Bangla Jago Desk,জয়ন্ত চক্রবর্তী: কলকাতায় তখন আমাজন-ফ্লিপকার্ট আসেনি, ওলা – উবের তো দূরের স্বপ্ন, ট্যাক্সির মিটার ডাউন করলে এক টাকা পঁচিশ পয়সা। টাকাকড়ির হিসাবে সবে মেট্রিক প্রথা চালু হয়েছে। চল্লিশ সেরে এক মণ এর যুগ অনতি অতীত। বাজারে এক টাকায় ষোলো টি ডিম মেলে। পাঁঠার মাংসের কেজি দু টাকা। বাঙালির জীবনে তখন কলেস্টরোলা-ডায়াবিটিস জাকিয়ে বসেনি। রবিবার সকালে বাঙালি পাঁঠার দোকানে লাইন পড়ে। বাজারের পর পাড়ার চায়ের দোকানে ডাবল হাফ চা আর করকরে টোস্ট এর স্বাদ নিতে নিতে বাঙালি রাজা উজির মারে। পার্লামেন্ট এর সেন্ট্রাল হলে বসে একসঙ্গে কফি খান পন্ডিত জওহরলাল মেহেরু আর আচার্য জে বি কৃপালিনী।
এন সি চ্যাটার্জি তুখোড় বক্তৃতা দেন পার্লামেন্টে। বিধানসভায় তৎকালীন বিরোধী নেতা জ্যোতি বসুকে বেশি তিড়িংবিড়িং করে চেঁচাতে দেখলে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় মাইক্রোফোন এই বলেন – জ্যোতি, অত চিল্লিও না। শেষে রাতে আমার কাছেই আসবে ওষুধ নিতে। সে বড় আশ্চর্য সময়, বড় অলৌকিকও বটে। অগ্রজ সাংবাদিকদের মুখে শুনেছি সেই সব দিনের কথা। এক্ষন পত্রিকার মকশো করছেন কফি হাউসে সৌমিত্র চ্যাটার্জি আর নির্মাল্য আচার্য। অন্য টেবিল এ ইনফুসিওন কফির ঝড় বইয়ে দিচ্ছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শক্তি চাটুজ্জেরা।
মোহনবাগান – ইস্টবেঙ্গল এর সমর্থকরা বড় ম্যাচের শেষে অনাদির মোগলাই পরোটা খেতেন এক টেবিলে বসে। ভোটের সময় দেওয়াল রঞ্জিত হত – গড়তে দেশ, রুখতে চিন , কংগ্রেসকে ভোট দিন। তখনও রাজনৈতিক সৌজন্যতাবোধ ছিল। কোনও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের মেয়েকে ধর্ষণ করিয়ে দেওয়ার ধৃষ্টতা কেউ দেখানোর সাহস পর্যন্ত পেতো না। তখন জীবন অনেক সহজ সরল ছিল। নাইট আউট কাকে বলে ছেলে মেয়েরা জানতো না। ফেসবুক- ইউটিউব এর পারমিসিভ দুনিয়া তখন দূর অস্ত। জীবন যৌবন কিংবা সুন্দর জীবন এর মত নিষিদ্ধ বই তখন পড়তে হয় পাঠ্য পুস্তকের মোড়ক দিয়ে।
রেডিওতে প্রতি শনিবার আর রবিবার নিয়ম করে অনুরোধের আসর হয়। সকাল দশটায় ইন্দিরা দেবীর আমার ছোট্ট সোনা বন্ধুরা সব ভালো আছো তো – শোনার জন্যে যাদের বাড়িতে রেডিও আছে তাদের ওখানে ভিড় জমে যেত। কলেজে অধ্যাপক ক্লাস এ ঢোকার পর বিনুনি বাঁধা ছাত্রীর দল ক্লাসে প্রবেশ করত। সে এক আশ্চর্য সময় ছিল। জীবন অনেক সরল ছিল। এখন ভাবি অগ্রজ সাংবাদিকদের বলা পুরানো সেই দিনগুলো ভালো ছিল নাকি এখনকার সময়টা ভালো। জীবনের এই সময়টা দাঁড়িয়ে আমার উপলব্ধি – চলতি হাওয়ার পন্থী হওয়াই বোধহয় জীবন। জীবনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াটাই বোধহয় জীবন!