ad
ad

Breaking News

Srirampur kalipuja

শ্রীরামপুরের জাগ্রত মা শ্মশানকালীর পুজোর এবার ১৭৫ বছরে পদার্পণ

যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত ভক্তিভরে এবং শ্রদ্ধা সহকারে পালিত হয়ে আসছে হুগলির শ্রীরামপুরের বল্লভপুর শ্মশান মায়ের আরাধনা। এবছর বল্লভপুর শ্মশানকালীর পুজো ১৭৫ বছর পা দিল।

Srirampur's Awakened Mother Shmshankali's puja is now 175 years old

Bangla Jago Desk, তরুণ মুখোপাধ্যায়, হুগলি: যুগ যুগ ধরে অত্যন্ত ভক্তিভরে এবং শ্রদ্ধা সহকারে পালিত হয়ে আসছে হুগলির শ্রীরামপুরের বল্লভপুর শ্মশান মায়ের আরাধনা। এবছর বল্লভপুর শ্মশানকালীর পুজো ১৭৫ বছর পা দিল। এই পুজোর ইতিহাস সম্বন্ধে জানা যায় ১৭৫ বছর আগে ভাগীরথী তীরবর্তী এই এলাকাটা ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। চারিদিকে ঝোপ ঝাড়, হিংস্র  জীবজন্তুর আনাগোনা, সন্ধ্যার পর থেকে হিংস্র শিয়ালরা দখল নিত এলাকা, গা ছমছমে পরিবেশ, মানুষের আনাগোনা একদমই ছিল না বললেই চলতো। এক মাত্র এক সন্ন্যাসীর আশ্রম ছিল এখানে। জনশ্রুতিতে জানা যায়, সেই সময় বল্লভপুর এলাকায় রাজেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলে এক ব্যক্তি বাস করতেন। সেই ব্রাহ্মণই সেখানে মৃন্ময়ী মায়ের মূর্তি তৈরি করে মা কালীর পুজো অর্চনা শুরু করেন। সেই সময় থেকেই শ্মশান মায়ের আরাধনা শুরু হল, তা আজও অমলিন।

[আরও পড়ুনঃ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার হৈচৈ ভারতের স্বার্থে নয়

নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভক্তির এবং শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে মায়ের পুজো। সেই সময় প্রবীণ ব্রাহ্মণকে যিনি সর্বত্রভাবে সাহায্য করেছিলেন, তাঁর নাম ছিল বাবুলাল, পেশায় একজন ডোম। সেই বাবুলাল ছিল মা কালীর একান্ত ভক্ত। তারপর ভাগীরথী দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। রাজেন্দ্রবাবুর মৃত্যুর পর বল্লভপুর গ্রামের মানুষেরা কিন্তু জারি রাখেন শ্মশান মায়ের আরাধনা। পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, যেহেতু মায়ের মন্দির ছিল বল্লভপুর শ্মশান ঘাটের ঠিক পাশেই, তার জন্যই এখানকার মা শ্মশানকালী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন।

যত যুগ গিয়েছে, এখানকার মায়ের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়েছে হুগলির সীমানা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্তের আগমন ঘটে বল্লভপুর শ্মশানকালী মায়ের মন্দিরে। পুজোর দিন সারারাত নিষ্ঠাভক্তি ভরে মায়ের পূজা-পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আগত দর্শনার্থীরা মায়ের আশীর্বাদ নেন। কথিত আছে, এখানকার মা এতটাই জাগ্রত যে, যদি কোনও ভক্ত সারাদিন উপোস করে মায়ের পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে পুজো দেন, তবে তাঁর মনস্কামনা পূর্ণ হবেই। যেহেতু এ বছর শ্মশান কালীপুজো ১৭৫ বছরে পা দিল, তাই পুজোর প্রাক্কালে এলাকার নগরবাসীদের নিয়ে একটি বিশাল শোভাযাত্রা শ্রীরামপুর শহর পরিক্রমা করে। পুজো কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে এ বছর পুজো উপলক্ষে মন্দির প্রাঙ্গণে বসবে ভক্তিমূলক সঙ্গীতের আসর। এছাড়াও এই এলাকায় যে সমস্ত বয়স্ক মানুষরা আছেন, তাঁদের পুজো উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করা হবে ১৭৫ বছরের পুজো উপলক্ষে।

[আরও পড়ুনঃ Rajasthan: রাজস্থানে নৃশংস ঘটনা! ৫০-এর বিউটিশিয়ানকে খুন করে দেহের ৬ টুকরো

অতীতে এই পুজো উপলক্ষে এখানে বসত পাঞ্জা খেলার আসর। বিজয়ীকে দেওয়া হতো আকর্ষণীয় পুরস্কার। এছাড়াও শ্মশানকালী মায়ের পুজো উপলক্ষে এখানকার বিচিত্রা অনুষ্ঠানের খ্যাতি ছিল জেলা জুড়ে। স্থানীয় জলকল মাঠে অনুষ্ঠিত হতো সারারাতব্যাপী সঙ্গীতানুষ্ঠান। যা ছিল সংস্কৃতি প্রেমিক মানুষদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তৎকালীন ভারত বিখ্যাত কিংবদন্তি শিল্পীরা যেমন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, আরতি মুখোপাধ্যারা  শ্মশানকালী পুজোয় এসে সঙ্গীত পরিবেশন করে গিয়েছেন। তবে অতীতের সেই দিন আর না থাকলেও পুজো কিন্তু এখনও হয়ে আসছে সমস্ত আচার-বিধি মেনে। প্রতিবছর মায়ের আশীর্বাদ নিতে আগে যেমন আসতেন, তেমনি এখনও লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়  শ্রীরামপুরের বল্লভপুরের শ্মশান মায়ের আরাধনায়।