Bangla Jago Desk, মৌ বসু : সুর, তাল, ছন্দের সঙ্গে বিভিন্ন শরীরী ভাবভঙ্গি মিলিয়ে যে অপূর্ব চিত্রকল্প শিল্প তৈরি হয় তাকেই বলে নাচ। ভরতনাট্যম, কথাকলি, মোহিনীঅট্টম, ওড়িশি, মণিপুরী, কত্থকের মতো ভারতের নানান প্রাদেশিক শাস্ত্রীয় নৃত্য আপন আঙ্গিকে ও স্বকীয়তায় বিরাজমান। রবীন্দ্রনাথ নাচের যে আঙ্গিকের মাধ্যমে নতুন চেতনার উন্মেষ ঘটান তার নাম রবীন্দ্রনৃত্য। পরবর্তী কালে পণ্ডিত উদয়শংকরও ভারতীয় নৃত্যশৈলীকে বিশ্বের দরবারে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত করেন। নাচ হল এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম যা মানসিক ভাব প্রকাশেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সুশৃঙ্খল ভাবে একে অপরের সঙ্গে ছন্দে ছন্দে পা ফেললেও মানসিক অবসাদ কেটে গিয়ে মনেতে আসে খুশির আমেজ।
ডাক্তারি পরিভাষায় ডান্স মুভমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে দূর হয় নানান শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সমস্যা। দীর্ঘস্থায়ী পুরনো ব্যথা ও স্পন্ডেলসিস উপশম হয় ডান্স থেরাপির মাধ্যমে।
ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, আর্থ্রারাইটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হালকা নাচের মাধ্যমে অস্থিসন্ধির ব্যথা কম হয়, ফ্লুইডের চলাচল বাড়ে। জুম্বা ডান্স, বলরুম ডান্স, বেলি ডান্স এক্ষেত্রে ভালো। বিভিন্ন ফিটনেস প্রশিক্ষকরা আজকাল এরোবিক্স ও ডান্স থেরাপির মাধ্যমে শরীরচর্চাকে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। ডায়বেটিস রোগে রক্তের শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, নানান রকমের আরও অসুখ দানা বাঁধে। নাচের মাধ্যমে পেশি সঞ্চালনের মাধ্যমে রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। হৃদযন্ত্র সক্রিয় থাকে। হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এছাড়াও ডান্স থেরাপি স্বাভাবিক ভাবে ফ্যাট ও ক্যালরি ঝরিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নাচের মাধ্যমে স্নায়ু, পেশির রক্ত সঞ্চালন সুগম হয়। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ কম হয়। ভালো থাকার হরমোন ডোপামিন ও এন্ডোরফিনের নিঃসরণ বাড়ে। মনে সুখানুভূতি জাগে। ইটিং ডিজঅর্ডার বুলিমিয়া নিরাময়েও ডান্স থেরাপি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নাচ করলে মনের চঞ্চলতা দূর হয় মন শান্ত হয়। টানা কিছুটা সময় নাচলে সৃজনশীলতা বাড়ে। মনের গ্লানি দূর করতে তাই ইদানীং সংশোধনাগারেও নিয়মিত ডান্স থেরাপি করানো হয়।