ad
ad

Breaking News

Fitness Risk

Fitness Risk: শরীর ফিট থাকা মানেই কি সুস্থ? হেভি ওয়েট জিম, প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট কতটা নিরাপদ?

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কেন বাড়ছে হৃদরোগের প্রবণতা? হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সংখ্যা? জানালেন বিশিষ্ট চিকিৎসক, কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ বিনায়ক দেব।

Fitness Risk: The Hidden Heart Risks of Heavy Workouts

চিত্র: প্রতীকী

অর্পিতা বসু: যারা নিজেকে ফিট রাখতে নিয়মিত জিম যাচ্ছেন, হেলদি ডায়েট নিচ্ছেন,তাঁদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনা বাড়ছে (Fitness Risk)। যা সত্যিই উদ্বেগের কারণ। তাহলে ফিটনেস থেরাপি এবং ওয়ার্কআউট কি যথেষ্ট নয়? অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি, রক্তচাপ, অনেক ক্ষেত্রে হেভি ওয়ার্ক আউট এবং কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি হৃদরোগের সমস্যাকে ট্রিগার করে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কেন বাড়ছে হৃদরোগের প্রবণতা? হার্ট অ্যাটাক এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সংখ্যা? জানালেন বিশিষ্ট চিকিৎসক, কার্ডিওলজিস্ট ডাঃ বিনায়ক দেব।

প্রশ্ন : তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যেভাবে হার্ট অ্যাটাক, সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রবণতা বাড়ছে , নিয়মিত শরীরচর্চা করা সত্ত্বেও কিছু সেলিব্রিটির মৃত্যু, সম্প্রতি শেফালি জারিওয়ালার মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হিসেবে যা সামনে আসছে, এই ক্রমবর্ধমান হৃদরোগ কতটা চিন্তার?

উত্তর : হৃদযন্ত্রের সমস্যা ভারতীয়দের মধ্যে খুবই প্রকট। এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে যা বেশ খানিকটা বেড়েছে। গত কয়েক বছরে কম বয়সিদের মধ্যে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। লাগামহীন জীবনযাপন, পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করা,অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াজাত এবং চর্বিযুক্ত খাওয়াদাওয়া, একজায়গায় বসে কাজ, ধূমপান,অত্যাধিক অ্যালকোহল সেবন, অতিরিক্ত স্ট্রেস ও স্থূলতা হার্টের সমস্যার মূল কারণ। সেলিব্রিটিদের মধ্যেও বিশেষত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক জনিত মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। যারা স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিশেষ সচেতন, নিয়মিত শরীর চর্চা করেন, ছাড় পাচ্ছেন না তাঁরাও। তবে বলে রাখা দরকার, হৃদরোগের সমস্যা থাকলে হেভি ওয়েট ট্রেনিং, নানা ধরনের সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রায়শই কোনও সতর্কতা ছাড়াই ঘটে। তবে হার্ট অ্যাটাকের কিছু আগাম লক্ষণ থাকে। হৃদরোগে আক্রান্তের হারে এই আকস্মিক বৃদ্ধি সত্যিই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে (Fitness Risk)।

প্রশ্ন : হার্ট অ্যাটাক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য কি?

উত্তর : হার্ট অ্যাটাক হয় যখন হার্টের পেশীতে রক্ত চলাচল কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হল এমন একটি অবস্থা, যখন হৃৎপিণ্ড হঠাৎ এবং অপ্রত্যাশিতভাবে স্পন্দন বন্ধ করে দেয়। ফলে রক্তপ্রবাহ এবং মস্তিষ্কে ও শরীরের অন্যান্য অংশে অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না পেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

প্রশ্ন : কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আগাম কোনো লক্ষণ থাকে কি?

উত্তর : কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সাধারণত হঠাৎ করেই হয় এবং কোনো সতর্কতা ছাড়াই ঘটতে পারে।কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ক্লান্তি, অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। তবে, যদিও এই লক্ষণগুলো অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও হতে পারে।

প্রশ্ন : কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তৎক্ষণাৎ কি করনীয়?

উত্তর : হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারোর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে CPR (কার্ডিও পালমোনারি রিসাসিটেশন) করা হয়।এই পদ্ধতিতে, বুকের উপর চাপ এবং কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে রক্ত ​​এবং অক্সিজেন সঞ্চালনের চেষ্টা করা হয়,যতক্ষণ না স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরে আসে। এছাড়া AED একটি পোর্টেবল ডিভাইসের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের অনিয়মিত বৈদ্যুতিক স্পন্দন সনাক্ত করে, নির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক শক দিয়ে সেই ছন্দ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। তবে কাঁর্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসা না পেলে, তাঁর মৃত্যু হতে পারে।

প্রশ্ন : সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে আমরা চিন্তিত থাকি, “সিভিয়ার হাইপোটেনশন” কতটা প্রাণঘাতী হতে পারে?

উত্তর: নিম্ন রক্তচাপ সরাসরি হার্ট অ্যাটাকের কারণ নয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে তা হার্টের সমস্যার একটি লক্ষণ হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। লো প্রেশারের কারণে হৃদপিণ্ড এবং মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত,অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না। রক্তচাপ খুব বেশি কমে গেলে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। তাই প্রেশার আচমকা কমে গেলে, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত (Fitness Risk)।

প্রশ্ন : এখন তো অনেকেই নিয়মিত জিম যাচ্ছেন, শরীর চর্চা করছেন, বিশেষত ইয়াং জেনারেশন, কিন্তু তারপরও হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো ঘটনা বাড়ছে কেন?

উত্তর : শরীর ভালো রাখতে, সুঠাম দেহের জন্য এখন তরুণ প্রজন্ম জিমমুখী। দ্রুত ওজন ঝরিয়ে ফেলতে চলছে দেদার ভারী ওয়ার্ক আউট। জিম করার আগে শরীরকে প্রস্তুত করার জন্য ওয়ার্ম আপ জরুরি। মেডিক্যাল চেকআপ ছাড়া হঠাৎ করে হেভি জিম ট্রেনিং শুরু করলে, হৃদযন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কারণ অনেক সময় আমরা জানি না আমাদের শরীর এই হেভি ট্রেনিংয়ের জন্য প্রস্তুত কিনা! বা হার্টের কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা। তাই ধাপে ধাপে ওয়ার্ক আউটের মাত্রা বাড়ানো উচিত।অ্যারোবিক ব্যায়ামের পরিবর্তে শুধুমাত্র ওয়েট লিফটিং করলে তা কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যদিও তা নির্ভর করে কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্য এবং কোনো শারীরিক সমস্যা রয়েছে কিনা তার উপর। আবার কিছু ক্ষেত্রে, জিমের পরিবেশ অর্থাৎ গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে ব্যায়াম করলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। পরামর্শ ছাড়া প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নেওয়াও রিস্ক ফ্যাক্টর অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে।

প্রশ্ন : তাহলে শরীর ফিট থাকার মানে কি সত্যিই সুস্থ থাকা নাও হতে পারে?

উত্তর : ফিট থাকা মানেই সুস্থ থাকা নয়। শারীরিক সুস্থতা এবং ফিটনেস দুটি ভিন্ন ধারণা। বর্তমান সময়ে অনেকেই জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটান , কঠোর ডায়েট করেন ফিট থাকার জন্য। কিন্তু এই প্রশ্নটা থেকেই যায় শারীরিকভাবে সে কতটা সুস্থ রয়েছে। একজন মানুষ সুগার, প্রেসার বা কোলেস্টেরল এমন বেশ কিছু রোগ নিয়েও ফিট থাকতে পারেন। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবে সব সময় তাঁদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কিন্তু থাকছেই ‌‌। আবার কারোর কোনো রোগ না থাকলেও সে আনফিট হতে পারে। যেমন যদি তাঁর স্থূলতা বা ওবিসিটির সমস্যা থাকে।

প্রশ্ন: অতিরিক্ত শরীরচর্চা কী কখনো প্রাণঘাতী হতে পারে?

উত্তর : ওভার-এক্সারসাইজ হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে।হেভি জিম করার আগে শরীরকে ভালোভাবে প্রস্তুত করা দরকার,ওয়ার্ম আপ করা খুব জরুরি। যারা জিম করেন তাঁদের অন্তত প্রতি ৬ মাসে হার্ট চেকআপ করানো প্রয়োজন। হার্টের কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা তা না জেনেই , চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ভারী জিম করেন অনেকে। ফলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

প্রশ্ন : অ্যান্টি-এজিং ওষুধ, মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এগুলো হার্টের ওপর কী প্রভাব ফেলে?

উত্তর : পেশিবহুল শরীর অথবা ত্বক ও চুলের জেল্লা ধরে রাখতে অনেকেই বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট ও আন্টি এজিং ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সেই প্রবণতাও বাড়ছে। অ্যান্টি-এজিং ওষুধ, মাল্টি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এগুলো হার্টের ওপর সরাসরি প্রভাব না ফেললেও, মাথায় রাখতে হবে সব সাপ্লিমেন্ট সকলের শরীরের জন্য সঠিক না-ও হতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে যা কখনো কখনো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আন্টি এজিং ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা বা কোনও আইভি থেরাপিই ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রশ্ন : হরমোনাল থেরাপি অনেকেই করিয়ে থাকেন কতটা সেফ?

উত্তর : কিছু ক্ষেত্রে হরমোনাল থেরাপি হার্টের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।বিশেষ করে যদি তা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা হয়। তাই পরামর্শ ছাড়া কখনোই সেফ নয় (Fitness Risk)।

প্রশ্ন : নুন, চিনি বা ময়দা হৃদরোগের পিছনে কোনটা বেশি ক্ষতিকর?

উত্তর : নুন, চিনি, ময়দা তিনটি উপাদানই হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষ করে যদি তা পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা আটা থেকে তৈরি হয়। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। অনেক খাবারে হিডেন সল্ট রয়েছে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে হলে, এই তিনটি উপাদানই সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

প্রশ্ন: খাদ্যাভ্যাসের কথা বারবার বলা হয়, ভাজাভুজি তো ভারতীয়রা আগেও খেত, তাহলে এখন জাঙ্ক ফুডের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে কেন?

উত্তর : সমস্যা রয়েছে তেলে।বারবার ভাজার ফলে ব্যবহৃত তেল বা অতিরিক্ত গরম করা তেল থেকে ক্ষতিকারক উপাদান তৈরি হয়। ভাজা তেলে অতিরিক্ত পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট থাকে, এই ট্রান্স ফ্যাট “খারাপ” এলডিএল কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয় এবং “ভালো” এইচডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ।

প্রশ্ন: ঘুমের সমস্যা এবং হৃদরোগের মধ্যে কী গভীর সম্পর্ক রয়েছে?

উত্তর : রোজ ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম জরুরি। ঘুমের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ হরমোন নিঃসৃত হয় যা শরীরের জন্য উপকারী। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম আমাদের রোজকার ওয়্যার অ্যান্ড টিয়ার মেরামত করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও মন ভাল রাখতে সাহায্য করে।নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোলে সার্কেডিয়ান রিদম ঠিক থাকে। এখন অনেকেই অনিদ্রায় ভুগছেন। ঘুমের সমস্যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা এই ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তোলে।

প্রশ্ন: মানসিক চাপ ,স্ট্রেস হৃদরোগের জন্য ঝুঁকির কারণ , কিন্তু বর্তমান সময়ে সত্যিই তা কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব?

উত্তর: মানসিক চাপ হৃদয় কে প্রভাবিত করে। বর্তমান সময়ে আমরা কেউই চাপমুক্ত নই। কিন্তু দরকার স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করা। অনেক সময় দেখা যায় হার্টের রোগের শুরুটা হয়েছে মানসিক চাপ থেকে। এর থেকে মুক্তি পেতে দৈনন্দিন জীবনে কিছু রুটিন, কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুস্থ জীবন চাইলে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। তবে তা যেন হয় সঠিক পদ্ধতিতে, সচেতনতার সঙ্গে (Fitness Risk)।