নিজস্ব ছবি
Bangla Jago Desk: মাধব দেবনাথ, নদিয়া: আমার কুঁড়ে ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না, অতি তাড়াতাড়ি মন্দির তৈরি করে দে। রাজাকে স্বপ্নাদেশ দেওয়ার পরে এক ফোটাও বিলম্ব না করে মন্দির তৈরি করেন রাজা। এরপর থেকেই ১৫ ফুট উচ্চতার হাড়িকাটে ১০৮ টি মহিষ বলি দিয়ে শুরু হয় জাগ্রত দেবী মহিষখাগীর বিশেষ পুজো অর্চনা।
[ আরও পড়ুন: দানা থেকে রক্ষা পেতে কপিলমুনির কাছে প্রার্থনা, তৎপর প্রশাসন]
নদীয়ার শান্তিপুর শহরের প্রায় ৩৫০ বছরের প্রাচীন মহিষখাগী কালীমাতার পুজোর ইতিহাস অনন্য। শোনা যায়, এই স্থানে এক তান্ত্রিকের হাতে পুজোর সূচনা হয়। পরবর্তীতে চ্যাটার্জী বংশের কাঁধে পূজোর দায়িত্বভার পড়ে কিন্তু দেবীর মন্দির না থাকায় স্বপ্নাদেশে মন্দির নির্মাণ করেন স্বয়ং নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। বর্তমানে স্থানীয় বারোয়ারির তত্ত্বাবধানেই হয়ে আসছে এই জাগ্রত কালী মায়ের পুজো।
প্রথমদিকে মন্দির ছিল একটি কুঁড়েঘরের আদলে। পূজোটি আগে ছিল চ্যাটার্জি বংশের দায়িত্বে, পরে তারা গত হলে বারোয়ারির হাতে দিয়ে যান পুজোর দায়িত্বভার। আগের মন্দির বহু প্রাচীন হয়ে যাওয়ায় এখন মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ হয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায়। শোনা যায় বাঙালি বিয়ের রীতি অনুযায়ী পুজো করা হয় মহিষীখাগী কালী মাকে। মাকে প্রথম পাটে তোলার সময় থাকে একাধিক নিয়মরীতি। পাটে তোলার পরে মন্দির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে সেদিন ভোররাতে হয় দধিমঙ্গল। তারপরে অমাবস্যা শুরু হলে বিয়ের রীতি মেনেই পুজো করা হয় দেবীকে। পরের দিন পালন করা হয় বাসী বিয়ের রীতি। বাসী বিয়ের রীতি অনুযায়ী পূজিত হন মা। পুজো সম্পন্ন হওয়ার পর কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া হয় মা কে নিরঞ্জনের জন্যে।
[ আরও পড়ুন: জবার চাহিদা মেটাচ্ছেন চাষি রাকেশ হালদার, প্লাস্টিকের জবা নয় টাটকা জবাতেই জোর]
পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে জানা যায়, বহু বছর আগে এই পুজোয় উৎসর্গ করা হতো মহিষকে,পরবর্তীতে পাঠা বলি। তবে অনেক বছর আগে একবার পূজার্চনা করতে দেরি হয়ে যাওয়াতে বলি উৎসর্গের সময় পেরিয়ে যায়, সেই দিন থেকেই মহিষখাগী কালী মায়ের পুজোতে কোনরকম বলি উৎসর্গ করা হয় না, সেই থেকেই বন্ধ হয়ে যায় মহিশখাগী মাতার পুজোতে বলি প্রথা। তবে নিরঞ্জনের আগে মাতা মহিষখীকে দেয়া হয় পান্তা ভাত, খয়রা মাছ এবং রুইমাছের ভোগ। যদিও এই পুজোকে কেন্দ্র করে সারা শান্তিপুরবাসী মেতে ওঠেন দীপাবলির আনন্দে। দেবীর নিরঞ্জনের ক্ষেত্র রয়েছে দেবী ও ভক্তদের মেলবন্ধন, ভক্তদের কাঁধে করেই নিরঞ্জনযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয় দেবী মহিষ খাগীকে, মনের ভক্তি ও মায়ের আবার আগমনীর আহ্বান জানিয়ে চিৎকার করতে থাকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ, আর রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকে অপেক্ষৃত ভক্তরাও।