ad
ad

Breaking News

Delhi

দিল্লি জয়: বিজেপি ও আপের কাছে কার্যত অ্যাসিড টেস্ট

ভোট পর্ব শেষ হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। প্রার্থীদের ভাগ্য এখন বন্দি রয়েছে ইভিএমে।

Delhi victory: Practically an acid test for BJP and AAP

চিত্র: সংগৃহীত

Bangla Jago Desk: বিকাশ ঘোষ: ভোট পর্ব শেষ হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। প্রার্থীদের ভাগ্য এখন বন্দি রয়েছে ইভিএমে। বিভিন্ন মহলে চর্চা চলছে, দিল্লির মসনদে কে বসতে চলেছে তা নিয়ে। আবারও কি ফিরে আসছে আপ? না এবার বদল ঘটবে? শুধু রাজধানী দিল্লি নয়, দিল্লির ভোট নিয়ে চর্চা গোটা দেশে।

আ-সমুদ্র হিমাচলে দিল্লির এই ভোট নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কেউ বলছেন আবারও প্রত্যাবর্তন ঘটবে কেজিরিওয়ালের দলের আবার কেউ বলছেন এবার পরিবর্তন। এবার বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গড়ে উঠবে এমন কথাও বলছেন অনেকেই। আগামী কাল ভোট গণনা। ওইদিন বেলা গড়াতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে দিল্লির ক্ষমতায় কারা আসছে। মাঝে আর মাত্র একটা দিন। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রাজধানীর নাগরিকরা।

দিল্লি বিধানসভায় মোট আসন ৭০টি। ম্যাজিক ফিগার ৩৬ টি। যারা ওই ম্যাজিক ফিগার অঙ্কে পৌঁছতে পারবে তারাই বাজিমাত করবে। ইতিমধ্যে সামনে এসেছে বিভিন্ন সংস্থার করা এক্সিট পোল। তাতে অবশ্য ক্ষমতা দখলের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আবার বেশ কয়েকটি সংস্থার এক্সিট পোল জানান দিচ্ছে দিল্লিতে হতে চলেছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনার কথাও উঠে এসেছে। তবে এক্সিট পোল নিয়ে মানুষের ভরসা ও বিশ্বাস তেমন আছে বলে মনে হয় না।

বিভিন্ন নির্বাচনে এক্সিট পোল মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সে লোকসভা নির্বাচন বা বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে। যদি গত লোকসভা নির্বাচনের কথা ধরা যায় তাহলেও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল এক্সিট পোল কোন কাজে আসেনি। বিভিন্ন সংস্থার এক্সিট পোল গত লোকসভা নির্বাচনে জানান দিয়েছিল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। একেবারেই তা সঠিক হয়নি।

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ফের সরকার গড়ে উঠলেও সেই সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করতে পারেনি। চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতিশ কুমার এর উপর ভরসা করে এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে। আবার পশ্চিমবঙ্গের গত বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এক্সিট পোল ভুল প্রমাণিত হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসকে টেক্কা দেবে বিজেপি এমন আভাস মিলেছিল বিভিন্ন এক্সিট পোলে। বাস্তবে তা হয়নি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফেরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গত লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন এক্সিট পোল সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। আসল ফলাফলে ধারে কাছে পৌঁছায়নি তাদের এক্সিট পোল সমীক্ষা। বিভিন্ন মহলে এখন  প্রশ্ন কতটা নিরপেক্ষ এই সংস্থাগুলি। বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে ঝুঁকে থেকেই এই সমীক্ষা গুলি হয় এমন দাবি অনেকের। আর তাই প্রকৃত জনমতের  ভাবনা উঠে আসে না এই সমীক্ষাগুলিতে।

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কারা ক্ষমতায় আসছে? একাধিক সংস্থার এক্সিট পোল জানান দিচ্ছে  এবার বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গড়ে উঠতে চলেছে। ম্যাজিক ফিগার ৩৬ পেরিয়ে যাবে গেরুয়া শিবির এমন  আভাস মিলেছে  রিপাবলিক ভারত, ইন্ডিয়া টিভি, পি মার্কের সমীক্ষায়। জি নিউজের সমীক্ষা বলছে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। বিজেপি বা আপ যে কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে দিল্লিতে।

রিপাবলিক ভারতের সমীক্ষা বলছে আপ পেতে পারে ৩২ থেকে ৩৭ টি আসন। ৩৫ থেকে ৪০টি আসন পেতে পারে বিজেপি। ইন্ডিয়া টিভির এক্সিট পোল বিজেপিকে ৩৯ টি আসনে জেতাচ্ছে। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগার এর থেকে তিনটি আসন বেশি। পি মার্কের এক্সিট পোল বলছে বিজেপি পেতে পারে ৩৯ থেকে ৪৯ টি আসন এবং আপ পেতে পারে ২১ থেকে ৩১ টি আসন। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে  এবং একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দিল্লির ক্ষমতা দখল করতে চলেছে বিজেপি। বিভিন্ন সংস্থার এক্সিট পোলে কংগ্রেসের তেমন কোনো সাফল্যের দিক উঠে আসেনি। কংগ্রেসের ভোট শতাংশ বাড়লেও আসন  পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে না অধিকাংশ সংস্থা।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরও দেশের বিভিন্ন সংস্থা এক্সিট পোল করেছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভোট ফেরত সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছিল বিজেপি ৪০০ আসন পার করতে চলেছে। পরবর্তীতে ভোট গণনার পর দেখা যায় তার ধারে কাছে পৌঁছায়নি ‘পদ্ম’ শিবির। সেই ধাক্কা এখনও সামলাতে হচ্ছে বিজেপিকে। জোট সঙ্গীদের কাঁধে ভর দিয়ে সরকার চালাতে হচ্ছে নরেন্দ্র মোদিকে।

দিল্লির ক্ষেত্রে কী ঘটবে তা সময় বলবে। গত ৫ বছরে যমুনা দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। জেলে যেতে হয়েছিল দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। দিল্লি সরকারের আরও অনেক মন্ত্রীকে জেলে যেতে হয়। সিবিআই, ইডি সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার সাঁড়াশি চাপে নাজেহাল অবস্থা হয় দিল্লির শাসক দলের। মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন আতিশি মার্লেনা সিং। জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর আপ প্রধান প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন জনগণের সমর্থন নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসবেন। তার সেই চ্যালেঞ্জ ভোট প্রচারে ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে যেভাবে দলের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হয় বিভিন্ন সময়ে, দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় জর্জরিত করা, ভোটের প্রাক্কালে দলের একাধিক বিধায়কের দলত্যাগ, এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে লড়তে হয়েছে আপকে।

অন্যদিকে সর্বশক্তি দিয়ে নির্বাচনী  আসরে নেমেছিল বিজেপি। বিজেপির কাছে দিল্লি ভোটযুদ্ধ যেন প্রেস্টিজ ফাইট। দিল্লির মসনদে থেকে দেশ পরিচালনা করলেও রাজধানীর ক্ষমতা থেকে তাদের দূরে থাকতে হচ্ছে বছরের পর বছর। গত ২৭ বছর ধরে দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরতে পারিনি বিজেপি। নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, রাজধানীতে ক্ষমতা দখল করতে না পারা নিয়ে কাঁটা বিঁধতে হয় তাদের। এবারের বিধানসভা ভোট তাই বিজেপির কাছে তাদের সম্মান রক্ষার লড়াই। শেষ পর্যন্ত ইভিএম খুললে দেখা যাবে সম্মান বাঁচলো কিনা।

আগামী দিনের রাজনীতির অনেক কিছুই নির্ভর করছে দিল্লির ভোটের ফলাফল। যদি আবারও আপ ক্ষমতায় ফেরে সেক্ষেত্রে দেশের আঞ্চলিক দল গুলির মনোবল আরও চাঙ্গা হবে। যে অভিযোগ আঞ্চলিক দলগুলি দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে করছে, রাজনৈতিক স্বার্থে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করার তা আরও জোরালো হবে।  বিজেপির বিরুদ্ধে যে প্রতিহিংসার অভিযোগ বারবার করে বিরোধীরা তা আরও শক্তিশালী হবে।

বিজেপি বিরোধী শক্তি গুলির মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়বে। বিজেপি যে মহাশক্তিমান নয়, তা আরও একবার প্রমাণ হবে। অন্যদিকে লোকসভা নির্বাচনে বড় ধাক্কা খাওয়ার পর যদি দিল্লি ভোটেও বিপর্যয় হয় তাহলে বিজেপির কাছে অশনি সংকেত বয়ে আনবে। বিজেপির নেতৃত্ব নিয়ে যেমন দলের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠবে তেমনি তাদের দেশ পরিচালনার অধিকার নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।

আবার আপ দিল্লির কুর্শি পুনরায় দখল করতে না পারলে আগামীতে তাদের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে দাঁড়াবে। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পক্ষে দল ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে। প্রবল হবে দলের ভাঙন। তাঁর নেতৃত্ব প্রশ্নের মুখে দাঁড়াবে। জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব হারাবে আপ। এর প্রভাব পড়বে আপ পরিচালিত পঞ্জাবেও। সেখানেও আগামীতে ক্ষমতায় ফেরা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সব মিলিয়ে তাই দিল্লির বিধানসভা ভোটের ফলাফল দু’পক্ষের কাছেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে আগামীর রাজনৈতিক  ভবিষ্যতের কথা ভেবে।

লেখক- বিশিষ্ট সাংবাদিক)