Bangla Jago Desk: গণতন্ত্রের ইতিহাসে একুশে জুলাইয়ের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। ১৯৯৩এ নো আইডেনটিটি কার্ড নো ভোটের যে ডাক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন তা মানুষের অধিকার রক্ষার একটি মাইলস্টোন ছিল বলা যায়। এরপরই নির্বাচন কমিশন সচিত্র পরিচয়পত্র চালু করে গণতন্ত্রকে আলাদা মাত্রা দেয়। কিরকম ছিল একুশের সেই আবেগভরা আন্দোলন ? শহিদদের জীবন বলি দেওয়ার সেই সেই সংগ্রামের অতীত দিনটিকে একবার ফিরে দেখা যাক। বাম আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গণ-আন্দোলন শুরু করেন।সেসময় তিনি যুব কংগ্রেসের নেত্রী ছিলেন। মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৯৩-এর ২১ জুলাই যুব কংগ্রেস মহাকরণ অভিযানে সামিল হয়। সেসময় ক্ষমতায় ছিল জ্যোতি বসুর সরকার। রিগিং,ছাপ্পা ভোট বা লাল সন্ত্রাসের অবসান করতে হবে এই দাবি তুলে গর্জে ওঠেন আন্দোলনকারীরা।
উল্লেখ্য,যেহেতু মহাকরণেই ছিল নির্বাচন কমিশনের অফিস,তাই কমিশনের কাছে দাবি পেশ করতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাস্তাই রাস্তা দেখাবে এই মন্ত্রকে সঙ্গী করে সে দিন সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিমুখী জমায়েত শুরু হয়। মহাকরণ ঘিরে পাঁচটি পথ দিয়ে এগোতে থাকেন আন্দোলনকারীরা।মুখে চোখে তাঁদের লক্ষ্য ছিল স্থির।মানুষের অধিকার বজায় রাখার জন্য নো আইডেনটিটি কার্ড নো ভোট স্লোগান তোলেন মমতা।সেসময়ের পুলিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গণ-আন্দোলনকারীরা পায়ে পায়ে মিছিলে সামিল হন।ছিলেন সৌগত রায়,শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে তরতাজা যুবকেরা। মহাকরণে পৌঁছনোর আগে ব্যারিকেড করে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। বেঁধে যায় ধুন্ধুমার।শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করা বিক্ষোভকারীদের হটাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ।
ব্রেবোর্ন রোডে ধাক্কাধাক্কি এবং কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জননেত্রীর নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে।উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা মধ্য কলকাতায়। বিক্ষোভকারীদের দেখে মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশ । গুলি চালাতে শুরু করে বাম সরকারের পুলিশ। পরিস্থিতি শান্ত হলে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। ‘শহিদ’ হন- বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেকও ইনু।শহিদদের রক্তাক্ত দেহ সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথ নেন,গণতন্ত্রের স্বার্থে সচিয়পত্রের দাবি থেকে তিনি সরে আসবেন না।পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্রের জয় হয়,প্রতিষ্ঠা পায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের দাবি ।
টিএনসেশনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন, ১৯৯৩-এ চালু করে ভোটার আইডেনটিটি কার্ড। আর বাম আমলের পুলিশের উদ্ধত বুলেটের সামনে যাঁরা ব্যালটের অধিকার বজায় রাখার আন্দোলন করেছেন তাঁদের ত্যাগ,বলিদানকে কুর্নিশ করে প্রতিবছর পালিত হয় শহিদ দিবস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল কংগ্রেস এখন শ্রদ্ধার সঙ্গে ২১জুলাইয়ের শহিদদের স্মরণ করে।শহিদদের আত্মত্যাগ আর উত্তাল আন্দোলনকে সামনে রেখে নতুন অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয় ধর্মতলার শহিদ মঞ্চ থেকে।অতীত সংগ্রামের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন গণতন্ত্রের পূজারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘২১ জুলাই বাংলার ইতিহাসে রক্তঝরা দিন। ১৯৯৩ সালে এই দিনেই সিপিআই(এম)-এর দমনমূলক শাসন ১৩ জনের প্রাণ কেড়েছিল ১৩ জন সহযোদ্ধাকে আমি হারিয়েছিলাম। এই দিনটি অত্যন্ত আবেগের। আজ ২১ জুলাই বাংলার মানুষের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।’চব্বিশের এই একুশ তাঁদের নতুন করে পথ চলার দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।