ad
ad

Breaking News

Dhanmondi

৩২ ধানমন্ডির সেই বাড়িতে আমি দুবার গেছি, ছুঁয়ে দেখেছি ইতিহাসকে

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন শিশু ধানমন্ডিড় ৩২ নবর বাড়িটি দেখিয়ে আর বলতে পারবেনা যে এখানে বসে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের জাল বাঁধা হয়েছিল। শুনলাম এই দুটি বাড়ি ভাঙার সময় নাকি ভারত নিরোধী স্লোগান উঠেছিল।

32 I have been to that house in Dhanmondi twice, I have touched history.

চিত্র : সংগৃহীত

Bangla Jago Desk: ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সেই ইতিহাস বিজড়িত বাড়িটিকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুধবার রাতে। এর আগে ৫ অগাস্ট তারিখে যেদিন বাংলাদেশে কার্যত ক্ষমতা হস্তানতরিত হল, তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে উড়ে এলেন ভারতে, সেদিনই ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিসংযোগ এর পর বাড়িটির কঙ্কাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হল বুধবার রাতে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে গেল একটি ইতিহাস।

এই বাড়িতেই বসবাস করতেন ফাদার অফ বাংলাদেশ বলে একদা খ্যাত শেখ মুজিবর রহমান। এখন তাঁকে ভারতের গুপ্তচর আখ্যা দেওয়া হচ্ছে, জাতির পিতা অভিধাটি বদলে জাতির ভিলেন আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে একটি জাতিকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছেন বাপ – বেটি দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান ও শেখ হাসিনা। তাই যে বাড়িতে বসে চক্রান্তের জাল বোনা হয়েছিল সেই বাড়ির অস্তিত্ব গুঁড়িয়ে ফেলে অন্ধ পৌরুষ এর আস্ফালন ঘটানো হল। একবারও ভেবে দেখা হলোনা ইরিহাসকে এই ভাবে বুলডোজার দিয়ে কি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়? একদা জাতীয় সৌধর তকমা পাওয়া বাড়িটি আজ আর নেই।

১৯৭৫ এর চোদ্দ অগাস্ট ও পনেরো অগাস্ট এর সন্ধিস্থলে এক ঘাতক বাহিনী শেখ মুজিবর রহমান কে হত্যা করেছিল এই বাড়িতেই। ৩২ ধানমন্ডি তার কিছুদিন পড়েই জাতীয় মিউজিয়ামের স্বীকৃতি পায়। আমি আমার সাংবাদিকতার আসাইনমেন্ট নিয়ে আটবার ঢাকায় গেছি এর মধ্যে দুবার গিয়েছি ৩২ ধানমন্ডিতে। সাংবাদিক সুলভ অনুসন্ধিস্থার জন্য নয়, নিছক দর্শক হিসেবেই ধানমন্ডিতে যাওয়া।

শুনেছিলাম ঘাতক বাহিনী শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর যে অবস্থা হয়েছিল , বাড়িটিকে সেই অবস্থায় অবিকৃত রাখা হয়েছে। ৩২ ধানমন্ডিতে ঘুরে দেখে দুবারই একটাই অনুভূতি হয়েছিল — কি ভাবে বাংলাদেশ রক্ষা করলো এই দলিল! ছায়া ঘেরা রাস্তা দিয়ে এগোতেই বাড়ির লোহার গেট। গেট পেরিয়ে বাড়িতে ঢোকার মুখে বারান্দায় কাঁচ দিয়ে ঘেরা একটি টেলিফোন বুথ। ঘটনার দিন মুজিবের জেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল নাকি এই ফোম বুথ থেকে ফোন করে সামরিক কু সম্পর্কে খবর নিতে গিয়েছিলেন। তাঁকে ঘাতক দল, যাঁরা এখন বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন, এই টেলিফোন বুথেই গুলিতে ঝাঁজরা করে দেন।

শেখ মুজিব — তোমরা কারা তোমরা কারা – রব তুলে যখন ল্যান্ডিং দিয়ে নামছিলেন তখনই তাঁকে হত্যা করা হয়। সিঁড়িতে রক্তের দাগ পর্যন্ত রাখা ছিল কাঁচের স্ল্যাব এর নিচে। মুজিব পত্নী যে পালঙ্ক তে বসেছিলেন, যেখানে তাঁকে হত্যা করা হয় সেই পালঙ্কটি পর্যন্ত অটুট। পানের বাটা নিয়ে বসেছিলেন মুজিব পত্নী। সেই পানের বাটাটিও রাখা ছিল বিছানার পাশেই। ছোট্ট শেখ রাসেল এই পালঙ্কের নিচে লুকিয়েছিল সেদিন ঘাতক এর দল তাকেও রেহাই দেয়নি। রসেলের রক্ত ছিটিয়ে পড়েছিল দেওয়ালে — তার দাগ প্রতীয়মান ছিল। আমার অবাক লেগেছিলো শেখ মুজিব এর লাইব্রেরি ঘরে ঢুকে। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সঞ্চিতা গ্রন্থ ভেদ করে একটি গুলি গিয়েছিলো।

সেই সেলফ এর ওপর রাখা সঞ্চিতা বইটিও অবিকৃত অবস্থায় রাখা ছিল। ছিল বলছি এই জন্যে যে বুধবার বুলডোজার এর নির্মম গ্রাসে সবটুকুই নিঃশেষ হয়ে গেছে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটির। বাংলাদেশের অভ্যান্তরীম রাজনীতি নিয়ে বলার কিছু নেই। সে দেশে শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি নিয়েও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এক মাগরিক হিসেবে বলার কিছু থাকতে পারেনা।

কিন্তু, ৩২ নম্বর ধান মন্ডি রোড এর এই বাড়িটি ধ্বংস করার জন্যে পুঞ্জিভূত আক্রোশ এর কারণ কি? আক্রমণকারীরা ৫ ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ হাসিনার সুধা সদন বাড়িটিকেও নিশ্চিহ্ন করেছে বলে শুনলাম। শোনা যাচ্ছে যে ৩২ নম্বর ও ৫ নম্বর বাড়িতে বসে মুজিব নাকি বহু ষড়জন্ত্রের জাল বিছিয়েছিলেন তাই সেই বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল, শেখ হাসিনার সুধা সদন এর ওপর নাকি আক্রোশ সেই কারণেই। তর্কের খাতিরে যদি এই ষড়যন্ত্রের কথা মেমেও নি তাহলেও কি এই দুটি ভবন নিশ্চিহ্ন করে ইতিহাসকে মুছে ফেলা কি হলনা?

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোন শিশু ধানমন্ডিড় ৩২ নবর বাড়িটি দেখিয়ে আর বলতে পারবেনা যে এখানে বসে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের জাল বাঁধা হয়েছিল। শুনলাম এই দুটি বাড়ি ভাঙার সময় নাকি ভারত নিরোধী স্লোগান উঠেছিল। চুযান্ন বছর আগে একটি শিশু রাষ্ট্রর জন্মই হতোনা সেদিন যদি ভারত না সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। অকৃতজ্ঞতার দলিল হয়ে থাকতে পারে এই ঘটনা। আর অকৃতজ্ঞতা?

৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে জাতির পিতার অস্তিত্বকে যারা অস্বীকার করতে পারে তারা যে ভারতের ভূমিকা অস্বীকার করনে তাতে আর বিস্ময়ের কি আছে! ভাবতে পারা যায় ভারতে কেউ মহাত্মা গান্ধীকে মুছে ফেলার জন্য তাঁর বসত বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। মোহাম্মদ ইউনুস নাকি শান্তির নোবেল পেয়েছিলেন! তাঁর কোনও পুলিশ কে দেখা যায়নি এই ধ্বংসলীলার সময়। ইউনুস সাহেবকে কুর্নিশ তাঁর এই শান্তির পড়াকাষ্ঠার জন্য। অশান্তি চাননি বলেই তো শান্তির দূত সেদিন ধ্বংসযজ্ঞের সময় কোনও পুলিশ পাঠান নি। বাহবা এর জন্যে প্রাপ্য মোহাম্মদ ইউনুসের!