চিত্র : সংগৃহীত
গত ১১ নভেম্বর থেকে আরজি করের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। টানা দু’মাস ধরেচলেশুনানি। এই মামলায় আগেই চার্জশিট দিয়েছিল তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। সেখানে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকেই একমাত্র অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। আদালতে তার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
[আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ায় তাঁকে ‘বিষাক্ত’ খাবার দেওয়া হয়েছিল, দাবি জোকারের]
সিবিআইয়ের দাবির বিরোধিতা করে আদালতে ধৃতের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তিনি এই ঘটনার সঙ্গে যুক্তই নন। গোটা ঘটনাটি সাজানো। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে অভিযুক্তকে। বুধবারই আদালতে ধৃতের আইনজীবী জানান, নির্যাতিতার শরীরে কোনও ধস্তাধস্তির চিহ্ন মেলেনি। তাঁর পোশাকও অক্ষত ছিল। ফলে সিবিআই যা বলছে, তা সঠিক নয়। সিবিআইয়ের দেওয়া তথ্যপ্রমাণও পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করেন অভিযুক্তের আইনজীবী।উভয়পক্ষেরসওয়াল-জবাবশোনারপরশুনানিশেষহয়বৃহস্পতিবার। এবার রায়দান। নাগরিক সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়া এই ঘটনার রায়দান হবে আগামী ১৮ জানুয়ারি।
আরজি কর-কাণ্ডে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনহওয়ারপর শিয়ালদা আদালতেগত ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া৷ প্রত্যেক দিন চলে শুনানি। ঘটনার ৮৭ দিন এবং সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশের ২৮ দিনের মাথায় ওই মামলায় চার্জ গঠন হয়েছিল।সিবিআইয়ের চার্জশিটে একমাত্র অভিযুক্ত হিসেবেনামছিল সঞ্জয় রাই-এর।
গত ৯ অগস্ট আরজি করের জরুরি বিভাগের চারতলায় সেমিনার হল থেকে মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাঁকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগে সেই রাতেই কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। ঘটনার ৫৮ দিন পর গত ৮ অক্টোবর সিবিআই এই মামলায় প্রথম চার্জশিট জমা দিয়েছিল আদালতে। চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছিল, ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারই যে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় জড়িত, তার একাধিক প্রমাণ মিলেছে। মত্ত অবস্থায় সঞ্জয় রাই ধর্ষণ ও খুন করে বলে উল্লেখ করা হয়। সে একাই এই কাজ করেছে বলে উল্লেখ করা হয় চার্জশিটে। সিবিআই জানায়, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জানা গিয়েছে, গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চারতলায় গিয়েছিল ধৃত। যে জায়গাটি ঘটনাস্থল। ভোর ৪টে ০৩ মিনিট থেকে ভোর ৪টে ৩১ মিনিট— এই ২৮ মিনিটে অপকর্ম করেছিল ধৃত। কলকাতা পুলিশও দাবি করেছিল, ভোর ৪টে থেকে সাড়ে ৪টের মধ্যে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সিবিআই-এর বক্তব্য মিলে যায়।
কলকাতা পুলিশ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করেছিল একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইকে। সিবিআই তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বা অন্য কারও যোগসূত্র আছে বলে জানতে পারেনি। সিবিআই-এর চার্জশিটে প্রমাণ হয়, কলকাতা পুলিশ যে ভাবে তদন্ত চালাচ্ছিল, তাতে কোনও ভুল ছিল না। অর্থাৎ ঠিক পথে তদন্ত চালিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কলকাতা পুলিশ যে ঠিক পথে তদন্ত করছিল তাতে সিলমোহর দেয় সিবিআই।তদন্ত চালিয়ে সিবিআই ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে মোট ১১টি ‘প্রমাণ’-এর উল্লেখ করে চার্জশিটে।
আরজি কর-এর ঘটনার তদন্ত কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআই-এর হাতে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতজানায়, রাজ্যের হাতে থাকা সমস্ত নথি, তথ্য এবং সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআই-এর হাতে তুলে দিতে হবে।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন নির্যাতিতার বাড়িতে। সেখানে কলকাতা পুলিশেরতৎকালীন নগরপাল বিনীত গোয়েলকে পাশে নিয়ে সিবিআই তদন্তেরকথাবলেছিলেন।তদন্তেরজন্যপুলিশকে রবিবার পর্যন্ত ‘ডেডলাইন’ দিয়েছিলেন।তিনিজানিয়েছিলেন, কলকাতা পুলিশ যদি তদন্তে অগ্রগতি না করতে পারে তাহলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেই সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার দিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার আগেই এই মামলার রায়ে তদন্তের ভারযায়সিবিআই-এর হাতে।
বৃহস্পতিবার শিয়ালদা আদালতে শেষ হয়েছে আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের মামলার শুনানি। গোটা শুনানি হয়েছে রুদ্ধদ্বার কক্ষে। বৃহস্পতিবার শেষদিনের শুনানিতে সওয়াল করেন নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আইনজীবী। সওয়ালে তিনি আদালতের সামনে একগুচ্ছ প্রশ্ন রেখেছেন। তার পর সওয়াল করেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। সওয়ালে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির সাজা দাবি করেছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী।এইসওয়ালজবাবেরপরশেষহয়শুনানি।আগামী ১৮ জানুয়ারি দুপুর ২টো ৩০ মিনিটে এই মামলার রায়দান হবে বলে জানিয়েছেনশিয়ালদাআদালতের বিচারক।
শুনানি শেষ হলেও, সিবিআই- এর তরফে দোষীর সর্বোচ্চ সাজা চাওয়া হলেও সিবিআই তদন্ত নিয়ে অনাস্থাপ্রকাশ করেন নির্যাতিতার বাবা-মা দু’জনেই ।‘কলকাতা পুলিশ ৫ দিনে যা করেছে সিবিআই ৫ মাসে তা করতে পারল না।’
শিয়ালদা আদালতে শুনানি শেষ হতেই এমন কথা বললেন আরজিকরের নির্যাতিতার মা। নির্যাতিতার মা বলেন, ‘একা ওর পক্ষে আমার মেয়েকে মেরে ফেলা সম্ভব নয়। একটা হাসপাতালের জনবহুল হাসপাতাল। সেখানে কেউ একজন বাইরের এসে গেল হাসপাতালের কেউ জানতে পারল না এটা আমি মনে করি না। আমি মনে করি হাসপাতালের কেউ এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তারা সবাই সামনে আসবে, প্রকৃত তথ্য সামনে আসবে। যখন সবাই শাস্তি পাবে। তখন আমার মেয়ের আত্মা ও আমার মন শান্তি পাবে।’
আরজি কর মেডিক্যালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার শুনানি শেষে সিবিআই তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করলেন নির্যাতিতার বাবা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘এখন আমরা সিবিআইয়ের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছি না। আমরা প্রশ্নগুলি আদালতের সামনে রেখেছি। সেই প্রশ্নগুলি প্রকাশ্যে বলা যাবে না। কলকাতা পুলিশের ৫ দিনের তদন্তের ফল আজকে পাওয়া গেল। পরবর্তীতে সাপ্লিমেন্টরি চার্জশিট আসবে। তার ফলও পাওয়া যাবে। কলকাতা পুলিশ যেটা ৫ দিনে করল সেটা ৫ মাসে করতে পারছে না সিবিআই। ২ জনকে তো ছেড়েই দিল।’