নিজস্ব চিত্র
প্রভাত কুমার মিত্র: আমাদের জীবন যেন এক নিরবচ্ছিন্ন দৌড়। ছোটবেলা থেকেই আমাদের শেখানো হয় — ভালো স্কুল, ভালো কলেজ, ভালো চাকরি, আরও ভালো বেতন, বড় বাড়ি, দামি গাড়ি, আর অধিক অর্থ উপার্জনের কৌশল (Meaningful Living)। এই দৌড়ে কখন যে আমরা নিজেদের মানবিক অনুভূতি, সম্পর্কের উষ্ণতা আর সহজ-সরল জীবনের স্বাদ হারিয়ে ফেলি, তা বুঝতেই পারি না। চাকরি জীবনের প্রায় ৩৫ বা ৪০ বছর আমরা কাটিয়ে দিই শুধুমাত্র অর্থ ও চাহিদা পূরণের আশায়। প্রয়োজন আর চাহিদার মধ্যে পার্থক্য শেখানো হয় না।
চাহিদা যত পূরণ হয়, ততই তার নতুন নতুন রূপ নিয়ে সে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। আমরা ভেবে নিই — আরও একটু উপার্জন করলে জীবন আরও নিরাপদ হবে, আরও সুখী হবো। কিন্তু এই অবিরাম সংগ্রামের ফাঁকে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি নিজের সাথেও। এভাবে যখন কর্মজীবনে অবসর আসে, তখন হাতে থাকে অর্থের পুঁজি, আর মনে জমে থাকা এক পাহাড় সমান শূন্যতা।
আরও পড়ুন: Shiva Temple: শতাব্দী প্রাচীন শিবের মন্দিরের পুকুর ভরাট করার অভিযোগ মন্দির কমিটির বিরুদ্ধে
অর্থ তখন আর কোনো আনন্দ দিতে পারে না। যাদের জন্য এতদিন ছুটেছি, তাদের সাথে তখন যোগাযোগের সেতু ভেঙে যায়। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজেদের জীবনে। আমাদের জীবনের রাজ্য তখন এক নির্জন মরুভূমিতে পরিণত হয় (Meaningful Living)। সবচেয়ে বড় সত্য — অর্থ খাওয়া যায় না, অর্থ কথা বলে না, অর্থ সঙ্গ দেয় না। অথচ জীবনের সবটুকু সময় আমরা এই অর্থের পেছনেই দৌড়েছি।
এ অবস্থার প্রধান কারণ — চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণের অভাব। কখনো শেখানো হয়নি, প্রকৃত ঐশ্বর্য অর্থের বহর নয়, বরং সম্পর্কের উষ্ণতা, মনের শান্তি, আর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে বোঝার মধ্যে। একজন মানুষ যতই বড় চাকরি করুক, যতই ধনী হোক — ভালোবাসাহীন জীবন কখনোই সুখের হতে পারে না। জীবন তখনই অর্থবহ হয় যখন অর্থ উপার্জনের সাথে সাথে আমরা কিছুটা সময় পরিবারকে দিই, বন্ধুদের খোঁজ রাখি, প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াই, সমাজের জন্য কিছু করি।
Bangla Jago FB Page: https://www.facebook.com/share/193NB43TzC/
জীবন মানে শুধু অর্থ উপার্জন নয়। জীবন মানে মানুষের পাশে থাকা, সম্পর্ক গড়ে তোলা, ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়া। আমাদের প্রতিদিনের চাহিদা সীমিত করা, প্রয়োজন বুঝে জীবন চালানো — এটাই প্রকৃত সুখের মূলমন্ত্র (Meaningful Living)। অর্থ উপার্জন হোক, তবে তা হোক সম্পর্ক, অনুভূতি আর মানবিকতার সঙ্গে। নয়তো জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আমাদের সেই একই অভিশপ্ত একাকীত্ব আর মরুভূমির মুখোমুখি হতে হবে। আজই সময় — নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কী চাই? অর্থের পাহাড়, না ভালোবাসায় পূর্ণ একটা জীবন?