হ্যাঁ, কাজটা খুব খারাপ হয়েছে।
হত্যাকারীদের শাস্তি আমরাও চাই। স্বর্গের লেডিস ক্লাব এর সদস্যরাও তো সেদিন ইন্দ্র জায়া শচী দেবীর নেতৃত্বে স্বর্গের রাজপথে উই ওয়ান্ট জাস্টিস ধ্বনি তুলেছিল। কিন্তু তার সঙ্গে আমার বাপের বাড়ি যাওয়ার সম্পর্ক কোথায়? জুনিয়র ডাক্তাররা কামড়ে দেবেই বা কেন? দেবাদিদেব এবার প্রাঞ্জল হন -আরে জুনিয়র ডাক্তাররা খেপে আছে তো। ওরা তো এখন পুতুলের মত নাচছে। বসরা যা বলছে তাই করছে! তাই বলছি বসরা যদি একটি দুটি জুনিয়র ডাক্তার কে লেলিয়ে দেয়…. তাই বলছিলাম কি এবার বাপের বাড়ি না গেলেই নয়! দেবী দুর্গা এবার মহাদেবের মুখের ওপর বলেন -আলবাত বাপের বাড়ি যাবো! এই মহালয়া তেই রওয়ানা হবো। দেখি আমাকে কে আটকায়? আমি অসুরদলনী দুর্গা। মর্ত্যের সব অসুর বধ করে আসবো। তা সে ধর্ষক খুনিই হোক আর জুনিয়র ডাক্তার কিংবা তাদের বসেরা হোক! পৃথিবীকে নিস্কলুশ করতে আমার আগমন রোধ করার সাধ্য কারও নেই। আমি যাবই! এরপর? এরপর অশ্বিন এর শারদপ্রাতে…..