Bangla Jago Desk, মৌ বসুঃ খরতাপদগ্ধ গ্রীষ্ম আপামর বাঙালির কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেন না, বঙ্গজীবনে ভুবনজোড়া আসনখানি নিয়ে আসীন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের জন্ম বৈশাখে তেমনই জৈষ্ঠ্যমাসে জন্ম বিদ্রোহী কবি নজরুলের। রবীন্দ্রনাথের মতোই বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন কাজী নজরুল। তিনি বাংলা ছায়াছবিতে সঙ্গীত পরিচালনাও করেছিলেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে তাঁর প্রথম কাজ ধ্রুব ছায়াছবিতে। ধ্রুব ছায়াছবির গান জনপ্রিয় হলেও নজরুলের মনে হয়েছিল তিনি আর্থিক ভাবে সেভাবে লাভবান হননি। তাই পরবর্তী কালে ওই প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তিনি কাজ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়াও পাতালপুরী, মুক্তি, সাপুড়ে, বিদ্যাপতির মতো সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন নজরুল। মুক্তি ছায়াছবিতে অবশ্য তিনি একাই সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন না। মুক্তি ছায়াছবিতে প্রথম বার রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার করা হয়। কাননদেবী ও পঙ্কজ মল্লিক রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছিলেন। এরপর দেবদত্ত ফিলমসের প্রযোজনায় গোরা ছায়াছবি তৈরি হয়।
সে সময় কোনো সিনেমায় রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার করলে বিশ্বভারতীর অনুমোদন লাগত। কিন্তু গোরা ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা করত গিয়েই ফ্যাঁসাদে পড়েন নজরুল। গোরা ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালনা করার সময় তিনি বিশ্বভারতীর অনুমোদন নেননি। তাঁর বিশ্বাস ছিল বিশ্বভারতী অনুমতি দিয়ে দেবে। ছবিটি রিলিজ হওয়ার ২ দিন আগে ছবি দেখেন বিশ্বভারতীর একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি নজরুলের সঙ্গীত পরিচালনায় রবীন্দ্র সঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ে আপত্তি জানান। তারপর বিশ্বভারতী ওই ছবিতে রবীন্দ্র সঙ্গীত ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি। মাথায় হাত পড়ে ছায়াছবির প্রযোজকের কারণ তিনি অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন। আতান্তর পড়েন নজরুলও।
তাঁকে খুবই স্নেহ করতেন রবীন্দ্রনাথ। উপায় না দেখে রবীন্দ্রনাথের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন নজরুল। বিশ্বভারতী তাঁর সঙ্গীত পরিচালনায় গান বাতিল করছে এটা ছিল তাঁর কাছে বিরাট মানসিক ধাক্কা। বিপদে পড়ে তড়িঘড়ি শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে যান নজরুল। আগেভাগে কিছুই জানাননি। তাই নজরুলকে যারপরনাই অবাক ও আনন্দিত হন রবীন্দ্রনাথ। তিনি নজরুলকে থেকে যাওয়ার কথা বলেন কিন্তু সেদিনই নজরুলকে কলকাতায় ফিরতে হত নাহলে বিপদে পড়বেন ছায়াছবির প্রযোজক। তাই রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে অনুমতি চাইতে গোরা ছায়াছবির একটি প্রতিলিপি ও ছোট্ট প্রোজেকশন যন্ত্র সঙ্গে আনেন নজরুল। গোটা ঘটনার বিবরণ রবীন্দ্রনাথকে জানান নজরুল।
বিদ্রোহী কবি নজরুল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথকে একটিবার প্রোজেক্টরে ছায়া ছবিটি দেখার অনুরোধ করেন। নজরুলকে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ জানান, ‘আমার বলার কোনো ভাষা নেই। ওরা কীভাবে তোমার সঙ্গীত পরিচালনায় হওয়া গান আটকে দেয়? ওরা কি আমার গানের মূল্য তোমার চেয়ে বেশি ভালো করে করবে?’ নজরুল রবীন্দ্রনাথকে জানান তাঁর লিখিত অনুমতি ছাড়া ছবি রিলিজ হবে না। স্নেহের বিদ্রোহী কবির ওপর বিশ্বকবির এতটাই আস্থা ছিল যে সিনেমা সবাইকে দেখানোর অনুমতি তিনি দিয়ে দেন।