ad
ad

Breaking News

New Year

নতুন বছরে ভাবনা হোন নতুন কিছু

চলে এল আর একটি বছর। নতুন বছর। তাই আমাদের আবেগ আর উচ্ছ্বাসের শেষ নেই।

Think of something new in the new year.

Bangla Jago Desk: বাবুল চট্টোপাধ্যায়: চলে এল আর একটি বছর। নতুন বছর। তাই আমাদের আবেগ আর উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। আমরা যখন এত আনন্দ-যজ্ঞে মাতছি তখনই  আ একদিক থেকে আমদের ক্রমেই আয়ু কমছে- তার খবর আমরা তেমন রাখছি কই! একটি ঘটনার কথা তবে বলি। নতুন বছরের প্রথম দিনে বাবা ছোট্ট শিশুকে প্রশ্ন করেছিল বলতো আজ কার জন্মদিন?

বাবা এই ভেবে বলেছিল যে, তার ওই সাড়ে তিন বছরের ছেলে হয়ত উত্তর দেবে কল্পতরু উৎসব কিম্বা তৃণমূলের (খবর শুনে) জন্মদিনএইসব আর কী। না, ছোট্ট শিশুটি সেই সব কিছুই বলেনি। বলল- ১লা জানুয়ারি ২০২৫ সালের জন্মদিন। বাবা অবাক হন! এ ভাবেও ভাবা যায়। তা হলে বোঝা গেল যে আমাদের মধ্যে কত সঠিক ভাবনা নিহিত রয়েছে! আমরা তা উসকে দিয়ে অনেক ভাল ভাবনার ঘরে অনায়াসেই বাস করতে পারি। এখানে এই উদাহরণ এই কারণে আনলাম যেখানে একটা বাচ্চা ছেলের মধ্যে কতটা নিষ্পাপ সত্য আশ্রয় আছে আর যা আমাদের মধ্যে ততটা সত্য নেই! কিন্তু কেনই বা নেই?

উত্তর আপনার আমার খুবই চেনা। আমরা নানা পারিপার্শ্বিক কারণে সত্যির খবর ভুলে যায়। আমরা আসল জায়গা থেকে সরে আসি। ভুল বললাম আমরা সরে আসতে বাধ্য হই। আমরা নতুন বছরে কি সেই প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবো! কেউ বলবেন পারবো, কেউ বলবেন না আমরা মুক্ত হতে পারবো না। আমরা অনেকেই নতুন বছরে অনেক রেজ্যুলেশন নিয়ে ফেলি। কিন্তু আমরা তা রক্ষা করতে পারি না। কারণ বলা আর করার মধ্যে অনেক পার্থক্য।

আমরা নানা কারণে তা পারি না। অনেকটাই চেষ্টার অভাব। আবার কেউ কেউ পারে। যেমন ধরা যাক নতুন বছরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বাপি বাড়ি এসেছে। চিটিংবাজটি এবার জনসেবার কাজে মন দিয়েছে। নিজে পঞ্চায়েতের সদস্য হিসাবে উপযুক্ত অবস্থা সত্ত্বেও আবাস যোজনার নান দিয়েছিল। নতুন বছরে সেই টাকা অনুমোদন হওয়ার পর বিবেকের তাড়নায় সে সেই টাকা ফেরত দিয়েছে।

সরকারি স্কুলের চাকুরিরত শিক্ষক এবার ঠিক করেছে সে এবার প্রাইভেট টিউশনি বন্ধ করে স্কুলে পড়ানোর মন দেবে। এবার থেকে ওই নাম করা প্রোমোটার আর বেশি মুনাফা করবে না। নামকরা মস্তান নাকি ভারত সেবাশ্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কিম্বা একজন উচ্চ ভিজিট নেওয়া প্রাইভেট চেম্বারের ডাক্তার এবার থেকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করবেন বলে প্ল্যান করেছেন। উকিল ও মক্কেলকে আর ডেট এর পর ডেট দিয়ে পয়সা কামানো বা মিথ্যা মামলা করে মানুষকে নাজেহাল করবে না। কিম্বা পুলিশটি ঠিক করেছে আর কিছুতেই সে ঘুস নেবে না। এইরকম কত কত কত!

যদি এই রকমই সকলে ভাবতো তা হলে কতই না ভাল হতো। কিন্তু তা তো হয় না! বরং তার উল্টোটা হয়। বলি একজন ট্যাটু আর্টিস্ট-এর কথা। উনি প্রফেশনাল। উলুবেড়িয়া থেকে সিথির মোড়ে রাত দুটোয় আসবেন একজন মহিলাকে কোমরে ট্যাটু করবেন বলে। হ্যাঁ, ১ জানুয়ারি ছিল সেদিন। নির্দিষ্ট জায়গায় এসে ফোন করতে বলে। ট্যাটু আর্টিস্ট সিথির মোড়ে এসে ফোন করেন। ফোন বিজি থাকে। আবারও ফোন। আবারও বিজি। আবারও ফোন। এবার ধরে। বলে আই ডোন্ট নো, হু আর ইউ? ডোন্ট ডিস্টার্ব!

ফোন কেটে দেয়। মানে ঠকিয়েছে। অভাবী আর্টিস্ট এবার প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত। সে ওই নম্বরটি সেক্স ওয়ার্কার হিসবে ওই ফোন নম্বরে যোগাযোগ করার বিজ্ঞাপন বাসের পেছনে, লাস্ট ট্রেন ধরে ফাঁকা ট্রেনে নিজে হাতে বিজ্ঞাপন মেরে দেয়। যার ফল ভাল হয়নি। প্রচুর কল আসে, প্রচুর মেসেজ। মেয়েটা খারাপ কিনা জানি না তবে শুনেছি ওই বিজ্ঞাপন তার জীবনে প্রভূত ক্ষতি করেছে। তবে কী ওই কাজগুলি ভাল হল? উত্তর অবশ্যই না।

এই রকম কত ঘটনা আপনার-আমার জানা। মোদ্দা কথা, আমরা কি এর থেকে নতুন বছরে বের হতে পারবো না? আসলে আমরা চেষ্টা করলেই পারবো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা নানা কারণে তা করি না বা পারি না। এখানেই আমাদের সমস্যা। আমরা যেটা সামান্য চেষ্টা করলে পারি আমরা সেটা করি না অযথা দোষ দিয়ে থাকি পারিপার্শ্বিক বিষয়কে। এমনটা হলে তো চলবে না!

তা হলে কেমন ভাবে চলতে হবে তা আমাদের ঠিক করে নিতে হবে। আমাদের ভাবনার সঙ্গে কাজের মিল রাখতে হবে। আমাদের পরে করবো সেই ভাবনাকে ত্যাগ করতে হবে। আমাদের যা করতে হবে তা মন দিয়ে করতে হবে। আমরা জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কী! তবে আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই ঠিক করে নিতে হবে। বুঝতে হবে আমাদের মধ্যেই ভাল, মন্দ সব কিছু আছে। আমরা মন্দের পথ ত্যাগ করে সত্যের পথটিতে আশ্রয় নিতে হবে।

সমস্ত মানুষকে সম্মান দিয়ে আমাদের উচিত সামনের দিকে এগিয়ে চলা। ভাল-মন্দ না ভেবে আমাদের উচিত আত্মবিশ্লেষণ করা। আমাদের মধ্যে প্রচুর ঘাটতি আছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা সেটা জানি, অনেক ক্ষেত্রে আমরা সেটা জানি না। অবার এমনও আছে সব বুঝেও কিছু না বোঝার ভান করে থাকি। আমাদের সেটা দূর করতে হবে। আমরা এটা জানি যে ভাল হতে লাগে প্রচুর পরিশ্রম। চেষ্টা করলে তা হওয়াও যায়। আর সেই চেষ্টাটা আমাদের অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। আমরা নতুন বছর কি সেটা করতে পারি না? মনে হয় পারি। পারলে বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন কী সেই পথ। দেখবেন আপনি ঠিক তার উত্তর ঠিক পেয়ে যাবেন। হোক না তা আর একটু পরের কথা।