Bangla Jago Desk, প্রবাল ব্যানার্জী: ভারতীয় তারিখ অনুযায়ী গত ৬ নভেম্বর বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড়সড় পরিবর্তন ঘটল। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে আমেরিকার ৪৭তম প্রাসিডেন্ট হিসাবে জয়লাভ করলেন। এবার আমরা দেখে নেওয়ার চেষ্টা করব আমেরিকার রাজনীতিতে এই রদবদল বিশ্ব অর্থব্যবস্থা তথা ভারতীয় অর্থব্যবস্থাতে কোন প্রকার প্রভাব ফেলবে।
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক এই জয়ের তাৎক্ষণিক প্রভাব হিসাবে বিশ্ব বাজারে কী পরিবর্তন লক্ষ্য করাগিয়েছে। এক, ট্রাম্পের জয়ে বিশ্বের যাবতীয় বড় শেয়ার বাজারে ইতিবাচক আস্ফালন লক্ষ্য করা গিয়েছে।যেমন জাপানের নিক্কেই, ইউরোপের স্টক্স ৬০০, আমেরিকার ডাও জন্স, ভারতের সেনসেক্স আর নিফটি– সব শেয়ারের ইতিবাচক দৌড় লক্ষ্য করাগিয়েছে। শুধু মাত্র চিন অধিকৃত হংকং-এর শেয়ারবাজার হ্যাংসেং ছাড়া। সেখানে নিম্নমুখী ধারা লক্ষ্য করা যায়। তার একটি নির্দিষ্ট কারণও নিঃসন্দেহে আছে। ট্রাম্পতাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময়েই বলেছিলেন তিনি চাইনিজ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৬০শতাংশপর্যন্ত শুল্ক চাপাতে পারেন, যাতে তাদের দেশীয় পণ্য বেশি মাত্রায় বিক্রয় হয়।
দুই, ট্রাম্প যেহেতু নিজেদের দেশীয় পণ্য উৎপাদন তথা রফতানিতে বেশি নজর দেবেন, তাই আমেরিকান ডলার ইতিমধ্যেই অন্যান্য দেশীয় মুদ্রার তুলনায় শক্তিশালী হওয়া শুরু করে দিয়েছে। জাপানের ইয়েন, ব্রিটেনের পাউন্ড, ইউরোপের ইউরো এমনকী ভারতীয় টাকার মূল্যও এই দিন ডলারের বিপক্ষে সবচেয়ে নীচে নেমে ৮৪ টাকা ৩০ পয়সায় থামে।
তিন, মেটাল এক্সচেঞ্জে ট্রাম্পের জয়ের নিম্নমুখী প্রভাব পড়তে দেখাগিয়েছে। এতদিন ভোটপর্ব চলাকালীন অনিশ্চয়তার জন্য সোনা-রুপোর দাম ক্রমবর্ধমান হতে দেখা যাচ্ছিল। ভোটের ফলাফল নির্ধারিত হয়ে যাওয়ারসঙ্গেসঙ্গেই সোনা-রুপোর দাম পড়তে শুরু করে, কারণ শেয়ার বাজারেরসঙ্গেসোনা-রুপোর দাম ব্যাস্তানুপাতিক। শেয়ার বাজার বাড়লে সোনা-রুপোর দাম পড়ে।কারণ সবাই তখন শেয়ারে টাকা লাগায়। অপরিশোধিত তেল এবং আরও অন্যান্য মেটালের দামও এদিন পড়তে শুরু করে।কারণ ডলারের দাম বাড়লে বিশ্ব বাণিজ্যে তার নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই।
চার, ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারেও ইতিবাচক আস্ফালন লক্ষ্য করাগিয়েছে।তার কারণ এটা মনে করা হয় যে ট্রাম্প ক্রিপ্টোকারেন্সির সমর্থক। ক্রিপ্টোকারেন্সির সব থেকে বড় কারেন্সি বিটকয়েনের দাম এদিন ৭৫০০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। অন্যান্য কারেন্সিতেও এদিন ইতিবাচক দৌড় লক্ষ্য করা যায়।
এবার দেখে নেওয়া যাক ট্রাম্পের জয় ভারতীয় অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে। প্রথমে দেখে নেওয়া যাক আমরাকীকীসুবিধা পেতে পারি এই জয় থেকে।
এক, চাইনিজ পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে আমারিকা অত্যাধিক শুল্কপরিষেবা চাপালে তা ভারতীয় কোম্পানির জন্য লাভজনক প্রতিপন্ন হবে। বিশেষ করে গাড়ির পার্টস, সোলার প্যানেল, আর রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি সুবিধা পাবে আমেরিকার বাজারের সুলভে নিজেদের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে। তাই আমাদের রফতানি বৃদ্ধি পাবে।
দুই, ট্রাম্পেরজীবাশ্মজ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধির সমর্থন আরও বেশি করে জ্বালানির উৎপাদনে উৎসাহ দান করবে। ফলস্বরূপজীবাশ্ম জ্বালানির দাম বিশ্বব্যাপী কমবে। যার লাভ আমাদের দেশীয় অপরিশোধিত তেল কোম্পানিগুলি অর্থাৎ হিন্দুস্থান পেট্রলিয়াম, ভারত পেট্রলিয়াম, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশান বিপুললাভবানহবে।
তিন, ট্রাম্পের বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা নীতির প্রভাবে আমেরিকা বিশ্বের দরবারে পণ্য উৎপাদনের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে উঠে আসবে। আর তার প্রভাব পড়বে আমাদের বহুজাতিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির ওপরেও। এদের মধ্যে আছে এবিবি, সিমেন্সে, কামিন্স, হানিওয়েল, হিতাচি এনার্জি প্রভৃতি।
চার, প্রতিশ্রুতিমতো ট্রাম্প যদি কর্পোরেট ট্যাক্স রেট কমানো, ব্যাবসায়িক নিয়ম কানুন শিথিলি করণ এবং আরও ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেন তাহলে সেটি একটি অনুকূল আবহাওয়া তৈরি করবে ভারতীয় কোম্পানিগুলির জন্য।
এবার দেখে নেওয়া যাক অসুবিধাগুলিকীকী হতে পারে।
এক, ট্রাম্পের অত্যাধিক উৎপাদন ও অত্যাধিক ব্যয়ের নীতি তাদের দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটাতে পারে। যার ফলে তাদের দেশীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে পারে। তার ফলে আমাদের দেশের সেই সব ব্যবসায়িক সংস্থা সঙ্কটে পড়বে যারা আমেরিকার থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে অপরিশোধিত তেল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করা কোম্পানির কথা।
দুই, ট্রাম্পের নীতির ফলে ওই দেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটলে ডলার আরও শক্তিশালী হবে, অন্যান্য দেশের মুদ্রার মতোই ভারতীয় টাকা আরও দুর্বল হবে। আর ভারতীয় টাকা দুর্বল হলে ভারতীয় কোম্পানিদের পণ্য আমদানি করতে হলে আরও বেশি ভারতীয় টাকা ব্যয় করতে হবে।
তিন, যদিও ট্রাম্পের আসার খবরের প্রথম প্রভাবে শেয়ার বাজার চাঙ্গা হলেও ট্রাম্পের অনিশ্চিত ব্যবসায়িক নীতি দীর্ঘ সময়কালের জন্য শেয়ার বাজারকে অস্থির করে রাখতে পারে। পুরনো তথ্য ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই, ট্রাম্পের আগের সময়কালে (২০১৭-২০২১) আমেরিকার শেয়ার পরিমাপক ন্যাসডাক ৭৭শতাংশ বেড়েছিল। আর সেখানে ভারতীয় নিফটি মাত্র ৩৮শতাংশ বেড়েছিল।
পরিশেষে এটাই বলার যে, সুবিধা-অসুবিধা দুই দিকই দাঁড়িপাল্লায় সমান সমান দোদুল্যমান। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথগ্রহণ করার পরের প্রথম ১০০ দিনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকীকী নিয়ম নিতি পরিবর্তন করেন, সেইদিকেইতাকিয়েআছে গোটা বিশ্ব।