চিত্র: সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: অশান্তির মাঝে ফের একবার ঐক্যের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটে স্কাইওয়াকের উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে অধার্মিক খেলা খেলতে নেই।’ সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে বললেন, ‘কেউ কেউ প্ররোচনা দেবে, পা দেবেন না, মাথা ঠান্ডা রাখুন।’ মানবিকতা বাদ দিয়ে যে ধর্ম হয় না তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম মানে শ্রদ্ধা। ধর্ম মানে ভালবাস। ধর্ম মানে মানবিকতা। ধর্ম মানে শান্তি। ধর্ম মানে স্বস্তি। ধর্ম মানে সংস্কৃতি। ধর্ম মানে সম্প্রীতি। ধর্ম মানে একতা। মানুষকে ভালবাসার থেকে বড় ধর্ম আর কিছুই হতে পারে না।’
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ৫১ সতীপীঠের অন্যতম কালীঘাট মন্দিরকে কেন্দ্র করে স্কাইওয়াক তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক উদ্বোধনের সময় কালীঘাটের স্কাইওয়াক তৈরি করা হবে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সরকারি মঞ্চ থেকে কিছুটা উষ্মাপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অন্য কোনও অনুষ্ঠানে গেলে আমার টাইটেল বদলে দেওয়া হয়। একাই জন্মাই আবার চলে যেতে হয় একা। তাই কিসের দাঙ্গা? কিসের লড়াই?’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কেউ কেউ প্ররোচনা দেবে। কিন্তু সেই প্ররোচনায় পা দেবেন না। মাথা ঠান্ডা রাখুন।’ মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে হওয়ার আবেদনও করেছেন। ওয়াকফ নিয়ে অশান্তির আবহে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। এবং সেটা অনুমতি সাপেক্ষে। কেউ কারও প্ররোচনায় আইন হাতে তুলে নেবেন না। আইন রক্ষার জন্য আইন রক্ষক আছে।’
কালীঘাটের স্কাইওয়াকের পরিকল্পনার সময়ে যাতে হকারদের অসুবিধে না হয় তার কথাও ভেবেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন একই সঙ্গে হকার্স কর্নারের উদ্বোধন হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকের সময় আমরা তিনবার মিটিং করেছি। কেউ কারও জায়গা ছেড়ে উঠতে চায় না। কিন্তু তাদের বুঝিয়েছিলাম। এটা তৈরির জন্য হাজরা পার্কে এখানকার হকারদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যাতে অসুবিধে না হয় সেই বিষয়টা দেখা হয়েছে।’ শুধুমাত্র কালীঘাটের স্কাইওয়াকই নয়, দুধপুকুর থেকে শুরু করে সবটাই সরকারি মঞ্চ থেকে সোমবার উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবনির্মিত কালীঘাট স্কাইওয়াক সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজ্য সরকার থেকেই ৯৯ শতাংশ টাকা খরচ করে এটা করেছি। কালীঘাট মন্দিরের একটা চূড়া রিলায়েন্স গোষ্ঠীর তরফ থেকে করা হয়েছে। ওরা অনুরোধ করেছিলেন। আমরা সেটা করতে দিয়েছি। কিন্তু বাকি সবটাই রাজ্য সরকার করেছে।’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৪৩৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.০৫ মিটার প্রস্থ। তিনটি লিফট করা হয়েছে। রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। প্রবেশ এবং বেরোনোর পথ জাতীয় অসুবিধাই না হয় তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্কাইওয়াক পরিদর্শন করেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোড, হাজরা রোড ও কালীঘাট রোড থেকে এখানে প্রবেশ করা যাবে। সেই ভাবে স্কাইওয়াক তৈরি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনের আনন্দে মানুষ এই সতীপীঠে আসবেন। যানজট অনেকটাই কেটে যাবে। এলাকাটা আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে। তা ছাড়া হকার ভাই-বোনেদের জন্য রিফিউজি হকার্স কর্নার বিল্ডিং তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’
তারাপীঠ সহ বিভিন্ন জায়গার উন্নয়নের কাজ করেছে রাজ্য সরকার। তারাপীঠের নতুন ভোগ ঘর সহ সবটাই উন্নয়নের তালিকায় আনা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তারাপীঠের ঢোকার গলিটা বেশ সরু। একটু জায়গা থাকলে ওখানেও স্কাইওয়াক তৈরি করা পরিকল্পনা করা যেত।’ আরও কোন কোন ধর্মীয় স্থানের উন্নয়ন হয়েছে সরকারের তরফে তা উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভবানীপুরে শিখ ভাই-বোনেদের অনুরোধে একটা গেট তৈরি করা হচ্ছে। জৈনরা একটা চক্র তৈরি করার কথা বলেছেন, সেটাও হবে। আমরা মন্দির, মসজিদ, গির্জা সবটাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাখছি।’
স্কাইওয়াক পরিদর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দিরে যান মায়ের দর্শন করেন। পুজো দেন। পুজো দিয়ে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই ভাল থাকুন, শান্তিতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ের মন্ত্রে বিশ্বাস করি। মায়ের কাছ এই প্রার্থনা করে গেলাম, বাংলা যেন ভাল থাকে, আমার দেশ যেন ভাল থাকে। সারা পৃথিবী যেন ভাল থাকে। মানুষ শান্তিতে থাকুক।’
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছিলেন মালা রায়, দেবশিস কুমার, অনুপ বিশ্বাস সহ আরও অনেকে। সংগীত পরিবেশন করেন জিৎ গাঙ্গুলি ও অদিতি মুন্সি। উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
ধর্ম মানে শ্রদ্ধা। ধর্ম মানে ভালবাস। ধর্ম মানে মানবিকতা। ধর্ম মানে শান্তি। ধর্ম মানে স্বস্তি। ধর্ম মানে সংস্কৃতি। ধর্ম মানে সম্প্রীতি। ধর্ম মানে একতা। মানুষকে ভালবাসার থেকে বড় ধর্ম আর কিছুই হতে পারে না।