ad
ad

Breaking News

Sri Lanka

শ্রীলঙ্কা ঘুরতে যেতে চান? তাহলে আপনার জন্য থাকলো এই জায়গার ঠিকানা

এই শহর যে ভালবাসা আর যত্ন দিয়ে তৈরি, তা অবশ্য শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ফোর্ট মিউজিয়ামে ঘুরলেই টের পাওয়া যায়

Visit from Sri Lanka

Bangla Jago Desk : মানিকে মাগে হিতে, শ্রীলঙ্কার ভাইরাল হওয়া গান যদি শরীরে হিল্লোল আর হৃদয়ে রোমান্সকে উসকে দিয়ে থাকে, মা তাহলে শ্রীলঙ্কার কোন শহরে আপনি সন্ধ্যাটা কাটাতে চাইবেন? কোন সমুদ্রতীরে বসে আপনি মনে মনে বলবেন, সাগরজলে সিনান করি সজল এলো চুলে..

আমি বলব গল। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলের সবচেয়ে সুন্দর শহর…

রাজ চক্রবর্তী বাংলা সিনেমাকে যে সব অজানা লোকেশন চিনিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার গল তার মধ্যে সেরা। দেব আর পায়েলকে নিয়ে তৈরি করা ‘লে ছক্কা’ যাঁদের মনে আছে, তাঁদের নিশ্চয়ই ভাল লেগেছিল সমুদ্র আর দুর্গকে ব্যবহার করে গানের চিত্রায়ণ। একটু ভাল করে দেখলেই বোঝা যায় এটা গোয়া নয়, আর দুর্গটা অনেক বিশাল। শ্রীলঙ্কা মানে যে অসাধারণ প্রকৃতি, ভারত মহাসাগরের নীল জলের দুর্নিবার আকর্ষণ, সেটাকে চমৎকার ধরেছিল লে ছক্কা।





শুধু এইটুকু বললে যদি গলকে চিনতে অসুবিধে হয়, তাহলে ক্রিকেট অনুরাগীদের আর একটা প্রিয় তথ্য মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। গলের বিখ্যাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামেই শ্রীলঙ্কার তারকা স্পিনার মুখাইয়া মুরলীধরন ৮ উইকেট নিয়ে ৮০০ টেস্ট উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ছুঁয়েছিলেন। এবং ক্রিকেট ইতিহাসে ঢুকে পড়া সেই ম্যাচে মুরলীধরনের প্রথম উইকেটটি ছিল সচিন তেন্ডুলকরের।

সমসাময়িক দুটো উদাহরণ দিয়ে শুরু করলেও আসলে গল ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা একটা রোম্যান্টিক শহর। পর্তুগীজ, ওলন্দাজ আর ব্রিটিশ স্থাপত্য এমনভাবে শহরটাকে সাজিয়েছে যে হঠাৎ করে দেখলে মনে হতে পারে আমরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোনও দ্বীপরাষ্ট্রে নেই, ইউরোপের কোনও শহরে চক্কর খাচ্ছি। পর্তুগীজরা সেই ১৬৬৩ তে শহরটাকে সবচেয়ে বড় পরিচিতি দিয়ে গিয়েছে, গলের বিখ্যাত দুর্গ। যা আজকে শুধু আইকনিক নয়, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটও বটে। কিন্তু একটা দুর্গ বা আইকনিক লাইট হাউস তো শুধু শহরটার নির্মাণ করে না, তার সংস্কৃতি, পরিচিতি তৈরি হয় অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা কাফেতে, সন্ধ্যার পরে টুংটাং আওয়াজ ওঠা আড্ডায়, গিটার হাতে গান করতে থাকা তরুণীর স্বরলিপিতে অনুচ্চারিত শব্দগুলোতে। সেটাই শহরটার মেজাজ তৈরি করে দেয়, সেটাই আমার মতো পায়ের তলায় সর্ষে লাগানো মানুষদের টেনে আনে।

এমনিতে প্রথম যখন শ্রীলঙ্কায় গিয়েছিলাম, আমার দেশটাকে দক্ষিণ ভারতের এক্সটেনশন বলেই ভুল হয়েছিল। ট্রেন, অটো, ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা আর তার পাশাপাশি একটা চমৎকার নিয়মানুবর্তী জীবনচর্যা, আসলে কেরালা বা তামিলনাড়ুর কোনও শহরকেই মনে করায়। ইতিহাস এবং রাজনীতি আমাদের মনে করিয়ে দেয়ও শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তামিলরা। গত দশকের অশান্ত রাজনীতি আর বারুদের গন্ধ পেরিয়ে শ্রীলঙ্কা জীবনের ছন্দে ফিরে আসার পর এই দ্বীপরাষ্ট্র আবার পর্যটকদের ফেভারিট ডেস্টিনেশনও। যেহেতু গোটা শহরটার মধ্যে একটা ইউরোপীয় চরিত্র আছে, তাই ইউরোপ থেকে পর্যটক আসেনও অগুন্তি। তাঁরা, মানে ইউরোপীয় পর্যটকরা হয়তো এই শহরের অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে লিসবন কিংবা আমস্টারডামের চেনা ছন্দকে খুঁজে পান…

সম্প্রতি অর্থনৈতিক টালমাটাল অবস্থার জন্য শ্রীলঙ্কার মুদ্রার দাম আরও বেশ কিছুটা পড়েছে, তাই সবকিছুই আরও সস্তাও। তবে শ্রীলঙ্কার অন্য শহরগুলোর তুলনায় গল এ সবকিছুই কিছুটা মহার্ঘ, সেটা পর্যটকদের এত পছন্দের শহর বলেই হয়তো। এবং এই শহরেও টাউন বাস বা অটো আমাদের মতো ভারতীয়দের দক্ষিণ ভারতকে মনে করাবেই।

ভারত মহাসাগরের নীল সমুদ্র আর গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একটা অদ্ভুত নেশা ধরায়। বলে দেয় শ্রীলঙ্কাকে অন্যভাবে আবিষ্কারের কথা। যে দেশটাকে আমরা মূলত চিনেছি জাতিদাঙ্গা আর কিছুটা ক্রিকেট দিয়ে, সেই দেশটা যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এইভাবে সকলকে বলে বলে ক্লিন বোল্ড করতে পারে, তা না ঘুরলে টের পাওয়া যাবে না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়েছে, শ্রীলঙ্কার সমুদ্রতীর আর সেই তীরের জীবন আসলেই এককালের তারকা ব্যাটসম্যান অরবিন্দ ডি সিলভার ব্যাটিং এর চাইতেও বিধ্বংসী, চোখ ফেরানো মুশকিল। আপনার সংযমের পৃথিবীকে একেবারে ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে যাবে। শ্রীলঙ্কার এই প্রকৃতি আর সমুদ্র তো শুধু টলিউডের পরিচালকদের টানে নি, হলিউডকেও গত শতাব্দী থেকে সেদেশে নিয়ে গিয়েছে। এমনকি স্টিভেন স্পিলবার্গও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপ রাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছেন ইন্ডিয়ানা জোনস সিরিজের শুটিংয়ের জন্য।

গল যেহেতু শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ প্রান্তের শহর, তাই হয়তো পর্তুগিজরা এই শহরটায় নোঙর বাঁধতে এসে এমনভাবে ভালবেসে ফেলেছিল। এই শহর যে ভালবাসা আর যত্ন দিয়ে তৈরি, তা অবশ্য শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত ফোর্ট মিউজিয়ামে ঘুরলেই টের পাওয়া যায়। এখনও সব স্মৃতি, সব স্মারক ভীষণ টাটকা। সমুদ্র শাসন করে, হৃদয়ে অনেক স্বপ্ন ধরে রেখে যে ইউরোপীয়রা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই প্রান্তিক বিন্দুতে এসে পৌঁছেছিলেন, তাঁরা তো ভবিষ্যতের নাবিকদের পথ দেখানোর জন্যই ওইরকম একটা আলোকস্তম্ভ, লাইট হাউস বানিয়েছিলেন। যা আজও গলের গর্ব। এই শহরে এলে যে লাইটহাউস টা একবার দেখতে যেতে হবেই।

আর সন্ধ্যা যত নামবে, গলের রাস্তায় চক্কর খেতে খেতে কিংবা উনাউতনা বিচে বালিতে পা ডুবিয়ে বসে আপনি য়োহানির ভাইরাল হওয়া গানের লাইনগুলো শিরায় শিরায় অনুভব করবেন, মাগে নেতা এহা মেহা ইয়ায়ি সিহিওয়েই, won’t let me keep my eyes off, I’m indulged.