Bangla jago Desk, মৌ বসু : ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয়ে অমাবস্যা পর্যন্ত এক পক্ষকাল সময়কে বলা হয় পিতৃপক্ষ। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে সূচনা হয় দেবীপক্ষের। মা দুর্গাকে আবাহন করার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে দেবী পক্ষ। তর্পণ শব্দটি এসেছে ত্রুপ থেকে। এর মানে সন্তুষ্ট করা। এমন বিশেষ দিনে, দেবতা, ঋষি ও পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে জল অর্পণ করা হয়। এই জল নিবেদন করে দেবতাদের সন্তুষ্ট করার পদ্ধতিতে তর্পণ বলা হয়। পিতৃপক্ষের প্রতিটি দিন পূর্বপুরুষকে স্মরণ করা হলেও পিতৃপক্ষের শেষ দিন তর্পণের মাধ্যমে পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানানো রীতি।
কেন মহালয়াতেই তর্পণ করা হয়?
মহালয়া চন্দ্রের তিথি মেনে পালন করা হয়। চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ, চারপাশে ঘোরে। সেইভাবে পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে ঘোরা বা আবর্তনকে এর সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে। পৃথিবীর বার্ষিক গতি অনুসারে ৬ ঋতুকে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ গতিতে ভাগ করা হয়েছে। মহালয়া তিথি দক্ষিণায়ণ গতিতে পালন করা হয়। এটাকে পিতৃপক্ষ বলে।এরপরই দেবীপক্ষের সূচনা হয়। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই সূর্যের আলোয় আলোকিত। পৃথিবীর দক্ষিণায়ণ গতির সময় শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে সূর্যের আলো সম্পূর্ণ ভাবে লয় হয়ে যায়। শুধু এই তিথিতেই এটা হয়। ওই সময়কালকে পিতৃতর্পণের সময় বলে ধরা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়।
পুরাণমতে ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসেন। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌঁছে যায়। বিশ্বাস করা হয়, পূর্বপুরুষেরা পিতৃলোক ছেড়ে উত্তরপুরুষদের কাছে আসেন, তখনই তাঁদের উদ্দেশে জল নিবেদনের মাধ্যমে তর্পণ করা হয়। তর্পণের সময় জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা ও ত্রিপত্রী ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন ধরনের তর্পণের মধ্যে রয়েছে ‘তিল-তর্পণ’ অর্থাৎ জল ও তিল একসঙ্গে নিয়ে পূর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে নিবেদন করা।