Bangla Jago Desk: মৌ বসু: কালীক্ষেত্র কালীঘাট মন্দির একান্ন পীঠের অন্যতম এক মহাশক্তিপীঠ। সকল পীঠস্থানের শ্রেষ্ঠ। কালীঘাটের দেবী মহাশক্তি স্বরূপিনী দক্ষিণাকালী। পীঠের রক্ষক ভৈরব নকুলেশ্বর। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে বড়িশার জমিদার ছিলেন সাবর্ণ গোত্রের সন্তোষ রায়চৌধুরী। শাক্ত সন্তোষ রায়চৌধুরী ছিলেন মাকালীর একনিষ্ঠ ভক্ত। তিনি নিয়মিত গঙ্গাস্নান করতেন। আদিগঙ্গার বুকে নিয়মিত নৌকাবিহার করতেন। আদিগঙ্গার ২ পাশে তখন ছিল ঘন জঙ্গল। একদিন বজরায় চেপে নৌকা বিহার করার সময় কাঁসরঘণ্টা বাদ্য ও শঙ্খধ্বনি শোনেন জমিদার সন্তোষ রায়চৌধুরী।
তিনি মাঝিদের নির্দেশ দেন শব্দ শুনে সেদিকে নৌকার দাঁড় বইতে। পাড়ে নৌকা ভিড়লে জমিদারবাবু সকলের সঙ্গে জঙ্গলে ঢোকেন। যেখান থেকে শব্দ আসছিল সেখানেই যান। রহস্যঘেরা পরিবেশে ছোট্ট মন্দিরে প্রদীপের আলোয় একমনে পুরোহিতকে আরতী করতে দেখেন সকলে। তিনি জমিদার সন্তোষ রায়চৌধুরীকে জানান, আদিগঙ্গার দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তে সতীর ডান পায়ের ৪টি আঙুল পড়েছিল। সেই থেকে এখানে দেবী দক্ষিণাকালী বিরাজিত। সে সময় সন্তোষ রায়চৌধুরী স্থির করেন ছোট্ট মন্দির ভেঙে বড়ো আকারে মায়ের পাকা মন্দির তৈরি করে দেবেন। ১৭৯৮ সালে শুরু হয় বর্তমান আটচালা মন্দিরের নির্মাণ কাজ।
বড়িশার জমিদার সন্তোষ রায়চৌধুরী দেবীর সেবার জন্য মন্দিরের চারপাশে আরও জমি দেবত্র সম্পত্তি হিসাবে দান করেন। তবে মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে দেখে যেতে পারেননি সন্তোষ রায়চৌধুরী। তাঁর অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করেন ছেলে রামনাথ ও ভাইপো রাজীবলোচন রায়। ১৮০৯ সালে কালীঘাটের মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৭০০-৭১ খ্রিস্টাব্দে কালীঘাটের আদিগঙ্গার ঘাট তৈরি করেন হুজরিমল্ল নামে এক পঞ্জাবী সেনা।
১৮ শতকে গোরক্ষকপুরনিবাসী টিকা রায় নামে এক কালীভক্ত বিত্তশালী ব্যক্তি মন্দিরের তোরণদ্বার, নহবতখানা ও ভোগঘর তৈরি করিয়ে দেন। মন্দিরের নাটমন্দির গড়ে তোলেন আন্দুলের জমিদার রাজা কাশীনাথ রায়। এক সময় মন্দিরে মাটির প্রদীপ জ্বলত। কখনো কেরোসিন কুপির টিমটিমে আলো। এরপর ব্যবহার হত কেরোসিনের লণ্ঠন ও হ্যাজাক। ১৮৭৯ সালে ছাপরানিবাসী ব্যবসায়ী গোবর্ধন দাস মায়ের মন্দিরে গ্যাসের আলোর ব্যবস্থা করে দেন।