ad
ad

Breaking News

ইজরায়েল হামাসের গণ্ডগোল

ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের অন্তরালে লুকিয়ে এক অন্য ‘কূটনীতি’

Bengla Jago Desk: মধ্যপ্রাচ্যে মহারণ। ইজরায়েল বনাম হামাস। কিন্তু এই যুদ্ধ কেন? এমন একটা সময়ে হামাস ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এমন মরণ কামড় কেন দিল? পাল্টা মরণপণ যুদ্ধের ঘোষণা ইজরায়েলের? একি শুধু ধর্মযুদ্ধ! নাকি এর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে, অন্য পরিকল্পনা। তাই যদি হবে তাহলে এই মহারণের চিত্রনাট্যের আসল লেখক কে বা কারা? হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান, ইজরায়েলকে […]

Bengla Jago Desk: মধ্যপ্রাচ্যে মহারণ। ইজরায়েল বনাম হামাস। কিন্তু এই যুদ্ধ কেন? এমন একটা সময়ে হামাস ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এমন মরণ কামড় কেন দিল? পাল্টা মরণপণ যুদ্ধের ঘোষণা ইজরায়েলের? একি শুধু ধর্মযুদ্ধ! নাকি এর অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে, অন্য পরিকল্পনা। তাই যদি হবে তাহলে এই মহারণের চিত্রনাট্যের আসল লেখক কে বা কারা? হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান, ইজরায়েলকে মৃদু ভাষাতে হলেও বার্তা দিয়ে রুশ। মানবাধিকার নিয়ে অত্যন্ত জোরালো ভাবে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না সৌদি আরব, সংযুক্ত আমিরশাহীকে কেন? মহাযুদ্ধের পিছনে লুকিয়ে থাকা একের পর এক সুতোর রয়েছে এই প্রতিবেদনে।

মধ্যপ্রাচ্য। গোটা বিশ্বের এক অদ্ভুত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। আজ থেকে নয়, প্রাচীন কাল থেকেই। এই ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল যার, তারই কব্জায় বিশ্ববাণিজ্যের পথ। প্রথমে রোমান সাম্রাজ্য, তারপর বাইজেন্টাইন, তারপর অটোমান, তারপর ব্রিটিশদের দখলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন ব্রিটিশরা দুর্বল হয়ে পড়ল, তখনই নতুন ক্ষমতার ধারা নিয়ে উত্থান শুরু হল আমেরিকার। ডলার। সারা বিশ্বে বাণিজ্যের জন্য প্রথম মুদ্রা জায়গা করে নিল।

ফলত কয়েক দশকের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ে উঠল বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ।  না কোনও দেশে নিজেদের প্রভূত্ব রক্ষা করতে সাম্রাজ্য বিস্তার করার প্রয়োজন পড়েনি। ওদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন, আমেরিকাকে আরও সুবিধা করে দিল। তার জায়গায় ঋণ, সহায়তার টোপ দিয়ে প্রভু হয়ে উঠেছিল আমেরিকা। কিন্তু তাদের এই একছত্র বেশিদিন টেকেনি। কারণ এশিয়া জন্ম নিয়ে নিয়েছে আর এক দৈত্যাকার অর্থনীতির দেশ চিন। আমেরিকা যখন ডলারের ক্ষমতায় বলিয়ান, তখন পরিকাঠামোকে হাতিয়ার করে ধাপে ধাপে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে চিন। এরই মাঝে, আটকে বিশ্বের অন্যতম বড় বাজার ভারত।

গত কয়েক বছরে, বিশ্বের কূটনীতিতে অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। ফলত, বেশ কিছু দেশের বিদেশনীতিও বদলেছে। ব্যতিক্রম নয় ভারতও। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে, বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। মধ্যবর্তী অবস্থান ভারতকে কয়েক কদম এগিয়ে দিয়েছে অন্যদের তুলনায়। ফলত বাজারের নিরিখে দেখলে, গোটা বিশ্বের নজরে ভারত। এই প্রতিবেদনে মূল দ্বন্দ্বের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক না থাকলেও, সুক্ষ্ম একটা সুতো রয়েছে। সেই প্রসঙ্গ আসবে পরে, তার আগে দেখে নেওয়া যাক। ইজরায়েল হামাসের লড়াইয়ের পিছনে আসল কারণ।

বর্তমানে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যে রুট দিয়ে বাণিজ্য হয়। তাহল, গাল্ফ অফ অ্যাডেন হয়ে। অর্থাৎ ভারতের মুম্বই বা গুজরাটের মুদ্রা বন্দর থেকে আরব সাগর হয়ে গ্লাফ অফ অ্যাডেন, লোহিত সাগর, সুয়েজ খাল হয়ে পণ্য ইউরোপে পৌঁছয়। ২০০২ সালে একটি নতুন ট্রেড রুটের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সমীক্ষা করে দেখা যায় নতুন ট্রেড রুট হলে, এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য পৌঁছতে সময় যেমন বাঁচবে, তেমন প্রতি ১৫ টন কার্গোতে ২৫০০ মার্কিন ডলার খরচ বাঁচবে।

মাল্টিমোড (জলপথ, রেল ও সড়কপথ)  রুটটি হল, ভারত, ইরান, আজারবাইজান, রাশিয়া হয়ে ইউরোপে পৌঁছবে। এই রুটের পোশাকি নাম ছিল ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর (INSTC)। ২০০২ সালে ভারত, ইরান এবং রাশিয়া একটি মউ স্বাক্ষর করে এই রুটে ইউরোপে পণ্য পরিবহণ। চুক্তিমতো ইরানের চৌহাবার পোর্ট তৈরিতে বিনিয়োগ করে ভারত। কিন্তু কাঁটা হয় অন্য জায়গায়। এদিকে চিন পাকিস্তান হয়ে সিপ্যাক বা চিন পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডর তৈরি করে। যা বেল্ট ইন রোড প্রোজেক্টের অন্তর্গত। পাশাপাশি. গাল্ফ অফ অ্যাডেনের কাছে জিবুতিতে বন্দর তৈরি করেছে চিন। ফলত, সমস্যা একটা ছিল।

অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা সব দিক থেকে বিচার করলে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর (INSTC)-এর পরিকল্পনা বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছিল, এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের বিকল্প রুটের। আর সেই রুট এমন হবে যা চিনের বেল্ট অন রোড প্রোজেক্টকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।

২০২৩ সালে ভারতের আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনে সেই নতুন রুটের সূচনা শুরু হয়ে যায়। ভারতের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সৌদি আরব, ইজরায়েল হয়ে যদি একটি বাণিজ্য রুট খোলা যায়, তাহলে, নয়া দিশা খুলে যাবে। সেই সঙ্গে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের জিও পলিটিক্সের সমীকরণও বদলে যাবে। পোশাকি নাম দেওয়া হয় ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ করিডর (IMEC)। এই প্রকল্পে মউ স্বাক্ষর করে ভারত, আমেরিকা, সৌদি আরব এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি। বৈঠকে ঠিক হয়, ভারতের গুজরাট রাজ্যের দুটি বন্দর মুন্দ্রা ও কান্দলা এবং মুম্বইয়ের জওহরলাল নেহেরু পোর্ট থেকে পণ্য জাহাজে যাবে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আবুধাবির ফুজাইরা বন্দর, সংযুক্ত আমিশাহির জেবেল আলি বন্দর এবং সৌদি আরবের রাস আল খাইয়ির বন্দরে।

ফুজাইরা বন্দর থেকে ইজরায়েলের হাইফা বন্দর পর্যন্ত পণ্য রেলের মাধ্যমে। মাঝে সৌদি আরব এবং জর্ডনেও থাকবে রেল পরিষেবা। হাইফা বন্দর থেকে ফের জাহাজে পণ্য পৌঁছে যাবে গ্রাসি, ইটালি, ফ্রান্সে।

এই পথ আপাতত যতটা স্বচ্ছ দেখাচ্ছে, ঠিক ততটা মসৃন নয়। কারণ, সৌদি আরবের, সংযুক্ত আমিরশাহিসহ গাল্ফের একাধিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয় ইজরায়েলের। এখানেই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় আমেরিকা। অবেশেষে ইজরায়েলের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয় সৌদি আরব। এখানে আরও একটি বড় সুবিধা দেখে সৌদি। কারণ ইরানকে বাইপাস করে সৌদির উপর দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যরুট হচ্ছে, তাতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষেত্রে লাভবান হচ্ছে সৌদি আরবই।

সম্প্রতি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের একটি নক্সা দেখিয়ে বলেছিলেন, আগামী দিনে বদলে যেতে চলেছে নক্সা। অর্থাৎ এশিয়া ইউরোপের প্রধান সংযোগকারী সেতু হতে চলেছে ইজরায়েল। কিন্তু কাঁটা একটা ছিল। সেটা হল প্যালেস্তাইন। তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে!

ইজরায়েলের হাতে সেই সুযোগটাও এসে গেল। অতর্কিতে গাজা পট্টি দখলে রাখা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হামাসের আক্রমণ। গত পঞ্চাশ বছরে যা করেনি এবার তাই করল। একদিনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫০ হাজার রকেট ছুঁড়ে দিল ইজরায়েলের দিকে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, ইরানের ইন্ধনে, হামাস এই অভিযান চালিয়েছিল, ইন্ডিয়া-মিডল ইস্ট-ইউরোপ করিডর (IMEC) পরিকল্পনাকে বাঞ্চাল করতেই। ইরান এই লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ যে ইন্ধন দিচ্ছে তা আজ প্রমাণিত। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, কারণ এই নয়া বাণিজ্য রুট চালু হলে, ইরান, রাশিয়া হয়ে ইউরোপে যাওয়ার বাণিজ্য রুট পরিত্যক্ত হয়ে যাবে।

কূটনৈতিকমহলের একটা অংশের মত, ইজরায়েল এই সুযোগটাই খুঁজছিল। যাতে পথের কাঁটা পুরোপুরি শেষ করে দেওয়া যায়। গাজা স্ট্রিপকে দখলে নেওয়া মানে আগামী দিনে প্যালেস্তাইনকে নক্সা থেকে মুছে যাওয়া।  ভারত ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। এমনকী পাশে রয়েছে আমেরিকাও। অন্যদিকে, উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্যালেস্তাইনের পাশে দাঁড়িয়েছে, ইরাক, ইরান, লেবানন, আফগানিস্তান, কাতার, ইয়েমেন। সৌদি আরবও প্যালেস্তাইনের পক্ষে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, কিন্তু কোনও কড়া অবস্থান নিতে দেখা যায়নি।

অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্য এখন যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে, সেটা হল ধর্মসংকট। বিশ্ববাণিজ্যের রাশ কার দখলে থাকবে মধ্যপ্রাচ্যে? নক্সা থেকে কি আগামী দিনে হারিয়ে যাবে প্যালেস্তাইন? নাকি আমেরিকা যে স্বপ্ন দেখছে, সেই স্বপ্নে আফগানিস্তানের মতো চুরমার হয়ে যাবে? এখনই হয়তো সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। উত্তর হয়তো আগামী দিনে মিলবে।

Free access