ad
ad

Breaking News

Health

মাথাব্যথা যদি সহ্যের মাত্রা ছাড়ায় দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান: পরামর্শ ডক্টর ক্যামেলিয়া পোরের

শরীরের অন্য কোনও সমস্যার ইঙ্গিতও বহন করে মাথা যন্ত্রণা। মাথাব্যথা মানেই কিন্তু মাইগ্রেন বা টিউমার নয়।

If the headache becomes unbearable, see a doctor immediately: Dr. Camelia Por advises

চিত্র: প্রতীকী

Bangla Jago Desk: অর্পিতা বসু: সামান্য মাথাব্যথা হলেই আমরা চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাই না। সাধারণত ব্যথার ওষুধ খেয়েই ধামাচাপা দেন বেশিরভাগ মানুষ। আবার গ্যাস, অম্বল জনিত সমস্যা বলেও ভুল করেন অনেকেই। কিন্তু জানেন কী তাতেই ভিতরে ভিতরে বাড়তে পারে বিপদ। মাথাব্যথার নেপথ্যে একটি নয়, একাধিক কারণ থাকতে পারে। আবার শরীরের অন্য কোনও সমস্যার ইঙ্গিতও বহন করে মাথা যন্ত্রণা। মাথাব্যথা মানেই কিন্তু মাইগ্রেন বা টিউমার নয়। কী কারনে হয় মাথা ব্যথা? এর প্রকারভেদ কী? কী করনীয়? জানালেন বিশিষ্ট নিউরোলজিস্ট ডক্টর ক্যামেলিয়া পোরে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি অর্পিতা বসু।

প্রশ্ন : মাথা ব্যথা কী কোন রোগ নাকি রোগের লক্ষণ?

উত্তর : বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। যেমন মাইগ্রেন, টেনশন, ঠিক ভাবে ঘুম না হওয়া, স্ট্রেস বা সাইনাস। তেমনি আবার কোন রোগের লক্ষণও হতে পারে মাথাব্যথা।

প্রশ্ন : এই যে মাথা যন্ত্রণার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, কেন ব্যথা হচ্ছে তা বুঝব কী করে?

উত্তর : যেমন বললাম বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। প্রতিটি মাথাব্যথার আলাদা কারণ এবং ধরন রয়েছে। সাধারণত মাথাব্যথাকে প্রাইমারি হেডেক, সেকেন্ডারি হেডেক , ক্লাস্টার হেডেক এভাবে ভাগ করা হয়। এছাড়াও অন্য কারণও রয়েছে। তাই মাথা ব্যথার ধরনটা বোঝা জরুরি।

প্রশ্ন : এই যে প্রাইমারি হেডেক, সেকেন্ডারি হেডেক বা ক্লাসটার হেডেক আসলে কী?

উত্তর : প্রাইমারি হেডেক হল এমন একটি মাথাব্যথা যা অন্য কোন রোগের কারণে নয়। এটি নিজেই একটি সমস্যা। প্রাইমারি হেডেকের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। তার মধ্যে সবথেকে কমন মাইগ্রেন , টেনশনের কারণে মাথাব্যথা, ক্লাস্টার মাথাব্যথা। সেকেন্ডারি হেডেকের প্রধান কারণ কোন অসুস্থতা, ইনফেকশন, আঘাত বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।

প্রশ্ন : মাইগ্রেনের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। কিভাবে বোঝা সম্ভব এটা মাথাব্যথা নাকি মাইগ্রেনের যন্ত্রনা?

উত্তর : মাইগ্রেনের ব্যথার কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ আছে। মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত মাথার এক পাশে হয়। ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে। আলো এবং শব্দে কষ্ট বাড়ে।এই ধরনের ব্যথা কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

প্রশ্ন : মাইগ্রেনের চিকিৎসা কী?

উত্তর : কিছু ওষুধ আছে যা মাইগ্রেন প্রিভেন্ট করতে সাহায্য করে। এছাড়া যে পরিস্থিতি গুলো মাইগ্রেন ট্রিগার করে তা থেকে নিজেকে দূরে রাখা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার কোনও বিকল্প নেই। তাই নিয়মিত খাওয়া দাওয়া, প্রাণায়াম,যোগার পাশাপাশি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা উচিত।

প্রশ্ন: আগে এমন ধারণা ছিল বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেন হয় না কিন্তু এখন চাইল্ডহুড মাইগ্রেন খুব কমন । এটা বাড়ার কারণ কী? এবং মহিলাদের মধ্যে মাইগ্রেনের প্রবণতা বেশি কেন?

উত্তর : বাচ্চাদের একটা সমস্যা হল তারা তাদের সমস্যাকে ভালোভাবে ব্যক্ত করতে পারে না। সাধারণত একটি শিশু মাথা যন্ত্রণা বললে ধরে নেওয়া হয় চোখের কোনও সমস্যা থেকে তার মাথা ব্যথা হচ্ছে কিন্তু শিশুদের মধ্যেও মাইগ্রেন খুবই কমন। তাই বাবা-মার উপসর্গগুলো জানা খুব জরুরি। শিশুদের মাইগ্রেন নতুন কিছু নয়, আগেও ছিল। জেনেটিক কারণ, মানসিক চাপ, ডিহাইড্রেশন, ঘুমের অভাব এমন নানান কারণে বাচ্চাদের মধ্যেও মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ছে। আবার অনেক শিশু পেটের মাইগ্রেনেও আক্রান্ত হয়। আর মহিলাদের মধ্যে মাইগ্রেন বেশি হওয়ার প্রধান কারণ হরমোনের পরিবর্তন। ইস্ট্রোজেনের উঠানামা মাইগ্রেনকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও মানসিক চাপ এবং পরিবেশগত কারণও রয়েছে।

প্রশ্ন : আমাদের জীবনে এখন স্ট্রেস এতটা বেড়ে গেছে টেনশনের কারণে মাথা যন্ত্রণা খুব কমন। টেনশনের কারণে মাথাব্যথা হচ্ছে সেটা বুঝব কিভাবে এবং কিভাবে তা কমানো সম্ভব?

উত্তর: টেনশন বা উদ্বেগের কারণে মাথাব্যথার লক্ষণ গুলির মধ্যে রয়েছে মাথার দুপাশে ব্যথা, কপালে বা মাথার পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া। মাথাব্যথার সাথে কাঁধ ও ঘাড়ের পেশীতে টান অনুভূত হওয়া। শব্দ বা আলোতে বেশি কষ্ট হওয়া। স্ট্রেস লেভেল কমার সাথে সাথে এই ধরনের ব্যথাও আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তাই নিজেকে স্ট্রেস মুক্ত রাখা খুব জরুরি।

প্রশ্ন : ‘ক্লাস্টার হেডেক’ শব্দটি আমরা শুনেছি। এক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের যন্ত্রণা হয়?

উত্তর : ক্লাস্টার হেডেকের ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়। সাধারণত চোখের চারপাশে এবং কপালে তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়। এর চিকিৎসা পদ্ধতিও সম্পূর্ণ আলাদা। এই ধরনের যন্ত্রণা দু থেকে তিন মাস পর্যন্ত হতে পারে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় এবং তারপর কমে যায়।

প্রশ্ন : অনেক সময় ব্রেন টিউমার বা ইনফেকশনের থেকেও যন্ত্রণা হতে পারে । কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?

উত্তর: এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ তৎক্ষণাৎ নেওয়া উচিত। ব্রেন টিউমারের ক্ষেত্রে শুরুর দিকে যন্ত্রণা অনুভূত হয় না। টিউমারের সাইজ বড় হওয়ার সাথে সাথে যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। তাই দ্রুত নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন : মাথা যন্ত্রণা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধরে নেওয়া হয় গ্যাস বা অম্বল জনিত সমস্যার কারণে হচ্ছে এবং ওভার দা কাউন্টার মেডিকেশন অনেকেই করে থাকেন।এটা কতটা ঠিক?

উত্তর : অনেকেই মাথা যন্ত্রণা কমাতে প্যারাসিটামল বা বেদনানাশক ওষুধ খান। যখন তখন এই ধরনের ওষুধ খাওয়া শরীরের পক্ষে ঠিক নয়। সেল্ফ মেডিকেশন কখনোই উচিত নয়। এতে নানা ধরনের জটিলতা বাড়তে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও সম্ভাবনা থাকে। আবার শুধুমাত্র গ্যাস,অম্বলের ওষুধ খেয়ে মাথা যন্ত্রণা কমানো সম্ভব নয়। তাই বেশ কিছুদিন ধরে যদি মাথাব্যথা হতে থাকে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রশ্ন : সবশেষে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কি বলতে চাইবেন?

উত্তর : দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথা থাকলে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। উপসর্গ এবং কষ্ট বুঝে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।