চিত্র: সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: জয়ন্ত চক্রবর্তী: ডাঃ ইসতিযাক আহমেদ, এমবিবিএস (এমআরসিপি)। বয়স বছর ঊনষাটের মতো। বুক পকেট ঝোলাওয়ালা সাবেক বুশশার্ট পরেন এখনও। বুক পকেটের স্বচ্ছতা আড়াল করতে পারে না চারমিনানের প্যাকেটটিকে। পার্ক সার্কাসের কাছে কড়েয়া রোডে চেম্বার। লোকে বলে, অবর্থ্য তাঁর ডায়াগনিসিস। চোখ বুজে হাতের নাড়ি দেখে নাকি বলে দিতে পারেন কার কী রোগ হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা চেম্বারে রোগীদের ভিড় গিজ গিজ করে। ডাক্তারবাবুর দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট ভিড় সামলাতে হিমসিম খান। এক অ্যাসিস্ট্যান্টের নাম বনমালী। কসবার ওদিকে থাকে, অন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট আক্রামের বাড়ি সামসুল হুদা লেনে।
ডাক্তার বাবুর সোমবারের তিরিশ নম্বর অ্যাপয়েন্টমেন্টটি বালিগঞ্জ গার্ডেন্সের ছাপোষা রেলের অবসরপ্রাপ্ত কেরানি সুখময় বর্মনের। একতিরিশ নম্বর রোগী আবার মোমিমপুরের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম। কলকাতা ব্যাঙ্কশাল কোর্টের উকিলটিকে ডাক্তারবাবু কতদিন বলেছেন, বাড়ির কাছে একজন হাউস ফিজিশিয়ান ঠিক করতে। না, সিরাজুল সাহেবের গোঁ তিনি এই চিকিৎসকের কাছেই চিকিৎসা চালাবেন। তাতে যতই দুটো বাস পাল্টাবার কষ্ট থাকুক না কেন।
এহেন ডাঃ ইসতিয়াক আহমেদ বুধবার ভরসন্ধ্যায় আমাকে টেলিফোন করে বসলেন। স্ক্রিনের ইসতিয়াক সাহেবের নামটি ফুটে উঠতেই একটু অবাক হলাম। আমার পূর্ব পরিচিত ডাঃ ইসতিয়াক আহমেদ তো এই সময় ফোন করেন না। এখন তো তাঁর চেম্বার উপচে যাওয়ার কথা রোগীদের ভিড়ে। তাও বোতাম টিপে ফোনটা ধরলাম।
টেলিফোনের ওই প্রান্তে গলাটা কেমন যেন বিষন্ন ঠেকলো, সাহেব, শুভেন্দু অধিকারীর স্টেটমেন্ট শুনেছেন? দু’হাজার ছাব্বিশে ক্ষমতায় এলে নাকি একজন মুসলমান বিধায়ককেও উনি বিধানসভায় রাখবেন না। সব হিন্দু জনপ্রতিনিধি হবে। প্রাকটিস বন্ধ করে রাজ্য ছেড়ে চলে যাবো নাকি? আপনাদের সাংবাদিকদের কাছে অনেক আগাম খবর থাকে তো। তাই আপনাকে ফোন করলাম…।
শুভেন্দু অধিকারীর স্টেটমেন্ট আমি টেলিভিশনে শুনেছি, খবরের কাগজে পড়েছি। এই স্টেটমেন্টের ধাক্কায় আপাত নির্বিবাদী লোকসঙ্গীত গায়ক নাজমুল হকের ফেসবুক বিবৃতি আমার চোখ এড়ায়নি। এইরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে কান দেবেন না বলে ডাক্তারবাবুকে এই যাত্রায় নিরস্ত করলেও ভাবছি, বিজেপি’র বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এই ধরনের মন্তব্য করতে গেলেন কেন? শুভেন্দু অধিকারী কি জানেন না মহম্মদ ইলিয়াসের কথা? যিনি সারাজীবন হিন্দুদের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন নিজে মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও? শুভেন্দু অধিকারী জানেন না এই কথা আমি মানতে নারাজ। বিজেপি যাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বলে সামনে রেখে ২০২৬-এর বিধানসভায় লড়তে চলেছে, তিনি পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস জানেন না এটা ভাবতে আমার লজ্জা হচ্ছে। যতই চটিচাটা বলে আমাকে ব্যঙ্গ করুন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, আমি বলবোই যে পশ্চিমবঙ্গের স্পিরিটটিই বুঝতে ভুল করেছেন শুভেন্দুবাবু।
কবে যেন এক কবি লিখেছিলেন হিন্দু-মুসলমান এক বৃন্তের দুটি কুসুমের মতো অবস্থান করে? বিজেপি এখনও পর্যন্ত শুভেন্দুবাবুর স্টেটমেন্ট থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। সাতাশ শতাংশ ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই হয়তো। কিংবা বাঙালির অতি প্রিয় বিরিয়ানি শিল্পের আশি ভাগ কারিগর মুসলিম বলেই কি! মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব ফুটবল খেলতে মাঠে নামলেই যে গর্জন শোনা যায়, তার জেরেই কি! কে বলতে পারে মা দুর্গা যে জরির কাজ করা কাপড় পরেন তার অধিকাংশরই বুননের পেছনে থাকে মুসলিমরা।
শুভেন্দুবাবু বিধানসভা মুসলিম শূন্য করতে চাইছেন, তা করুন। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের গর্জন কিংবা এই কলকাতার প্রাণের স্পন্দন কি তিনি শুনতে পাচ্ছেন? ২০২৬-এ বিজেপি ক্ষমতায় আসবে কিংবা আসবে না তার বিচারের জন্য তো পশ্চিমবঙ্গের জনগণ রয়েছে। কিন্তু, শুভেন্দুবাবু কি সেই বেদিতেই কুঠারাঘাত করলেন না!