ad
ad

Breaking News

Mamata Banerjee

লন্ডনের ‘ঐতিহাসিক উদ্যান’ হাইডপার্ক বিলেতের মানুষের কাছে মেগা ল্যান্ডমার্ক

কেন বিলেতের মানুষ সবুজের ছায়ায় এসে স্বস্তির শ্বাস ফেলে? আসলে এই হাইডপার্কের ভিতরে রয়েছে বাহারি ফুলের গাছ, রয়েছে জলাশয়।

London's 'historic park' Hyde Park is a mega landmark for the people of Britain

নিজস্ব চিত্র

রাজাময় মুখোপাধ্যায়, লন্ডন( মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী): লন্ডনের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে নানা ইতিহাস। স্থাপত্য-ভাস্কর্যের জৌলুস এই শহরকে আলাদা গরিমা এনে দিয়েছে। মনিং ওয়ার্কে বেরিয়ে প্রথমেই আমদের নজর পড়ে হাইডপার্কে। লন্ডন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক উদ্যান গ্রেড ওয়ান তালিকায় রয়েছে।

ওয়েস্টমিনিস্টারে থাকা এই পার্ক লন্ডনবাসীর মতোই দেশ-বিদেশের মানুষকে মুগ্ধ করে। হাঁটতে বেরহলেই অনেকে সেখানে ঘুরে বেড়ান। সবুজের আচ্ছাদনে ঢাকা হাইডপার্ক পর্যটকদের কাছে যেন ফুসফুস। ৫০০বছরের বেশি সময় ধরে এই ঐতিহ্যবাহী পার্ক নানা ঘটনার সাক্ষী।  এই হাইডপার্কে এলে কেন থমকে দাঁড়াতে হয় জানেন?

কেন বিলেতের মানুষ সবুজের ছায়ায় এসে স্বস্তির শ্বাস ফেলে? আসলে এই হাইডপার্কের ভিতরে রয়েছে বাহারি ফুলের গাছ, রয়েছে জলাশয়। সেই জলাশয়ে ঘোরাফেরা করে রাজহাঁস, গাছগাছালিতে আছে নানা পাখি। পার্কের ভিতরে যেমনহেঁটে ঘোরা যায়, তেমনই আবার বোটিংয়ের সুবিধা রয়েছে। রাজকীয় আভিজাত্যে মোড়া এই হাইডপার্কে সাইকেলিং বা হর্স রাইডিং যেমন করা যায়, তেমনই আবার টেনিস খেলার মতো পরিসরওআছে।

সৌন্দর্যের এই স্বর্গভূমিতে রয়েছে জলের ফোয়ারা, লন্ডন প্লেন,রোজ গার্ডেন।এত সুন্দর-মনোরম পরিবেশ দেখলে চোখ আটকাবেই সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষের। যাঁরা প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য উপভোগ করতে চান,তাঁরা এখানে আসতেই পারেন।

কথিত আছে, ১৫৬৩ সালে হেনরি অষ্টম এই সম্ভ্রান্ত পার্ক তৈরি করেন। আর ১৬৩৭ সালে চার্লস ওয়ান সাধারণের জন্য খুলে দেন হাইডপার্ক। শোনা যায়, এই পার্কের ভেতরে  জলাশয়ে যে প্রাণীদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়,তা কুইন কেরোলিন ১৮ শতকে ব্যবস্থা করেছিলেন। আরও শুনলে আশ্চর্য হবেন, ১৮৫১ সালে গ্রেট একজিবিশন হয়েছিল।যারজন্য যোসেফ প্যাকসটনের ডিজাইন করা ক্রিস্টাল প্রাসাদ গড়ে তোলা হয়।

লন্ডনের রাস্তায় ঘুরতে বেরিয়ে যখন হাইডপার্কের মধ্যে ঢুকে দেখি,তখন মনে পড়ে যায় সল্টলেকের নিকোপার্ক বা নিউটাউনের ইকোপার্কের কথা। সবুজ ঘেরা সেই পার্কে দু-দণ্ড জিরিয়ে নিলে মনটা যেমন ভাল হয়ে যায়,তেমনই আবার বিলেতের এই বৃহত্তম রয়্যাল পার্ক চোখ জুড়িয়ে দেয়, খিদে মিটিয়ে দেয় চোখের।

আসলে যদি বলেন, হাইডপার্ক হল সবুজের মরূদ্যান। ৩৫০একরের বেশি জায়গাজুড়ে থাকা এই হাইডপার্কের নির্মল হ্রদ,বিস্তৃত লন আর সবুজ বনভূমি কংক্রিটের জঙ্গলের বদ্ধদশাকে কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করে।এখানকার অন্যতম নজরকাড়া বিষয় হল শার্পেন্টাইল গ্যালারি।যেখানে সাংস্কৃতিক চর্চা থেকে নানা আলাপচারিতাও হয়।

হাইডপার্কের রাস্তার ধারে রয়েছে বিশাল ওক এবং চেস্টনাট সহ মনোরম উইলো বৃক্ষ। এই বনানী শুধু মানুষের ছায়া জোগায় তাই নয়,বণ্যপ্রাণীদের আশ্রয়েরও কাজ করে। শিল্পনগরীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা পাখিরা এখানেই আড্ডা দেয়। সবুজের ঘেরাটোপে মন খুলে আলাপচারিতায় মেতে ওঠে।

এই আইকনিক ল্যান্ডমার্কে সবুজের পরশ যেমন মিলছে তেমনই আবার ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ধারাকেও বয়ে নিয়ে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে। ব্রিটিশদের শিল্পের কাজও ছত্রে ছত্রে রয়েছে এই হাইডপার্কে। আর এই হাইডপার্কের মাঝখানে রয়েছে লেডি ডায়নার স্মারক। রাজপরিবারের নানা ইচ্ছা,ভাবনাকে এখনও সযত্নে লালনপালন করা হয়।

হাইডপার্ক লন্ডন শহরের মুকুটে একটি সবুজ অলঙ্কার। লন্ডনের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিনোদনের খোলাপ্রান্তর লন্ডনের মানুষের মতোই দূর-দূরান্তের অতিথিদের মনেও অন্যরকম অনুভূতি বয়ে আনে।

[আরও পড়ুন: ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে টেমসের তীরে মর্নিং-ওয়াক মুখ্যমন্ত্রীর

তাই যাঁরা এই ল্যান্ডমার্কে যান,তাঁরা জমিয়ে খাওয়া দাওয়াও করেন। বিলেতের মানুষ তো বটেই ভ্রমণবিলাসী ভারতের মানুষও এখানে আসেন রাজ-ঐতিহ্যের ধারক-বাহক নানা স্মারক চোখে দেখার জন্য। লন্ডনের আর পাঁচটা স্পটের মতোই এই হাইডপার্কও ইতিহাসের গৌরব বহন করে চলেছে।তাই পর্যটক থেকে ইতিহাস সন্ধানী সকলেই যেমন বাকিংহাম প্যালেস, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বা টেমস নদীর পাড় ঘুরে দেখতে আসেন,তেমনই আবার এই হাইডপার্কে হেঁটে ঘুরে অজানা অনেক কিছুই জেনে যান তাঁরা।

সব মিলিয়ে ব্রিটেনের অভিজাত শহরে ঘুরতে এলে যেমন আলাদা অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ হয়, তেমনই আবার শিল্পকলা চাক্ষুষ করে ব্রিটিশ সভ্যতার সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার তুল্যমূল্য বিচারও করা যায়।