ad
ad

Breaking News

Exam Phobia

“exam phobia” কাটানোর চাবিকাঠি কী? রইল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

পরীক্ষা নিয়ে আপনার সন্তান আতঙ্কে ভুগছে না তো? অহেতুক ভয় ও উদ্বেগ কিন্তু প্রভাব ফেলে শরীর ও মনে।

What is the key to overcoming

চিত্র: সংগৃহীত

Bangla Jago Desk: পরীক্ষা নিয়ে আপনার সন্তান আতঙ্কে ভুগছে না তো? অহেতুক ভয় ও উদ্বেগ কিন্তু প্রভাব ফেলে শরীর ও মনে। তাই সচেতন হন শুরু থেকেই। একটা সীমা পর্যন্ত টেনশন থাকা ভাল, এতে পড়ুয়াদের প্রোডাক্টিভিটি লেভেল বাড়ে। সে সিরিয়াস থাকে। কিন্তু সেই সীমা ছাড়িয়ে গেলে অতিরিক্ত টেনশন করলে হয় হিতে বিপরীত। কমতে থাকে প্রোডাক্টিভিটি লেভেল। তাই নিজের ওপর অহেতুক বোঝা চাপানো উচিত নয়। “exam phobia” থেকে কী কী সমস্যা হতে পারে ? পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরই বা কী করনীয়। জানালেন বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অংশুমান দাশ।

প্রশ্ন : স্ট্রেস বা অ্যাংজাইটির সমস্যা এখন সবার। পড়ুয়াদের মধ্যেও বাড়ছে এই সমস্যা। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। সামনেই উচ্চমাধ্যমিক সহ বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। অনেক পরীক্ষার্থীই “exam phobia” তে ভোগেন। মূলত কী ধরনের সমস্যা নিয়ে অভিভাবকরা আপনাদের কাছে আসেন।?

উত্তর : স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সবার জীবনেই থাকবে। পড়ুয়া বা পরীক্ষার্থীরাও এর বাইরে নয়।
কিন্তু তা ব্যালেন্স করতে না পারলে মনোসংযোগ ,আত্মবিশ্বাস এবং সর্বোপরি পারফরমেন্সে তার প্রভাব পড়বে। সেখান থেকে অনেক পরীক্ষার্থীরই পরীক্ষার ওপর ভীতি তৈরি হয়। পরীক্ষায় বসতে তারা ভয় পায়। মূলত এই ধরনের সমস্যা নিয়ে অভিভাবকেরা আসেন।

প্রশ্ন : একজন পরীক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটলে বা মানসিক চাপ বাড়লে কি কি লক্ষণ তার মধ্যে দেখা যায়?

উত্তর : যে কোন পরীক্ষার আগে সামান্য টেনশন, উদ্বেগ সবার মধ্যেই থাকে। আর জীবনের বড় পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা একটু বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। হালকা টেনশন পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ভালো করতে সাহায্য করে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে টেনশন থেকে আত্মবিশ্বাসের অভাব হলে মনের মধ্যে নেতিবাচক চিন্তা চলে আসে। অতিরিক্ত পরীক্ষা ভীতি থেকে হতাশা, উদ্বেগ তৈরি হয়। এছাড়াও হাত কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা, ঘন ঘন বমি , ঘুম ঠিক মতো না হওয়া , মাথা ব্যথার মতন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বিরক্তি, রাগের মত নেতিবাচক অনুভূতিও তৈরি হয় ।

প্রশ্ন : সেক্ষেত্রে কিভাবে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব?

উত্তর : প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে আত্মবিশ্বাস কোনও ওষুধ দিয়ে বাড়ানো সম্ভব নয়। যতটা সম্ভব রিল্যাক্সড থাকতে হবে ।নিজেকেই নিজে বোঝাতে হবে সব ঠিক আছে। সবাইকে আমার পরামর্শ “অতীতের অ্যাচিভমেন্ট সম্বন্ধে ভাবো, আনন্দের মুহূর্তের কথা মনে কর। নিজেকে বোঝাও তুমি পারবে”।

প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রত্যাশা এই চাপ কী অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়?

উত্তর : হ্যাঁ। অভিভাবকদের কখনোই নিজেদের প্রত্যাশা বাচ্চার উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। বরং সে যে কাজটা করছে সেটা যদি সঠিক হয় তাহলে তাকে অনুপ্রাণিত করা উচিত। তার ছোট ছোট অ্যাচিভমেন্টে তাকে উৎসাহ দিন। এইভাবে গড়ে উঠবে আত্মবিশ্বাস। অন্যের সন্তানের সঙ্গে বা তার বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা করে তার মনে বাড়তি চাপ তৈরি করবেন না। এতে সে অন্যদের তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে শুরু করবে এবং তাদের প্রতি তার আচরণও পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনকি নিজেকে অবহেলিত মনে করতে পারে, বাবা-মায়ের প্রতিও বিরূপ মনোভাব তৈরি হতে পারে।

প্রশ্ন : এই সময় কিভাবে সন্তানের পাশে থাকবেন অভিভাবকরা?

উত্তর : সন্তানকে কোয়ালিটি টাইম দিন। কোয়ালিটি সময় হল সেই সময় যখন বাবা-মায়ের সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে সন্তানের ওপর। সারাদিনে নানা কাজে প্রত্যেক বাবা মা ব্যস্ত থাকেন। তা সত্ত্বেও প্রথম থেকেই সারাদিনে কিছুটা সময় সন্তানের জন্য রাখতেই হবে। তাকে সঙ্গ দিতে হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষার সময় নয়।অতিরিক্ত নম্বরের প্রত্যাশা সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। বুঝতে হবে সবার মেধা সমান নয়। তাই টার্গেট ঝুলিয়ে না দিয়ে তাকে ইতিবাচক ভাবতে সাহায্য করুন। এখানে স্কুলের শিক্ষকদের ও একটা বড় ভূমিকা থাকে।

প্রশ্ন : পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে কি কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন?

উত্তর : পরীক্ষা মানে আনন্দ করা যাবে না, খেলা যাবে না এমনটা নয়। পড়ার ফাঁকে বিরতি জরুরী। গান গাইতে ,ছবি আঁকতে ভালবাসলে পড়াশোনার পাশাপাশি সেগুলো বজায় রাখা যেতে পারে । বরং এতে পড়ার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি মিলবে ।খোলা হাওয়ায় হাঁটা, শরীর চর্চা, সকাল বিকেল ১০ মিনিট করে ডিপ ব্রিদিং স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। মন ভালো রাখতে সন্তানকে নিজের মতো কিছুটা সময় কাটাতে দিন। তবে খেয়াল রাখুন স্ক্রিন টাইম যেন দীর্ঘ না হয়। সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এরপরও যদি মনে হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে কাউন্সিলিং করান।

প্রশ্ন : এই ব্যস্ত সময়ে প্যারেন্টিং টিপস বা প্যারেন্টিং কাউন্সেলিং কতটা প্রয়োজন?

উত্তর : অভিভাবকদের কাউন্সেলিং অতি জরুরি। ছোট থেকেই শিশুর স্বাভাবিক স্বভাব এবং প্রবৃত্তি গুলিকে সামনে আসতে দিন। বোঝার চেষ্টা করুন তার শক্তি এবং দুর্বলতা। যে বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে সে বিষয়ে তাকে অনুপ্রাণিত করুন। আগেই বলেছি নিজেদের প্রত্যাশা কখনওই বাচ্চার উপর চাপিয়ে দেবেন না।

প্রশ্ন : সবশেষে পরীক্ষার্থীদের জন্য কি পরামর্শ দিতে চাইবেন?

উত্তর : ১) যতটা সম্ভব রিল্যাক্সড বা শান্ত থাকা জরুরি।

২)পরীক্ষার আগে বা পরীক্ষার সময় পরীক্ষার ফল কেমন হবে, কত শতাংশ নম্বর পেতে হবে এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা উচিত নয়।

৩)কোনও পরীক্ষা আশানুরূপ না হলে তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করে মন খারাপ করা উচিত নয়। এতে পরের পরীক্ষাগুলোর উপর প্রভাব পড়তে পারে।

৪)পরীক্ষার আগের রাতে ভাল ঘুম জরুরি। ক্লান্ত মস্তিষ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে সমস্যা বাড়তে পারে।

৫) সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনও নেতিবাচক চিন্তা না করে, ইতিবাচক চিন্তার মধ্যে দিয়ে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো দরকার। অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিকভাবে উত্তর লিখতে পারলে সাফল্য আসবেই।