চিত্র: সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: মৌ বসু: গোটা বিশ্বে ভয়ঙ্কর প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে বায়ুদূষণ। গোটা বিশ্বে ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো হোক কিংবা দাবানলের কারণে হওয়া বায়ুদূষণের ফলে প্রত্যেক বছর প্রায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে।
ওই গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ভারত, চিন, কঙ্গো, ইন্দোনেশিয়া ও নাইজেরিয়ায়। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্য বিশদভাবে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে বায়ুদূষণের কারণে ৯০% মৃত্যু হচ্ছে কম বা মধ্য আয়ুযুক্ত দেশে বিশেষ করে সাব-সাহারান আফ্রিকা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায়।
ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও দাবানলকে ল্যান্ডস্কেপ ফায়ার বলে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণের কারণে হওয়া হার্টের অসুখে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বছরে হার্টের অসুখের পরিমাণ বাড়ছে ১.৬৭%। শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের কারণে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষের।
বিগত ৭ বছর ধরে দিল্লির দূষণ নিয়ে গবেষণা করেছেন আইআইটি কানপুরের একদল গবেষক।
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ভয়ঙ্কর বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি। শোচনীয় অবস্থা হয় শীতকালে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাতাসে ধূলিকণা বা পিএম২.৫ এর মাত্রা বিপজ্জনক ভাবে বাড়ছে। বাতাসের গুণমান কমছে। বাতাসের গুণমানের সূচক ৪০০-র আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে। বাড়ছে সিওপিডি, শ্বাসকষ্ট এমনকি হার্টের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও। দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে ‘গ্যাসচেম্বারে’ পরিণত হওয়া দিল্লিতে বাড়ছে সিওপিডি, অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগ।
নয়াদিল্লির এইমস হাসপাতালের চিকিৎসকদের করা সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। ডাক্তারদের মতে, দীর্ঘ সময় ধরে একটানা বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বাতাস দূষিত বলে গলা খুসখুস, কাশির সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে একটানা কাশি থাকলে তা প্রকারান্তরে জটিল ফুসফুসের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি ধূমপায়ীদের হয়। কিন্তু এখন ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণে সিগারেট না খেয়েও সিওপিডিতে আক্রান্ত হচ্ছেন আট থেকে আশি প্রায় সকলে।
গোটা বিশ্বে হার্টের অসুখ ও ক্যানসারের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী অসুখ হল সিওপিডি। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষরা (২২%) মহিলাদের (১৯%) এর তুলনায় সিওপিডিতে বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হন।
অক্টোবরেই প্রকাশিত হয়েছে আইআইটি কানপুরের গবেষকদের গবেষণা রিপোর্ট। গত ৭ বছর ধরে করা গবেষণায় আইআইটির গবেষকরা জানান, দিল্লিতে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বাতাসে ধূলিকণা বা পিএম২.৫ এর মাত্রা অত্যাধিক বেশি পরিমাণে থাকে। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দিল্লির বায়ুদূষণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তারপর দূষণের প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে আর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। রাত ১০টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত দূষণের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিমাণে শোচনীয় হয়। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটানা গবেষণা চালানো হয়।