ad
ad

Breaking News

Bangladeshi Passport Devaluation

বাংলাদেশি পাসপোর্টের অবমূল্যায়ন

সাধারণ বাংলাদেশি এর মূল্য দিচ্ছেন। ভিসা প্রত্যাখ্যানের সাথে তাদের সহ্য করতে হচ্ছে জাতীয় অপমান। খুব তাড়াতাড়ি যে সব সমস্যার সমাধান হবে, তার আভাস নেই।

Bangladeshi Passport Devaluation: Restrictions, Diplomatic Fallout

চিত্র: সংগৃহীত

রাজাগোপাল ধর চক্রবর্ত্তী: পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ নিজের জন্মভূমিতে বাস করতে পছন্দ করলেও আন্তর্জাতিক অভিবাসন একটি বিশ্বব্যাপী ঘটনা। অর্থনৈতিক সুযোগ, শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধি, পারিবারিক পুনর্মিলন এবং সংঘাত বা সহিংসতা থেকে পালানো প্রভৃতি কারণে মানুষ দেশ ছাড়ে। অন্য দেশের যাওয়ার অধিকার একটি স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার। কিছু দেশে, যেমন উত্তর কোরিয়ায় বিদেশ চলাচলের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আছে, তবু সেখান থেকে বেশ কিছু নাগরিক থেকে অন্যত্র পালাতে সক্ষম। ২০২৪ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন দফতরের হিসাব অনুযায়ী, ভারতে জন্ম নেওয়া ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিদেশে বসবাস করছেন (Bangladeshi Passport Devaluation)।

পৃথিবীর মধ্যে ভারতের অভিবাসন সব চেয়ে বেশি, তারপর আসে মেক্সিকো, চিন, ইউক্রেন, রাশিয়ান ফেডারেশন ও বাংলাদেশ। বিভিন্ন সমীক্ষায় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি অন্যত্র বাস করেন বলে অনুমান করা হলেও ২০২০ সালের জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে, বাংলাদেশের অভিবাসীর সংখ্যা ৭৪ লাখ বলা হয়েছে। কেউ কেউ বৈধভাবে বাংলাদেশ ছেড়েছেন, বেশিরভাগ অবৈধ উপায়ে দেশান্তরে। আর এর ফলে ক্রমাগত অবমূল্যায়নে বাংলাদেশি পাসপোর্ট। বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যান হচ্ছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। সব দেশের অভিবাসন দফতরের সামনে এসেছে বাংলাদেশি আতঙ্ক। নাগরিকদের গর্বও ক্ষুণ্ন হয়েছে।

বাংলাদশিদের ভিসা দেওয়ার আগ্রহ কমছে  

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, কেনিয়া, তানজানিয়া ও জাম্বিয়াসহ অনেক দেশ বাংলাদেশের নাগরিকদের ই-ভিসা বা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল (ভিওএ) সুবিধা দিয়ে থাকে। এর অনেকেই বিধিনিষেধ কঠোর করেছে, কেউ কেউ আবার বাংলাদেশিদের ভিসা-অন-অ্যারাইভাল (ভিওএ) পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, তাজিকিস্তান, ভিয়েতনাম, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এবং থাইল্যান্ড। আগামী দিনে এই তালিকা দীর্ঘায়িত হবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এই সহজ ভিসা চর্চা সীমিত বা পরিত্যাগ করার অনেক কারণ আছে। অনেক বাংলাদেশি পর্যটন/ভিজিট ভিসা নিয়ে অন্য দেশে যায়। সেখানে তারা কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়, এমনকী ভিসা মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও অবস্থান করে। সব দেশেই এই জিনিস ধরা পড়ছে।

ইন্দোনেশিয়া মানব পাচার উদ্বেগ থেকেই বাংলাদেশিদের ভিসা-অন-অ্যারাইভাল বাতিল করেছে। বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীরা জাল নথি ব্যবহার করছেন। ঠিক এই কারণেই  ইতালি ৬০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির ভিসা আবেদন মুলতুবি রেখেছে এবং অন্য দেশকে সতর্ক করেছে। ইতালি সরকার ‘আইন ডিক্রি নং ১৪৫’ জারি করে সমস্ত ওয়ার্ক পারমিট স্থগিত করে। সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশিদের সম্পর্কে সব অভিযোগ মেনে নিয়ে বলছে, বাংলাদেশ নাগরিকদের পুলিশি যাচাই রিপোর্টও যথাযত নয়। ভিজিট-টু-ওয়ার্ক ভিসা রূপান্তর তারা স্থগিত রেখেছে।

গত বছর জুলাই আন্দোলনের সমর্থনে কিছু বাংলাদেশি প্রবাসী প্রতিবাদ করায় সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশিদের জন্য সব ধরনের ভিসা বন্ধ করে দেয় (Bangladeshi Passport Devaluation)। বর্তমানে শুধুমাত্র দক্ষ বা হাই-প্রোফাইল ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। ওমান স্বল্প-দক্ষ কাজের ভিসা এবং নিয়মিত পর্যটন ভিসার উপর সাধারণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভিয়েতনাম। বর্তমানে লিবিয়া, সুদান, ব্রুনাই, মরিশাস ও ইরাকেও বাংলাদেশিদের জন্য সীমিত বা স্থগিত ওয়ার্ক ভিসা রয়েছে। এতকাল থাইল্যান্ড এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশিদের ই-ভিসা ইস্যু করত, এখন নিচ্ছে চল্লিশ পঞ্চাশ দিন।

২০১৮ সালে বাহরিনে একজন বাংলাদেশি নাগরিক স্থানীয় ইমামকে হত্যা করার পরে বাংলাদেশিদের আর সেখানে কর্মসংস্থান ভিসা দেওয়া হয় না। অনেক বাংলাদেশিকে ফেরতও পাঠানো হয়। দুর্নীতির অভিযোগের পরে মালয়েশিয়া ২০১৮ সাল থেকে আর বাংলাদেশিদের সেই ভাবে ওয়ার্ক পারমিট দেয় না। বর্তমানে শুধু রাবার, পাম তেল, চা ও কোকো চাষের শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা এখন মিশরের অন-অ্যারাইভাল ভিসা পান যদি তাদের পাসপোর্ট কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য বৈধ, ব্যাঙ্কে কমপক্ষে পাঁচ হাজার ডলার এবং সেই সঙ্গে তাদের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, শেনজেন রাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাপান, কানাডা বা নিউজিল্যান্ডের বৈধ এবং ব্যবহৃত ভিসা থাকে। বাংলাদেশের পাসপোর্টের পুরানো সম্মান আজ আর নেই। বাংলাদেশ পাসপোর্টের এই বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ সরকার বলছে ‘ভিসা ইস্যু প্রতিটি দেশের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত’, বাংলাদেশের এই ব্যপারে কিছু করার নেই।

ভারত বাংলাদেশিদের সীমিত ভিসা দিচ্ছে

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমইএ) নিয়ন্ত্রনাধীন বিদেশে ভারতীয় মিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে সমন্বয়ে অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে বিদেশদের ভিসা দিয়ে থাকে। ২০১৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে ভারত মোট ৪ কোটি ৯৮ লক্ষ ভিসা মঞ্জুর করেছিল। ২০২৩ সালে, ভারতে প্রায় ৯৫.২ লাখ বিদেশি পর্যটক এসেছিল ভিসা নিয়ে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৯৯.৫ লক্ষে। ভারত ২০২৩ সালে বাংলাদেশি নাগরিকদের ২০ লাখের বেশি ভিসা দিয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশিদের ইস্যু করা মোট ভিসার সংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৯০ লাখ। ভারত চিকিত্সার উদ্দেশ্যে ১৭১টি দেশের নাগরিকদের ই-ভিসা দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালে, ইস্যুকৃত মোট মেডিক্যাল ভিসার সংখ্যা (নিয়মিত এবং ই-ভিসা উভয়ই সহ) ৫.৯৭ লক্ষ। এর মধ্যে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ বাংলাদেশিদের জন্য ইস্যু করা মেডিক্যাল ভিসা।

২০২৪ সালে ভারত ৪৮২,৩৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মেডিক্যাল ভিসা দিয়েছে। এটি সেই বছর ভারত কর্তৃক প্রদত্ত সমস্ত মেডিক্যাল ভিসার প্রায় ৭০ শতাংশ। আগস্ট ২০২৪-এর পরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ২০২৩ সালের তুলনায় এটা ৩৯ শতাংশ কম। ভাষা সহ সান্নিধ্য, সাশ্রয়ী মূল্য এবং সাংস্কৃতিক কারণে বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে ভারতের চিকিৎসা পর্যটকদের বৃহত্তম। গত বছর আগস্ট মাসের আগে ভারত প্রায় প্রতিদিন গড়ে আঠ হাজার ভিসা দিয়ে এসেছে। পরিষেবা স্থগিত এবং আংশিক পুনরায় চালু হওয়ার পরে, এই সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় এক থেকে দেড় হাজার ভিসায় নেমে এসেছে (Bangladeshi Passport Devaluation)।

গত বছরের পাঁচই আগস্ট বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ভারত পর্যটক ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ করে। নিরাপত্তার কারণ এবং আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে কূটনৈতিক উপস্থিতি কমিয়েও আনা হয়। কয়েক সপ্তাহ পর ভারত কেবল মেডিক্যাল ভিসা এবং সীমিত ডাবল-এন্ট্রি ভিসা পুনরায় চালু করে। সম্প্রতি শারদীয় দুর্গাপুজো উপলক্ষে ঢাকাস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন কিছু অতিরিক্ত ভিসা দেয়। ভারত বলছে, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ছাড়া ভারতের পক্ষে পূর্ণ ভিসা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা সম্ভব হবে না। মানবিক কারণে সীমিত মেডিক্যাল ভিসা দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস নেই। তাদের ভিসা নয়াদিল্লির দূতাবাসের মাধ্যমে জারি হয়। আবেদনকারীদের সেই দূতাবাসগুলিতে ব্যক্তিগতভাবে হাজিরা দিতে হয়, তাতে ভারতীয় ডাবল এন্ট্রি ভিসা প্রয়োজন। স্টুডেন্ট ভিসার জন্য, কিছু দূতাবাসের একাধিক সাক্ষাত্কারের প্রয়োজন হয়। এর জন্য আবেদনকারীদের প্রায়শই দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতে থাকা আবশ্যক। বেশিরভাগ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ ঢাকা থেকে সরাসরি ভিসা ইস্যু করলেও, অনেক পূর্ব ইউরোপীয় দেশে আবেদনকারীদের নয়াদিল্লির মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। এযাবৎ, বেলজিয়ামের ভিসা ঢাকায় সুইডিশ দূতাবাস মারফত দেওয়া হত (Bangladeshi Passport Devaluation)।

এখন বেলজিয়ামের ভিসা শুধুমাত্র নয়াদিল্লি থেকেই ইস্যু করা হচ্ছে, সেখানকার ভিএফএস সেন্টারে ব্যক্তিগতভাবে জমা দিতে হয়। গত বছরের ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভিসা সঙ্কট মোকাবিলায় উনিশটি ইইউ দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তিনি নয়াদিল্লি থেকে ঢাকা বা প্রতিবেশী অন্য দেশে ভিসা কেন্দ্র স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছিলেন। বুলগেরিয়া কেবল বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সেন্টার ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে স্থানান্তর করেছে।

কোনও দেশই আর বাংলাদেশিদের ভরসা করতে পারছে না। তবু ইউনূস সরকারের কোনও হেলদোল নেই। ইউনূস মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ভারত বিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছেন। পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতেই যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তা বাংলাদেশ বোঝার জায়গায় নেই।

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স

আন্তর্জাতিক নাগরিকত্ব এবং আবাসন উপদেষ্টা সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস প্রতি বছর হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স নামক এক সূচক প্রকাশ করে। যে দেশের নাগরিক যত ভিসা-মুক্ত বা ভিসা-অন-অ্যারাইভালের সুযোগ পায়, বিশ্বজুড়ে তাদের পাসপোর্টের শক্তি বেশি, এই অভিমতেই তাদের সূচক। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) এর দেওয়া তথ্য থেকেই তাদের সূচক নির্মাণ।

সর্বশেষ হেনলি পাসপোর্ট সূচক (কিউ ৩/কিউ ৪, ২০২৫) অনুযায়ী প্রথমে আছে সিঙ্গাপুর, তাদের নাগরিক ১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত যাতায়াত করতে পারে। তারপর দক্ষিণ কোরিয়া, তারা যেতে পারে ১৯০টি দেশে ভিসা ছাড়া। তৃতীয় জাপান (১৮৯)। চতুর্থ জার্মানি, স্পেন, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ (১৮৮)। পঞ্চম অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস (১৮৭)। (দেশের নাগরিক কতগুলি দেশে ভিসা মুক্ত যেতে পারে, তা বন্ধনীর মধ্যে)। ভারতের স্থান ৮৫তম, ভারতীয়রা ৫৭টি দেশে ভিসা মুক্ত যেতে পারে। বাংলাদেশের স্থান ১০০তম, ৩৮টি দেশে নাগরিকরা ভিসা মুক্ত অবস্থায় যেতে পারে। সর্বশেষ ১০৬ নম্বরে আছে আফগানিস্তান।

অভিবাসন রেমিট্যান্স

অভিবাসীরা বিদেশ থেকে অর্থ পাঠান। এই রেমিট্যান্সই প্রাপক দেশগুলির বৈদেশিক মুদ্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স। প্রায়শই প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) মতো অন্যান্য আর্থিক প্রবাহকে ছাড়িয়ে যায় এই অভিবাসী অর্থ। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রায়শই রেমিট্যান্স পোশাক রফতানি আয়কে ছাড়িয়ে যায়।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, ভারত ২০২৪ সালে আনুমানিক ১২৯ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিদেশে থাকা নাগরিকদের পাঠানো অর্থে। মেক্সিকো দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাপক ছিল ৬৮ বিলিয়ন ডলার নিয়ে। চিন তৃতীয় স্থানে রয়েছে, তারা পেয়েছে ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ফিলিপাইন এবং পাকিস্তান যথাক্রমে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং ৩৩ বিলিয়ন ডলার পেয়ে রেমিট্যান্স পাওয়ার শীর্ষ পাঁচে রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই ২০২৪-জুন ২০২৫), বাংলাদেশ ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩০.০৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৫.৫ শতাংশ বৃদ্ধি। পাসপোর্ট সঙ্কট যে গভীর অর্থ সঙ্কট নিয়ে আসবে না, কে বলতে পারে (Bangladeshi Passport Devaluation)। 

উপদেষ্ঠা শাসনে পাসপোর্টের মর্যাদা আরও কমেছে

২০২২ সালের শ্রীলঙ্কায় আরাগালায়া আন্দোলনের পর ‘জেনারেল জেড বিক্ষোভ’ ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংরক্ষণ বিরোধী জুলাই বিপ্লব বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এই বছর নেপালের অভ্যুত্থানের পরে ‘জেন জেড প্রতিবাদ’ এশিয়া, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে অনুরূপ আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনটি দেশেই সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে এলে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক আশার সঞ্চার করেছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নোবেল বিজয়ী ডঃ. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিযুক্ত হলে, বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন ও শান্তির স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অনেকে। ইউনূস সংস্কার, মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেকে এক প্রগতিশীল বিকল্প হিসাবে উপস্থাপন করেছিলেন। তবুও, এই তথাকথিত ‘রূপান্তর’ এক বছরেরও বেশি সময় পরেও কোথাও দেখা দেয়নি।

কোথাও কোনও সংস্কার নেই, আইন-শৃঙ্খলা একেবারে তলানিতে। গণতান্ত্রিক শাসন বা নির্বাচন কবে শুরু হবে তার কোনও রোডম্যাপ নেই। ইউনুসের স্নেহধন্য ছাত্র বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) গঠন করে নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানাচ্ছে। সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা, গণতান্ত্রিক বৈধতার অভাব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংসদে জবাবদিহি করতে বাধ্য নয়। তারা কেবল বিদেশি দাতা, ‘উন্নয়ন অংশীদার’ এবং মুষ্টিমেয় ব্যবসায়িক সুবিধাভোগীদের কাছে দায়বদ্ধ।

এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করেই চলেছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, অভিযোগ করেছিলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটির দাবি প্রত্যাখ্যান করার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে অপসারণ প্রকৌশল নিয়েছে। বর্তমান সরকার বলছে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা চট্টগ্রাম করিডরে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ স্থায়ী বা একচেটিয়া প্রবেশাধিকার দেয়নি। তবু মার্কিন সামরিক বাহিনী চট্টগ্রাম এলাকার কাছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে ‘টাইগার লাইটনিং’, ‘প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল’ নামে যৌথ মহড়া পরিচালনা করেছে। কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে মার্কিন সেনারা ওই অঞ্চলে উপস্থিত রয়েছে (Bangladeshi Passport Devaluation)।

হাজার হাজার মানুষ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখন আর সুযোগের প্রতীক নয়, কোনও স্বপ্ন সে দেখায় না। বরং মানুষ এই পাসপোর্ট সাময়িক ত্যাগ বা বিসর্জন দিয়ে নতুন কোনও পরিচয়পত্রে বাঁচতে চায়। দুর্নীতি আকাশচুম্বী হয়েছে। ভিসা কাউন্টারে বাংলাদেশি আবেদনকারীদের ভিসা নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

ইউনূস সরকার গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। নোবেল পুরস্কার তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি এবং বৈধতা দিলেও, এতে কোনও কূটনৈতিক সুবিধা মেলেনি। তিনি পশ্চিমী দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত, তবু তারা আজ তার শাসনের ভরসায় নেই। নিরাপত্তা ঝুঁকি, নাগরিক অস্থিরতা, অপরাধ ও সন্ত্রাসী উদ্বেগের কারণে বেশ কয়েকটি পশ্চিমী দেশে বাংলাদেশ বা তার আওতাধীন কিছু অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে।

সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ রয়েছে। এটা বিদেশ ভ্রমণের লেভেল ৩ পরামর্শ। এর পরের পরামর্শ লেভেল ৪। ভ্রমণ করবেন না। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অপরাধ, সন্ত্রাস ও অপহরণের ঝুঁকির কারণে মার্কিনীদের যাওয়ার চূড়ান্ত সতর্কবার্তা রয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র বলছে, দেশজুড়ে বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভ ঘটতে পারে এবং কোনও সতর্কতা ছাড়াই তা সহিংস হয়ে উঠতে পারে (Bangladeshi Passport Devaluation)।

মার্কিন সরকারি কর্মচারীদের চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে এবং ঢাকার বাইরে ভ্রমণের জন্য বিশেষ সরকারি অনুমোদন লাগে। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিস (এফসিডিও) প্রয়োজনীয় ভ্রমণ ব্যতীত সমস্ত ভ্রমণের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিচ্ছে। কানাডা সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের ভ্রমণ নির্দেশিকাও দিয়েছে। ‘উচ্চ মাত্রার সতর্কতা’ অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েরা যাতে একা বা রাতে ভ্রমণ করেন, তার সুনির্দিষ্ট সতর্কতাও জারি আছে।

ইউনূস শাসনের প্রত্যাশার ফানুস চুপসে গেছে বিশ্ব জুড়ে। সাধারণ বাংলাদেশি এর মূল্য দিচ্ছেন। ভিসা প্রত্যাখ্যানের সাথে তাদের সহ্য করতে হচ্ছে জাতীয় অপমান। খুব তাড়াতাড়ি যে সব সমস্যার সমাধান হবে, তার আভাস নেই।