চিত্র : নিজস্ব গ্রাফিক্স
Bangla Jago Desk: মাধব দেবনাথ, নদিয়া: নদিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমেছে শোকের ছায়া। হঠাৎ করে অকালে ঝরে গেল উদীয়মান যুব নেতা রাকেশ পারুয়ের জীবন। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা ও কল্যাণী হরিণঘাটা ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মোহনপুর কার্যালয় থেকে। রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছিল বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই তরুণ নেতার এমন করুণ পরিণতিতে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে গোটা নদিয়া জেলা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহনপুর বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত ছাত্র পরিষদের কার্যালয়ের মধ্যে থেকে রাকেশ পারুয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান স্থানীয় কর্মীরা। সঙ্গে সঙ্গে শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এবং অনুগামীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তড়িঘড়ি তাঁকে নিয়ে যান হাসপাতালে, কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পরিবারের বক্তব্য, রাকেশ কেন আত্মহত্যার মত চরম সিদ্ধান্ত নিল, তা তারা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। রাজনীতিতে তার ক্রমোন্নতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি কিছু ব্যবসার সাথেও যুক্ত ছিলেন। তবে সম্প্রতি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলেই দাবি একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রের। শোনা যাচ্ছে, ব্যবসায়িক ক্ষতির কারণে আর্থিক চাপও বাড়ছিল তার ওপর। প্রশ্ন উঠছে, সেই চাপই কি তাঁকে ঠেলে দিল আত্মহত্যার দিকে?
নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে রাকেশ পারুয়ের ভুমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যুব সমাজের কাছে একজন সংগঠক ও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন। তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতেন। এমন একজন নেতার এই আকস্মিক মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলেও তৈরি হয়েছে চরম বিস্ময় ও উদ্বেগ। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন —রাজনীতির চাপে, নাকি ব্যক্তিগত হতাশায় আত্মহত্যা?
পুলিশ ইতিমধ্যে দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে কল্যাণীর মর্গে। রিপোর্ট হাতে আসার পরই স্পষ্ট হবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। পুলিশের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার সম্ভাবনা থাকলেও, এর পেছনে অন্য কোনো চাপ, ষড়যন্ত্র বা অনৈতিক কার্যকলাপ ছিল কিনা, সে বিষয়েও খতিয়ে দেখা হবে।
রাকেশ পারুয়ের মৃত্যুতে যেন থমকে গেছে গোটা এলাকা। কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার। তার মা-বাবা, স্ত্রী ও ঘনিষ্ঠদের চোখে শুধুই শোক আর প্রশ্ন — এই বয়সে, এমন সম্ভাবনাময় জীবন কি এমন করেই থেমে যাবে?
এই মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবারের নয়, নদিয়ার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করল। এখন সবার একটাই প্রত্যাশা — ময়নাতদন্তে উঠে আসুক প্রকৃত সত্য, এবং যদি কোনো চাপ বা ষড়যন্ত্র থাকে, তবে দোষীরা শাস্তি পাক।