ad
ad

Breaking News

Mamata Banerjee

Mamata Banerjee: ‘দুয়ারে সরকার’ থেকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার: উন্নয়নের কৌশলে ডবল ইঞ্জিন সরকারকে কীভাবে টেক্কা দিল বাংলা?

স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি ইস্যু বা স্লোগান বাছার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন জননেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।

Mamata Banerjee Political Strategy: Master of Issue Selection

চিত্রঃ সংগৃহীত

শ্যামালকান্তিধর ধর (লেখক– রাজনৈতিক বিশ্লেষক): বিরোধী দলের নেতা-নেত্রী হোন বা সরকারি দলের, রাজনীতিতে সকলের ক্ষেত্রেই একটা জিনিস প্রযোজ্য সেটা হচ্ছে ইস্যু ধরা এবং তৈরি করা। সেইসঙ্গে স্লোগান নির্বাচন। যে দল সময়ের সঙ্গে স্লোগান বা ইস্যু বাছতে পারবে, সেটাকে মানুষের কাছে যত তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় করে তুলতে পারবে সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় ব্যাপার। তবে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি ইস্যু বা স্লোগান বাছার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সবাইকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন জননেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ১৯৯৮ সালের আগে ও পরে একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে আন্দোলনমুখী হয়েছেন। যে ইস্যু বা স্লোগানগুলি সামনে নিয়ে এসেছিলেন তার মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ছিল- ১) সিপিএম কংগ্রেসের বি টিম, ২) নো আইডেন্টিটি নো ভোট। এই স্লোগান দুটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে, যার জেরে শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস দলকে, যার সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত সেই দলকে ১৯৯৮ সালে তাসের ঘরের মতো ভেঙে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। ঘাসের ওপর জোড়াফুল চিহ্ন নিয়ে বাংলায় বামফ্রন্টের বিকল্প হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়েছিল অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে। যা নতুন কংগ্রেস বাংলায় প্রকৃত কংগ্রেস হয়ে ওঠে। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস, শুরু হল বামফ্রন্টর সঙ্গে অসম লড়াই। সে লড়াইয়ে বহু প্রাণের বলিদান হয়েছিল। শহিদের প্রকৃত হিসাব নেই বললেই চলে। দলে দলে, ধাপে ধাপে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকল তৃণমূল কংগ্রেসর পতাকা তলে। এক থেকে একশো ধাপে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে লাগলেন নেতা-কর্মীরা। দিনে দিনে শীর্ণকায় হতে থাকল বাংলার কংগ্রেস (Mamata Banerjee)।

আরও পড়ুনঃ প্রাক্তন মন্ত্রী মণীশ গুপ্তর নামে ভুয়ো প্রোফাইল খুলে সাইবার জালিয়াতির অভিযোগ, তদন্তে পুলিশ

আর দ্বিতীয় স্লোগান ‘নো আইডেন্টিটি নো ভোট’। এই স্লোগানটি এতই প্রভাবশালী ছিল যার অভিঘাতে একটা সময় বামফ্রন্টের ৩৫ বছরের সাজানো বাগান ২০১১ সালে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। পতন ঘটে বামফ্রন্ট সরকারের। পরিবর্তন হয় সরকার। পালাবদল ঘটে বাংলায়। তারপর থেকে চলছে বাংলায় উন্নয়নের ধারা। একটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যতগুলি স্তর আছে তার ততগুলি স্তরেই একটি করে প্রকল্পের মাধমে কাজ শুরু হল, প্রায় শতাধিক প্রকল্প চলছে যার প্রত্যেকেটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য। এর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প দুয়ারে সরকার। শুধু দুয়ারে সরকার নয়, এরমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্প সর্বভারতীয় স্তরে পুরস্কৃত হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণে ও সাফল্যের ভারতের ডবল ইঞ্জিন সরকারের থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলা। সুতরাং রাজনীতিতে ইস্যু বাছাই করাই হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ কলা। এই ইস্যু বা স্লোগান বাঁচিয়ে যে দল বা নেতানেত্রী এগিয়ে থাকবেন, সেই দল, নেতা, নেত্রীই জননেতা বা নেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন। যেমন স্বাধীনতার আগে পরে গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলন, ১৯৪২ সালে ইংরেজ ভারত ছাড়ো ইত্যাদি ইস্যু বা স্লোগানগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল যা আজও আপামর ভারতবাসীর মনে শিহরণ জাগায়। আর স্বাধীনতার পরে ইন্দিরা গান্ধির গরিবি হঠাও স্লোগান। তবে ভারতবর্ষে গরিবি হঠেছে কিনা পরের কথা। কিন্তু এই স্লোগানের ‘ভাইব্রেশন’টা ছিল বেশ বড় আকারের। তবে সবুজ বিপ্লবে আমরা সফল হয়েছি। অনেক আগেই খাদ্যে আত্মনির্ভর আমরা (Mamata Banerjee)।

সে যাই হোক, ইস্যু নির্বাচনই সব থেকে বড় ব্যাপার এটা প্রমাণিত সত্য। তবে একটা কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, বাংলায় একালের সর্বশ্রেষ্ঠ জননেত্রী অবশ্যই মমতা বন্দোপাধ্যায়। কারণ তাঁর ইস্যু নির্বাচন হয় সঠিক। দেখুন ভারতীয় জনতা পার্টির বাংলা দখলের লক্ষ্য– বাংলাভাষা হল বাংলাদেশি ভাষা!  অর্থাৎ বিদেশি! ইস্যু হচ্ছে যে বা যারা বাংলায় কথা বলবে তারাই বিদেশি, অর্থাৎ বাংলাদেশি। বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষজনকে বাংলাদেশি বলে দেগে দিয়ে তাদের বাংলাদেশ পাঠিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলায় কথা বলায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর অত্যাচার চলছে।

Bangla Jago fb page: https://www.facebook.com/share/17CxRSHVAJ/

যারপারনাই হেনস্থা করা হচ্ছে কখনও কখনও অতি উৎসাহে বাংলায় কথা বলা মানুষগুলিকে রোহিঙ্গা বলেও দেগে দেওয়া হচ্ছে, রোহিঙ্গারা ও কি বাংলায় কথা বলে নাকি? তা হলে বাংলা দখলের এ কোন আত্মঘাতী খেলা? আচরণ? এই হচ্ছে বিজেপির ইস্যু নির্বাচন হিন্দি নির্ভর হিন্দুত্ববাদ। সুতরাং, এই স্লোগানে ২৬-এর নির্বাচনে চিড়ে ভিজবে না। পাশাপাশি মমতা বন্দোপাধ্যার স্লোগান, ১৯৫২ সালের পর আরও একবার ভাষা আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনি, অর্থাৎ বাংলা ভাষার সম্মান রাখতে, বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এই ইস্যুতে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষগুলো আজ এক ছাতার তলায় সমবেত। সে হিন্দু হোক আর মুসলমান। অনেক ইস্যুর পাশাপাশি এইসব ইস্যুতেই ২৬-এর নির্বাচন এই নির্বাচনে বাংলার খেয়ে, বাংলার পরে, বাংলার জলবায়ু গায়ে মেখে মাতৃদুগ্ধসম বাংলা ভাষার বিরোধীরা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে (Mamata Banerjee)।