চিত্র: সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: অর্পিতা বসু: এখনও পর্যন্ত উদ্বেগ বা আতঙ্কের মতো এমন কোনও চরিত্র এই ভাইরাসে দেখা যায়নি। তাই আতঙ্ক নয়, সচেতন থাকুন। চীনে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে তোলপাড় সোশ্যাল মিডিয়া। এইচএমপি ভাইরাস অর্থাৎ হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস কী আবারও ফিরিয়ে আনছে কোভিডের সেই ভয়াবহ স্মৃতি? বিশেষজ্ঞরা এবং কেন্দ্রীয় স্যস্থমন্ত্রকের কর্তারা বলছেন উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। আতঙ্ক নয়’ এইচএমপিভি ‘নিয়ে বার্তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও। কী এই এইচএমপিভি? কাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ঝুঁকিপূর্ণ? কী করণীয় আমাদের? জানালেন অধ্যাপক ডক্টর শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। কথা বলেছেন আমাদের প্রতিনিধি অর্পিতা বসু।
প্রশ্ন- ‘সার্স কভ ২’ আমাদের কাছে অপরিচিত, অজানা ছিল। ‘এইচএমপিভি’ ভাইরাস ও কী ভারতে নতুন?
উত্তর- না। একেবারেই নতুন না। ২০০১ সালে ভারতে প্রথম শনাক্ত হয় এই ভাইরাস। ইউরোপে ১৯৫০ থেকে শিশুরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ২০০১ থেকে বহুবার আমরা এই ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছি। অসম, উত্তরপ্রদেশে এর আগেও বহু শিশুর দেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে এবং তারা সুস্থ হয়ে গেছে। তাই কখনও না কখনও এই ভাইরাসের সাথে আমাদের সবারই পরিচয় হয়েছে।
প্রশ্ন- সেক্ষেত্রে ঠিক কোন জায়গায় এই ভাইরাস আমাদের কাছে উদ্বেগের কারণ?
উত্তর- এখনও পর্যন্ত উদ্বেগ বা আতঙ্কের মত এমন কোনও চরিত্র এই ভাইরাসে দেখা যায়নি। এবং এই ভাইরাসের কোনো মিউটেশন হয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি। তবে করোনার আতঙ্ক এখনও আমাদের মধ্যে রয়েছে। তাই সাধারন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক। তবে বারবার একই কথা বলব আতঙ্ক নয়, আমাদের সচেতন ও সাবধান হতে হবে।
প্রশ্ন- তাহলে এই ভাইরাসের মিউটেশনের সম্ভাবনা কতটা সেটা তো জানা জরুরি?
উত্তর- অবশ্যই জরুরি। প্রতি বছর এই ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তবে এই পরিচিত ‘আরএনএ রেসপিরেটারি ভাইরাসের’ কোনও জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন হয়েছে কিনা তা জানা দরকার। পজিটিভ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছ। এবং WHO-র উচিত চীনে সংক্রমিত এই ভাইরাসের চরিত্র সম্পর্কিত তথ্য সে দেশের সরকারের থেকে নিয়ে সব দেশকে তা জানানো।
প্রশ্ন- এর উপসর্গ কী?
উত্তর- একেবারেই ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ।
১) সর্দি কাশি
২) জ্বর, গলা ব্যাথা, গায়ে ব্যথা
৩) বুকে ব্যথা
৪) এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ডায়েরিয়ার উপসর্গও দেখা দিচ্ছে।
প্রশ্ন- কাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস ঝুঁকিপূর্ণ?
উত্তর- ছোট বাচ্চাদের জন্য এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যাদের কিডনির সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়েবেটিসের সমস্যা, সিওপিডির সমস্যা আছে, যারা ক্যান্সারে আক্রান্ত অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম তাদের সাবধানে থাকতে হবে।
প্রশ্ন- চিকিৎসা কী?
উত্তর- এর নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। ফলে সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট ও কেয়ার প্রয়োজন। জ্বর ও সর্দি কাশির ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ভালো কাজ করছে। ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া হলে এবং সেকেন্ডারি ইনফেকশন থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে।
প্রশ্ন- শীতকালে এখন প্রায় প্রতিটি ঘরেই জ্বর, সর্দি কাশির সমস্যা, কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন?
উত্তর- সময় নষ্ট না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সচেতন হন এবং self medication থেকে বিরত থাকুন।
প্রশ্ন- তাহলে করোনার মতো অতিমারির আশঙ্কা নেই?
উত্তর- এই ধরনের ভাইরাসের প্রকোপ প্রতি বছরই হয়। এর থেকে অতিমারির আশঙ্কা নেই। তবে আগেও যেমন বলেছি ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন হচ্ছে কিনা তা জানা জরুরি।
প্রশ্ন- মাস্কের ব্যবহার কতটা জরুরি এবং কোভিডের সময় যে নিয়মগুলি অমরা মেনে চলতাম তা আবারও মেনে চলা দরকার।
উত্তর যেহেতু ভাইরাল ইনফেকশন তাই কোভিডের সময় যে নিয়মগুলি অমরা মেনে চলতাম তা মেনে চলা দরকার।
১) ভিড় এড়িয়ে চলুন।
২) মাস্কের ব্যবহার করুন।
৩) বাইরে থেকে ফিরে হাত সাবান দিয়ে ভাল করে পরিষ্কার করে নিন।
৮) বারবার চোখ, নাক, মুখে হাত না দেওয়া।
৫) সর্দি কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট হলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।