ছবি : সংগৃহীত
Bangla Jago Desk, মৌ বসু: গানের কলি ভাঁজতে ভাঁজতেই আরশি বা আয়নায় নিজের দিকে একবার তাকাননি এমন মানুষ পাওয়া অসম্ভব। একটা সময় আয়না কেবল মুখ দেখার কাজেই ব্যবহার হত। কিন্তু এখন বদলেছে সেই চল। এখন সাজের পাশাপাশি ঘর সাজানো বা অন্দরসজ্জাতেও ব্যবহার হয় আয়না। ঘরের সাজ ফুটিয়ে তুলতে আয়নার তুলনা মেলা ভার। বসার ঘরের দেওয়ালে একটা বড়ো মাপের আয়না রাখুন। আয়না ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবে। দরজার পাশের দেওয়ালে রট আয়রনের ফ্রেমের ডিজাইনার আয়না টাঙালে দেখতে বেশ ভালো লাগে। ঘরে আলো কম ঢুকলে জানলার উল্টো দিকে রাখুন আয়না। জানলা দিয়ে আসা আলো আয়নায় প্রতিফলিত হয় বাড়িয়ে দেবে ঘরের ভেতরের আলো।
[ আরও পড়ুন – জানেন অম্বুবাচী পালনের সময় কী হয় কামাখ্যা মন্দিরে? কেনই বা গর্ভগৃহের দরজা আপনা আপনি বন্ধ হয়]
ঘরের সরু প্যাসেজে বড় পূর্ণ আকারের আয়না রাখুন তাতে জায়গাটা অনেক বড়ো লাগবে দেখবে। ছোটো ঘরে বড় আয়না রাখুন তাতে ঘর বড়ো দেখাবে। জানলাবিহীন ঘরে আয়না রাখলে ঘর যেমন বড়ো দেখায় তেমনই দেখায় আলোকিত। দেওয়ালে ছবি নয় আয়নার পেন্টিংস দিয়ে সাজান। আগেকার দিনে রাজপ্রাসাদে আয়নার ওপর আঁকা অসাধারণ সব ছবি শোভা পেত। আপনিও নিজের শিল্পীসত্তা প্রকাশ করুন। আপনিও আয়নার ওপর রঙবেরঙের ছবি আঁকুন। সুন্দর ফ্রেমবন্দি করে দেওয়ালে টাঙান।এখন হ্যান্ডপেন্ট, টেরাকোটা, রাজস্থানী, নানা রকম ফ্রেম পাওয়া যায়। তাতে বাঁধাই করে নিতে পারেন আয়না। তবে ঘর সাজালেই হবে না। নিয়মিত আয়নার যত্নও নিতে হবে। না’হলে সব সৌন্দর্যই ফিকে। আয়নায় খুব তাড়াতাড়ি ধুলো জমে তাই রোজ নরম কাপড় দিয়ে মুছবেন। যেখানে সেখানে আয়না রাখবেন না। আয়নায় কোন জিনিস প্রতিফলিত হচ্ছে তা গুরুত্বপূর্ণ। সেই জিনিসের আকর্ষণ বাড়ায়। তাই বুঝেশুনে আয়না লাগান।
[ আরও পড়ুন – স্নানযাত্রাকে ভক্তের ভগবান পুরুষোত্তম জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসাবে পালন করা হয়]
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী কীভাবে ঘরে রাখবেন আয়না:
বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী ভুল জায়গায় আয়না রাখলে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হয়। কখনো ২টি আয়না একসঙ্গে একে-অপরের বিপরীতে রাখবেন না। নেতিবাচক চিন্তা তৈরি হয়। মাটি থেকে ৪-৫ ফুট ওপরে আয়নাকে রাখুন। ঘরের মধ্যে বিরাট টেবিল বা ড্রেসিং টেবিল খাটের সঙ্গে রাখা শুভ বলে মানা হয়। কিন্তু এমন ভাবে আয়না রাখুন যাতে ঘুমের সময় শরীরের কোনো অংশ যাতে প্রতিফলিত না হয় আয়নায়।
চতুর্ভুজ (স্কোয়্যার বা রেক্ট্যাঙ্গুলার) আয়না কেনা শুভ। ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার বা অদ্ভুত আকারের আয়না কিনবেন না।
জানলার বাইরে যদি বাগান, খোলা আকাশ, মাঠঘাট থাকে তবে জানলার বিপরীতে আয়না রাখুন আপনার গৃহকোণ ভরে উঠবে ইতিবাচক শক্তিতে। যদি মনে হয় নেতিবাচক শক্তি আছে বাড়িতে তা’হলে জানলার বাইরে আয়না রাখুন, সব নেতিবাচক শক্তি আপনার বাড়ি থেকে শুষে নেবে আয়না। মূল প্রবেশপথের সামনে কখনো আয়না রাখবেন না। ডাইনিং রুমে ডাইনিং টেবিলের সামনে আয়না রাখুন। ডাইনিং টেবিল আয়নায় যেন প্রতিফলিত হয়। এটা খুবই শুভ। সুস্বাস্থ্য, খাবার ও সম্পদ বৃদ্ধি করে। বাড়িতে ক্যাশ বা নগদ টাকার লকার থাকলে, তার সামনে একটা স্বচ্ছ আয়না রাখুন। সম্পদ বৃদ্ধি হবে। অন্ধকারের মধ্যে আয়না রাখবেন না। অত্যন্ত অশুভ বলে মানা হয়। বাথরুমে উত্তর বা পূর্ব দিকের দেওয়ালে আয়না রাখুন। বাড়িতে দেওয়ালঘড়ি, কাচের শো-পিস, কাচ বা ধাতুর ঘর সাজানোর জিনিস শুধু উত্তর বা পূর্ব দিকের দেওয়ালে রাখুন। টেলিভিশন স্ক্রিনেও আয়নার মত প্রতিফলন হয় তাই বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী ঘরের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখা শুভ। না ব্যবহার করলে টেলিভিশন কাপড় দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন। বাড়ির মধ্যে কোনো দিক কাটা থাকলে তা আয়না রেখে মেরামত করা যায়। আয়না দেওয়ালে টাঙালে আপনার দিকে তা যেন কোনোভাবেই ঝুলে না থাকে। সিঁড়ির সামনে আয়না কখনো রাখবেন না। জানলা বা দরজায় কাচ ব্যবহার করলে তা যেন কখনো স্বচ্ছ না হয়। বাচ্চারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে যদি তাদের পড়ার টেবিলের সামনে আয়না থাকে। অন্দরসজ্জায় আয়নার প্রচণ্ড গুরুত্ব। আয়না যেমন ঘরকে বড়ো দেখাতে সাহায্য করে তেমনই বাস্তু অনুযায়ী ঠিক জায়গায় আয়না রাখলে তা ইতিবাচক শক্তি বাড়িয়ে তোলে। নেতিবাচক শক্তিকে বাড়ির থেকে দূর করে দেয়।
[ আরও পড়ুন – অপার রহস্যে ঘেরা জগন্নাথ দেব, কী মিথ রয়েছে পুরীর মন্দিরের রত্নভাণ্ডারকে ঘিরে ]
সব সময় ঘরে পূর্ব ও উত্তর দিকের দেওয়ালে আয়না রাখবেন। ড্রেসিং রুম আর বাথরুম বাদে ডাইনিং এরিয়ায় ডাইনিং টেবিলের বিপরীতে আয়না রাখবেন যাতে গোটা পরিবার খেতে বসলে তা যেন প্রতিফলিত হয়। বাস্তু অনুযায়ী, এমন ভাবে আয়না রাখলে তা সমৃদ্ধি আনবে। পরিবারের লোকেদের মধ্যে ভালোবাসা বাড়িয়ে তুলবে। নিখুঁত আয়না ব্যবহার করবেন। আয়নায় যাতে কোনো দাগ না থাকে। আয়নায় কাচের ওপর টিপ বা অন্য কিছু সেঁটে রাখবেন না। দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মাস্টার বেডরুম রাখা শুভ। এই ঘরে আয়না রাখবেন না তাহলে অস্থিরতা, অশান্তি বাড়বে। শান্তিপূর্ণ জীবন আর সুস্বাস্থ্যের জন্য বেডরুমে আয়না রাখবেন না। একান্তই যদি আয়না থাকে বেডরুমে তা’হলে তা ঢেকে রাখুন। কোনো ভাবে যাতে বিছানা বা বিছানায় ঘুমন্ত মানুষের শরীর প্রতিফলিত না হয় আয়নায়। অনেক সময় আলমারিতেও আয়না থাকে। তেমন হলে সেটাও কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবেন। বেডরুমে ঢোকার দরজাও যাতে আয়নায় প্রতিফলিত না হয়। অনেকে বেডরুমে ডিজাইনার খাট রাখেন। ডিজাইনার খাটে আয়না ফিট করা থাকে। খাটে মাথার কাছে আয়না থাকলে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। একইসঙ্গে ফলস সিলিঙে আয়না থাকলে তাতে প্রতিফলিত হয় খাট ও মেঝে। মানসি অস্থিরতা, চঞ্চলতা, সমস্যা বেড়ে যায় এতে। বেডরুমে কখনো ভাঙা বা জঙ ধরা আয়না রাখবেন না তাতে নেতিবাচক শক্তি বেড়ে যায়। বেডরুমে যদি ড্রেসিং টেবিল থাকে তবে আয়না যুক্ত ড্রেসিং টেবিল ঘরের উত্তর বা পূর্ব দিকের দেওয়ালে রাখুন। মূল দরজা দিয়ে ঢুকেই যদি বসার ঘর হয় তবে মূল দরজার উলটো দিকে কখনো আয়না রাখবেন না তাতে ইতিবাচক শক্তি আপনার বাড়িতে ঢোকার বদলে আয়নায় প্রতিফলিত হয় বাইরে বেরিয়ে চলে যাবে। বসার ঘরের জানলার বিপরীতে উত্তর অথবা পূর্ব দিকের দেওয়ালে আয়না রাখুন। এতে আলোকিত লাগবে ঘর। মূল দরজার সামনে আয়না রাখবেন না। তাতে ইতিবাচক শক্তি বেরিয়ে যায়। বাথরুমে যেদিকে আলো সেদিকে আয়না রাখুন।
অফিস বা দোকানে নগদ টাকা রাখার লকারের বিপরীতে আয়না রাখবেন। এতে সম্পদ বাড়ে। লকারের মধ্যেও আয়না রাখতে পারেন, সেক্ষেত্রে নিয়মিত আয়না পরিষ্কার করবেন। কোনো দাগ যাতে না থাকে। কাজের টেবিল কোনো ভাবেই যেন আয়নায় প্রতিফলিত না হয় তাতে কাজের চাপ প্রচুর বাড়বে।