চিত্র : সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: জয়ন্ত চক্রবর্তী : ক’দিন আগে পাকিস্তানের একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া মেজর শফিকুল হক ডালিমের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। কে এই মেজর ডালিম? ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ও ১৫ আগস্টের সন্ধিস্থলে বাংলাদেশের স্রষ্টা শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার প্রধান মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এই ডালিম। পঞ্চাশ বছর আগে এই কাজের পুরস্কারস্বরূপ ডালিম বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হন। পরে মুজিব কন্যা শেখ হাদিনা ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লিগ মেজর ডালিমের ফাঁসির আদেশ দেয়। সেই সময় মেজর ডালিম আমেরিকা কিংবা লিবিয়ায় আত্মগোপন করেন। এই দুই সরকারের কাছে বারবার ডালিমকে ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ সরকার।
পাকিস্তানের ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেওয়ার মাধ্যমে তিনি ফের আত্মপ্রকাশ করলেন। এবার নিশ্চয়ই মেজর ডালিমকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হবে! আওয়ামী লিগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবং শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরই ডালিম আবার প্রকট হলেন। কী বললেন তিনি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে? তিনি বললেন, শেখ মুজিবকে মারার জন্যে তিনি এতটুকু অনুত্তপ্ত নন। পাকিস্তানকে দু’টুকরো করার ভারতীয় ষড়যন্ত্রতে শামিল হয়েছিলেন মুজিব। বাংলাদেশ যাতে ভারতের করদ একটি অঙ্গরাষ্ট্রে না পরিণত হয়, তার জন্যেই শেখ মুজিবকে হত্যা করেন তাঁরা। ডালিমের তত্ত্ব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু সহায়তা করেছিল নিজেদের স্বার্থে। বাংলাদেশকে কুক্ষিগত করার জন্য। বাংলাদেশের সব মানুষ কি মেজর ডালিমের সঙ্গে সহমত? এত কথা বলতাম না যদি না তথ্যচিত্র নির্মাতা এবং সাংবাদিক অভিজিৎ দাসগুপ্তর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ইনভিন্সিবল ব্রাভুরা’ তথ্যচিত্রটা না দেখতাম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুনা সেন অডিটরিয়ামে তথ্যচিত্রটি দেখলাম। দেখলাম, কী ভাবে ইন্ডিয়ান নেভির সাহায্যে পাকিস্তানের একটি সাবমেরিন থেকে বিদ্রোহী আট বাংলাদেশি নৌসেনা পাকিস্তানের চারটি বন্দর কব্জা করেছিল সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়। ১৯৭১-এর সেই মুক্তিযুদ্ধ যা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সহায়তায় ডানা মেলেছিল। তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে কী ভাবে কন্ডোমের সাহায্যে ডিটোনেটর আচ্ছাদিত করে অপারেশন চালানো হয়েছিল। তথ্যচিত্রটিতে আট নৌ সেনার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। সেদিনের অভিযানের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে সবাই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন যে সেদিন ভারত পাশে না থাকলে এই অভিযান চালানো সম্ভব হতো না। ভারতের ইস্টার্ন কম্যান্ড-এর জিওসি এনসি জগজিৎ সিং আরোরা যেদিন পাক জেনারেল নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের বন্ডে সই করাচ্ছেন। যেদিন পূর্ব পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ মাথাচাড়া দিয়েছিল, সেই দিনের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বরণ করেছেন বেঁচে থাকা বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধারা।
বিবিসি-র প্রাক্তন সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক তথ্যচিত্রটি দেখার পর মন্তব্য করলেন, ‘গানস অফ নাভারন’ ছবিটি দেখে আমরা মুগ্ধ হই, আর বিশ্বের সব থেকে বড় নাভাল অপারেশনের দিক থেকে আমরা মুখ ফিরিয়ে থাকি। অভিজিৎ দাসগুপ্তকে ধন্যবাদ অতীতের একটি ভুলে যাওয়া অধ্যায়কে তুলে ধরার জন্যে। এই তথ্যচিত্রটি দেখার পরও কি বাংলাদেশের মানুষ মেজর ডালিমের সঙ্গে একমত হবেন? ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটা জিও পলিটিক্স জড়িয়ে আছে সে বিচার করার জন্যে রাজনৈতিক পণ্ডিতরা আছেন। সাদা চোখে এই তথ্যচিত্রটি দেখার পর বলতে পারি, একটি জাতি অকৃতজ্ঞতার অন্য নাম হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ঢের আগেই কি সতর্ক হওয়া উচিত নয়? রাজাকারদের হাতে নাই বা তুলে দিলাম প্রতিবেশী রাষ্ট্রটিকে!