ad
ad

Breaking News

New generation

নতুন প্রজন্ম যেন কোনও ভাবেই নিরুৎসাহিত না হয়

লেখাপড়া বা অন্য কোনও কর্মসূচি যাই হোক না কেন, তা সঠিক ভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজন কর্ম-সম্পাদনের চালিকা শক্তি।

The new generation should not be discouraged in any way

Bangla Jago desk, কাজল ব্যানার্জি: লেখাপড়া বা অন্য কোনও কর্মসূচি যাই হোক না কেন, তা সঠিক ভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজন কর্ম-সম্পাদনের চালিকা শক্তি। ইংরেজিতে এই চালিকা-শক্তিকেই বলা হয় মোটিভেশন। ইংরেজিমোটিভেশনশব্দটির অর্থ হল, আলোড়ন, তাড়না, নোদনা, সক্রিয়তা, বল-বৃদ্ধিকারক ক্ষমতা বা প্রেষণা ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানে প্রেষণা শব্দটিকে অত্যন্ত ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। প্রেষণা এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যা মানুষকে কোনও আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করে বা ওই আচরণের দিকে পরিচালিত করে। চাহিদা বা অভাববোধ থেকে আমাদের মনের ভেতরে বা বাইরে উদ্ভুত চাপের দ্বারা কোনও লক্ষ্য অর্জনের জন্য মনের মধ্যে যে তাড়নাবা উদ্যম সৃষ্টি হয়, তাকেই প্রেষণা বা মোটিভেশনবলে অভিহিত করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে যেকোনও কাজ সফল ভাবে চালিয়ে যেতে হলে সেই কাজের উদ্যমকে বজায় রাখাটা কিন্তু ভীষণ জরুরি।

[আরও পড়ুনঃ Divorce Case: শরীয়ত কাউন্সিল আদালত নয়, বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিতে পারেনা: হাইকোর্ট

এমনকী শুধু প্রেষণার তত্ত্বই নয়, থর্নডাইকের ‘ফল লাভের সূত্র’ও একই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করে। থর্নডাইক এই সূত্রে বলেছেন যে, যেকোনও কাজের ক্ষেত্রে কর্মসম্পাদনকারীর একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। তিনি তাঁর কর্ম-সম্পাদনকালে তাঁর কৃতকর্মের দরুন কিছু ফল প্রত্যাশা করে থাকেন। এবং সেই ফল মিললে তা তাঁর সেই কর্মসম্পাদনের প্রক্রিয়ার গতিকে আরও ত্বরান্বিত করে। অপরপক্ষে দীর্ঘদিন কোনও ফল না পেলে সেই কাজের প্রতি ব্যক্তির আগ্রহ কমতে থাকে। তাই পরীক্ষার ফল ভাল হলে তা শিক্ষার্থীকে লেখাপড়ামুখী করে তোলে। আবার নাচ, গান ইত্যাদি শিল্পকলার ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে শুধু ব্যকরণগত রেওয়াজ করতে থাকলে শিক্ষার্থীর কাছে তা একঘেয়েমির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

তাই শিক্ষণকালে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অনুশীলন কারীর আয়ত্তগত দক্ষতাকে মঞ্চে বা জনসমক্ষে একটু প্রদর্শন করার সুযোগ আসলে তা শিক্ষার্থীর মধ্যে উদ্যম এবং আগ্রহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অতএব, পিতামাতা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুল, প্রশাসন ও সরকারের সঙ্গে যুক্ত আমাদের প্রত্যেকের উচিত নতুন প্রজন্মের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে লেখাপড়া বা অন্যান্য দক্ষতার অনুশীলন কালে তাদের যথাযথভাবে প্রেরণা ও প্রেষণার জোগান দেওয়া। যেকোনও কাজের সাফল্য সেই কাজের প্রেষণা হিসাবে চক্রাকারে সেই কর্মধারাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে বাহ্যিক উদ্দীপকের প্রয়োজনীয়তা কিছুটা কম হলেও উপেক্ষণীয় নয়। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে কর্মসম্পাদনকারীর সাফল্যের হার কম, সেই সকল ক্ষেত্রে বাহ্যিক উদ্দীপকের গুরুত্ব প্রশ্নাতীত।

প্রশংসা, পুরস্কার, স্তুতি, মর্যাদা, স্বীকৃতি, খ্যাতি ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর উৎসাহ বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাঁর মধ্যে নিহীত থাকা সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ সম্ভাব্য স্তর পর্যন্ত বিকশিত করা সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের পক্ষে আমরা সওয়াল করলেও, নতুন প্রজন্মের বিকাশকালে প্রয়োজনীয় প্রেষণা জোগানোর ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা আর্থিক লাভ-ক্ষতির হিসাব করতে বসে যাই! একটা সময় মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অর্জন করলে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে মানুষ সেই শিক্ষার্থীকে দলে দলে দেখতে আসতেন। আমার অগ্রজের ক্ষেত্রে এই ঘটনা আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছিলাম। আবার পরবর্তীতে আমাদের ছাত্রদশায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ সকল শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়, পাড়ার ক্লাব ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হতো।

আমার নিজের ক্ষেত্রেও এই ধরনের বহুসংবর্ধনা আমার পরবর্তী শিক্ষাজীবনকে উৎসাহ জুগিয়েছে। অতঃপর আমাদের শিক্ষকতা জীবনের শুরুতে দেখেছি শুধু স্টার প্রাপকদের পুরস্কৃত হতে। বর্তমানে আবার অনেক স্কুলেই শুধুমাত্র প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা ৯০ শতাংশের ঊর্ধ্বে নম্বর প্রাপকদের পুরস্কৃত করা হয় অর্থ সাশ্রয়ের জন্য। অতি সম্প্রতি আবার দেখা যাচ্ছে কিছু বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র ফুলমার্কসপাওয়া শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করছে। এই ঘটনা কিন্তু চূড়ান্ত অবিজ্ঞানসম্মত এবং শিক্ষা-বিজ্ঞানের পরিপন্থী। পুরস্কার আসলে যাঁকে প্রদান করা হয়, শুধু তাকেই উৎসাহ জোগায় না, সেইসঙ্গে যারা এই পুরস্কার পায় না তাদেরও আরও অধিক অনুশীলনের প্রতি যত্নবান হতে প্রেষণা জোগায়।

কিন্তু দক্ষতা অর্জনের সূচনাতেই যদি শিক্ষার্থী অনুমান করে যে ১০০-রমধ্যে১০০ পাওয়া তার পক্ষে দুষ্কর তাহলে কিন্তু সে সেই কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে বাধ্য। তাই এই ধরনের পুরস্কার প্রদান কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে নিরুৎসাহিত করে। আর একশোশতাংশনম্বর পাওয়ার অর্থ এই নয় যে সেই শিক্ষার্থী সেই বিষয়টির একশোশতাংশই জানে। আবার৯৮শতাংশনম্বর পাওয়ার অর্থও এই নয় যে উক্ত শিক্ষার্থী প্রথমোক্ত শিক্ষার্থীর থেকে কম জানে। সেই সঙ্গে কোনওআদর্শ শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে সকলকে ‘ফুলমার্কস’ পাওয়ার লক্ষ্য বাতলে দিতেও পারেন না। আসলে যে শিক্ষার্থীর যে ধরনের সামর্থ্য সে যদি সেই সীমা অতিক্রম করতে পারে তাহলে তাকে পুরস্কৃত করাটাই শিক্ষাবিজ্ঞান সম্মত।

[আরও পড়ুনঃ আবারও সলমনকে খুনের হুমকি, দু’কোটির দাবিতে ট্র্যাফিক পুলিশের কাছে ফোন

কারণ ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে মেধার পার্থক্য জন্মগত যা কখনওই অন্যের সঙ্গে তুলনীয় নয়। শিক্ষার্থীর মেধাকে বর্ধিত করা সম্ভবও নয়। পরিবেশ, শিক্ষক, বাহ্যিক উদ্দীপক ও প্রেষণার মাধ্যমে শুধু তাঁর সর্বোচ্চ অন্তর্নিহিত সম্ভাবনার বিকাশ ঘটনো সম্ভব। অতএব, আগামী প্রজন্মের বিকাশক্রিয়াকে সঠিকভাবে ত্বরান্বিত করতে তাঁদের অনুশীলনকালে সঠিকভাবে প্রেষণাজোগানো ভীষণ জরুরি। এটি দেশের ভবিষ্যৎ স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের দেশের তথা রাজ্যের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অধিকাংশে ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিকে সামনে রেখে সংঘটিত হয়।

তাই সাম্প্রতিক তদন্তে হাজার হাজার চাকরি বিক্রির সত্য যেভাবে আদালতের মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়েছে বা অতীত নিয়োগের তথ্য প্রকাশিত হয়ে চলেছে তা কিন্তু বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়াদের লেখাপড়ার উৎসাহকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে। তাই এই অবেলায়, শিক্ষার্থীদের উদ্যমে যাতে ভাটা না পড়ে তার দিকে নজর দেওয়ার আশু প্রয়োজন। কারণ, দেশের ভবিষ্যৎ আজকের এই পড়ুয়ারাই। তাদের সামনে যাতে কোনও নেতিবাচক বাতাবরণ তৈরি না হয়, সেই দিকটিও গুরুত্ব সহকারে ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।