গ্রাফিক্স: নিজস্ব
Bangla Jago Desk: কসবা কলেজে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণের ঘটনায় একের পর এক চমকপ্রদ সামনে আসছে। তদন্তের শুরু থেকেই একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। শুধু অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা নয়, বরং নির্যাতিতার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল অভিযোগ না জানাতে। সূত্রের খবর, নির্যাতিতা তরুণী ঘটনার পরে প্রবল মানসিক ট্রমার মধ্যে পড়েছিলেন। বাড়ি ফিরে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরই মোবাইল বন্ধ করে দেন। তবে পরদিন সকালে মোবাইল চালু করতেই শুরু হয় ফোন আসা। সেই ফোন কোনও সাধারণ মানুষের ছিল না— পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে যাঁদের পরিচিতি রয়েছে, এমন একাধিক ব্যক্তি ফোন করেন ওই তরুণীকে (Kasba College)।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ফোনটি আসে অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে। এরপর ফোন করেন শহরতলির এক নেত্রী। তাঁদের বক্তব্য একটাই— “মিটিয়ে নাও বিষয়টা। এরপর ফের ফোন আসে কলেজেরই এক প্রভাবশালী শিক্ষাকর্তার কাছ থেকে। তিনি প্রথমে তরুণীর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান, তারপর বলেন, “ইনস্টিটিউশনের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা হাল্কা করার চেষ্টা কর। মধ্যস্থতা করা যায় কি না দেখো।” সেদিন আরও একাধিক ফোন পেয়েছিলেন নির্যাতিতা। প্রত্যেকেই ‘পরামর্শ’ দিয়েছিলেন অভিযোগ না জানাতে। কারণ কলেজের নাম উঠে যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে— এই যুক্তিই উঠে এসেছে প্রতিবার। তবে এত চাপের মধ্যেও এক চুলও টলেননি নির্যাতিতা। প্রত্যেককে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনও আপসে তিনি যাবেন না। কারণ ২৫ জুন সন্ধ্যার পর তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, তার বিচার চাই তিনি (Kasba College)।
পুলিশকে নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ওই দিন তাঁকে কলেজের ইউনিয়ন রুমে ডেকে পাঠায় মনোজিৎ। সেখানেই প্রথম কুপ্রস্তাব। প্রত্যাখ্যান করায় চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে মাথা ঠুকে দেওয়া হয় দেওয়ালে। মাথায় সেই আঘাতের দাগ এখনও রয়েছে। তারপর ইউনিয়ন রুমের ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। তরুণী রাজি না হওয়ায়, তাঁকে গার্ড রুমে নিয়ে গিয়ে হকি স্টিক দিয়ে বেধড়ক মারধর করে মনোজিৎ। নির্যাতিতা জানান, মনোজিৎ তখন হুমকি দিয়ে বলে, “সবক শেখাবো। আমার বিরুদ্ধে অনেকেই অভিযোগ করেছিল, কিছু হয়নি। আমার সব সেটিং আছে। পুলিশকে লোক দিয়ে ফোন করিয়ে দেব, সব মিটে যাবে। আগে আরেস্ট হয়েছি, কেউ ধরে রাখতে পেরেছে?” এখানেই শেষ নয়। ধর্ষণের পর মনোজিৎ স্পষ্ট জানায়, “যখন ডাকব, তখন আসতে হবে। যা বলব, তাই করতে হবে। না হলে ফল ভালো হবে না (Kasba College)।”
Bangla Jago fb page: https://www.facebook.com/share/193NB43TzC/
তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্রর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল কলেজে। কিন্তু তবু কোনও পদক্ষেপ হয়নি। পুলিশ ইতিমধ্যেই কলেজ গভর্নিং বডির মিটিংয়ের রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করেছে। মনোজিৎকে আড়াল করতে আগে কারা ফোন করতেন, গভর্নিং বডির কোন সদস্যরা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন— সব খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী দল। পুলিশ সুত্রে খবর, প্রভাব খাটানোর এই প্রবণতা একদিনে তৈরি হয়নি। আগে যে মনোজিতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তখনও কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর ফোনের চাপ পড়ত (Kasba College)।
অভিযোগ দায়েরের পরে মনোজিৎ তড়িঘড়ি এক পরিচিত আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেই আইনজীবীও তাঁকে আশ্বস্ত করেন, “চিন্তার কিছু নেই। সব ম্যানেজ হয়ে যাবে। তবে পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। একের পর এক তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জাল গোটাতে শুরু করেছে।লালবাজার সূত্রে জানা গেছে, এই মামলার তদন্তে জোরদার অগ্রগতি হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, “তদন্ত চলছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কোনও বাড়তি তথ্য জানানো সম্ভব নয়।”