চিত্র : সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: বছরের পর বছর ধরে বেআইনি বাংলাদেশি অভিবাসীদের ভারতের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টার ও সংশোধনাগারে আটকে রাখা হচ্ছে কেন, তার জবাব চাইল সুপ্রিম কোর্ট। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে এ ধরনের আটকবাসীদের সংখ্যা বেশি থাকায়, এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তাও জানতে চেয়েছে শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট রিপোর্ট বা হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকার ও অসম সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, অসমের ট্রানজিট শিবিরে আটক ৬৩ জন বিদেশিকে অবিলম্বে ফেরত পাঠাতে হবে।
দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা
বিচারপতি পারদিওয়ালা ও মহাদেবনের বেঞ্চ যে মামলাটি শুনছে, সেটির সূত্রপাত ২০১১ সালে কলকাতা হাই কোর্টে। তখনই জানানো হয়েছিল, ৮৫০ জন বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে আটক রয়েছেন। কিন্তু মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও গত ১২ বছরে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এখন সেই সংখ্যা কত, তা জানতে চেয়েছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বেআইনি অভিবাসী ধরা পড়লে ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত পাঠানোর কথা। দণ্ডপ্রাপ্ত হলেও কারাবাসের মেয়াদ শেষে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিজস্ব আইনেরই লঙ্ঘন করছে। বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘একজন বেআইনি অভিবাসী ভারতের নাগরিক নয়, সেটাই তো প্রমাণিত। তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন এতদিন ধরে তাঁর পরিচয় যাচাই করে চলেছে?’’
অসমে আটক অভিবাসীদের অবিলম্বে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এস ওক ও উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ অসমের ট্রানজিট শিবিরে থাকা ৬৩ জন বিদেশির বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করে। বেঞ্চ জানায়, যেই মুহূর্তে কারও নাগরিকত্ব নির্ধারিত হবে, তাঁকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের রাজধানীতে পাঠাতে হবে।
অসম সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছে আদালত। সরকারি আইনজীবীরা ফের হলফনামা জমার জন্য সময় চাইলে বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সরকার কি ফেরত পাঠানোর জন্য কোনো শুভ মুহূর্তের অপেক্ষা করছে?’’ আদালতের স্পষ্ট মত, অনির্দিষ্টকাল কাউকে আটকে রাখা সংবিধানের ২১ নম্বর ধারার লঙ্ঘন এবং এতে সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে।
পরিচয় যাচাই নিয়ে বিতর্ক
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যুক্তি দিয়েছে, আটক অভিবাসীদের সঠিক ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না, তাই তাঁদের ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু আটক ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবীরা দাবি করেছেন, সরকার এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি যে তাঁরা কোন দেশের নাগরিক। বাংলাদেশ সরকারও তাঁদের নিজেদের নাগরিক হিসেবে মানতে নারাজ।
আদালত পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে, ‘‘যদি কাউকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়, তবে অবিলম্বে তাঁকে ফেরত পাঠানো সরকারের দায়িত্ব। সঠিক ঠিকানা না জানাটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।’’ বিচারপতিরা নির্দেশ দিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে রাজ্য ও কেন্দ্রকে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, অসম সরকারকে বিশেষ কমিটি গঠন করে ট্রানজিট শিবিরগুলোর পরিস্থিতি ১৫ দিন অন্তর খতিয়ে দেখতে হবে। অন্যদিকে, ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে সুপ্রিম কোর্টে তাদের অবস্থান জানাতে হবে। এই মামলার নিষ্পত্তি কত দ্রুত হয়, তা এখন দেখার বিষয়।