মেট গালা ২০২৪ এর রেড কার্পেটে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায় (ছবিঃ ইনস্টাগ্রাম)
Bangla Jago Desk: বঙ্গ থেকে এই প্রথমবার মেট গালার রেড কার্পেট মাতালেন কোনও বাঙালি। এতক্ষণে খবর ছড়িয়েছে বহুদুর। গণমাধ্যমে প্রচারও চলছে জোরদার। যার কারণবশত ভারতীয় ফাশ্যান ওয়ার্ল্ডে যুক্ত হল এক নয়া ইতিহাসের পাতা। বুঝতে পারছেন কার কথা বলা হচ্ছে? যার হাতের ছোঁয়ায় গোটা বিশ্ব মুগ্ধ। সে আর কেও নয়, বাংলার ছেলে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। সোমবার নিউ ইয়র্কের ‘মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট’ এর গ্যালারী সেজে উঠেছিল জে.জি.ব্যালার্ড এর ছোট গল্প “দ্য গার্ডেন অব টাইম” এর আদলে। একাধিক তারকার উপস্থিতিতে চাঁদের হাটে রূপান্তরিত হয়েছিল মেট গালা ২০২৪ এর মঞ্চ।
সেখানে প্রথমে বলিউড থেকে আলিয়া ভট্ট এর দেখা মিললেও, পড়ে শোরগোল পড়ে যায় সব্যসাচী দত্তের উপস্থিতিতে। সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের ডিজাইন করা শাড়ি নিয়ে অভিনেত্রিকে কথা বলতেও শোনা যায় এদিন তাঁর দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি বলেন শাড়িটি ১৬৩ জন শিল্পী দ্বারা ১ হাজার ৯৬৫ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় সিল্ক ফ্লস, গ্লাস বিডিং, রত্নপাথরের সামাহারে ২৩ ফুট লম্বা শাড়িটি বানানো হয়েছে। তবে এরপরই সমাজমাধ্যমে আগুনের লেলিহানের মতো ছড়াতে থাকে সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের ছবি। যেখানে ফরমাল লুকের মধ্যেই ছিল তাঁর ডিজাইনের ছটা। গলায় একাধিক জুয়েল ও সঙ্গে ডিজাইনার রাজকীয় ওভারকোর্ট পড়ে মেট গালার মঞ্চে উপস্থিত সকল পাপারাজ্জিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
View this post on Instagram
তাছাড়াও শুধুমাত্র মেট গালাতেই নয় ডিজাইনারকে এদিন নিউ ইয়র্ক সিটিতেও রাস্তায় কখনও নিজের ব্র্যান্ডের একটি শাখার সামনে ছবি তুলতেও দেখা যায়। সেখানে ছবি ছেড়ে তিনি লেখেন, “যান্ত্রিকীকরণ, আধুনিকতা এবং অভিন্নতা যত বাড়বে ততই ভারতের নৈপুণ্য, ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যের মূর্ত প্রতীক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতিকে রক্ষা করবে”। তাঁর ছবি বর্তমানে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়াতে। একজন অনুরাগী তাঁর ছবি শেয়ার করে লেখেন, “এই মানুষটি আজ সত্যি আমাদের গর্বিত করেছে!” সঙ্গে আরও এক অনুরাগী তাঁকে তাঁর “অনুপ্রেরণা” বলেও সম্বোধন করেন। তবে কে এই সব্যসাচী মুখার্জি?
View this post on Instagram
কাঁকিনাড়ার ছেলে সব্যসাচী বেড়ে ওঠেন গঙ্গা পারেই। বাড়ি ছিল তাঁর চটকল চত্বরে। চিড়ধরা চশমা পড়ে স্কুলে যাওয়া ছেলিটি আজ বিশ্ব জয় করল একপ্রকার। হলিউডের তারকাদের মুখে এদিন ছিল শুধুই তাঁর শাড়ি নিয়ে গুঞ্জন। ১৯৭৪ সালে জন্ম এই ফ্যাশান সম্রাজ্ঞীর। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে এক মধ্যবিত্ত পরিবারেই। চন্দননগরের শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনা করেন তিনি। কলমে জোর ছিল অভাবনীয়। স্কুল শেষে কাঁকিনাড়া থেকে চলে আসেন কলকাতায়। এখানে আসার পর শুরু করেন নিজের স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ‘ন্যাশনাল স্কুল অব ফ্যাশন টেকনোলজি’ নিয়ে পড়াশোনা করলে ছেলের পোশাকশিল্পী হওয়া নিয়ে প্রথমে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন তাঁর বাবা ও মা। তবে থেমে জাননি! ১৯৯১ সালে পড়াশোনা শেষ করেই পরপর দুটি প্রদর্শনীতে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন সব্যসাচী। এরপর পাড়ি দেন আরব সাগরের তীরে সপ্নের নগরী মুম্বাইতে।
View this post on Instagram
সেবছরই তিন জন কারিগর নিয়ে কাজ শুরু করেন নিজের পোশাক ব্র্যান্ডের কাজ। নাম রাখেন নিজের নামেই, ‘সব্যসাচী’। এরপর দেশের সর্বোচ্চ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় বন্ধু সেলিমা জেটলির জন্য এমন পোশাক বানান যা দেখে রীতিমত চমকে যান বিচারকেরা। হইচই পড়ে যায় তাঁর পোশাক নিয়ে। এরপর আরও কাজ করতে থাকেন তিনি। বিলেত পাড়ি দেন প্রশিক্ষণের জন্য। লন্ডন থেকে ফেরার পর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের বহু প্রান্ত সহ বিদেশের বহু ইভেন্টেও তাঁকে আমন্ত্রিত করা হয়ে থাকে। লন্ডন, সিঙ্গাপুর, নিউ ইয়র্ক সহ বহু জায়গায় তিনি তাঁর আভিজাত্য বিস্তার করতে থাকেন। এরপর বলিউডের একাধিক সিনেমায় কাজ করতে থাকেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য, ‘বাবুল’, ‘লাগা চুনরি মে দাগ’, ‘গুজারিশ’, ‘পা’, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ –এর মতো কিছু বিখ্যাত সিনেমা। শুধু তাই নয় বলিউড স্টারদের বিয়ের মতো বিশেষ দিনের ভরসাও তিনি। বিদ্যা বালন থেকে শুরু করে, অনুষ্কা শর্মা, দীপিকা, ক্যাটরিনা কইফ এর মতো অভিনেত্রীদের বিয়ের সাজ আর কারও হাতের নয় সব্যসাচীর হাতেই। এবার তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হল আরও এক মাইলফলক! ভারতের প্রথম ফ্যাশন ডিজাইনার, যার উপস্থিতি নজর কেরেছে মেট গালা’র মতো বৃহৎ একটি ষ্টেজে। সঙ্গে এই প্রথম কোনও বাঙালি ফ্যাশন ডিজাইনার হাঁটলেন মেট গালার রেড কার্পেটে। এ এক অনন্য সম্মান তাঁর কাছেও। তাই আবেগ আপ্লুত তিনিও, দিনেল ভবিষ্যৎ এর বার্তাও।
View this post on Instagram