চিত্র: সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: রামলাল—এই নামটা এখন অনেকের কাছেই অচেনা নয়, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও খড়গপুর ডিভিশনের বাসিন্দাদের কাছে। কারণ রামলাল হল এক বিশেষ হাতি, যার সঙ্গে অনেকেরই অদ্ভুত এক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। শান্ত স্বভাবের এই হাতিটির উপস্থিতি যেমন কৌতূহল জাগায়, তেমনি একধরনের মায়াও তৈরি করে।
সম্প্রতি রামলালের এক দৃশ্য আবার চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অনেক দিন অসুস্থ থাকার পর আবার সে যেন নিজের স্বাভাবিক চেহারায় ফিরেছে। সেই পুরনো ভঙ্গিমায় সে রাজ্য সড়কে বেরিয়ে পড়েছে দুলকি চালে। ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি রাজ্য সড়কের জিতুশোল এলাকায় হঠাৎ করেই রামলাল উঠে আসে সড়কে। তার বিশাল দেহ আর অনাড়ম্বর গতিবিধি দেখে গাড়ির চালকেরা থমকে দাঁড়ায়। সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় বাস, লরি, ছোট গাড়ি—সবারই গতি স্তব্ধ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এত বড় প্রাণী হয়েও রামলাল কিন্তু কোনো গাড়ির ক্ষতি করেনি। বরং ধীরে ধীরে এক একটি গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে শুঁড় বুলিয়ে যেন কিছু খুঁজছিল—বোধহয় খাবার। অনেকেই বলছেন এটা আদতে তার একরকম ‘তোলাবাজি’! যদিও সে আক্রমণাত্মক নয়, তাই স্থানীয় মানুষজনও খুব একটা ভয় পান না তাকে।
প্রায় ১০-১২ দিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল রামলালের কিছু ছবি, যেখানে তাকে খুবই অসুস্থ অবস্থায় দেখা যায়। তার শরীরে ছিল দগদগে ঘা, ক্লান্ত শরীর, মলিন চোখ। সেই দৃশ্য দেখে অনেকেই ব্যথিত হন, আর বনদফতরের চিকিৎসকেরাও তৎপর হয়ে ওঠেন। অ্যান্টিবায়োটিক খাবার দেওয়ার পাশাপাশি ওষুধ বেলুনের মাধ্যমে তার শরীরে প্রয়োগ করা হয়। চিকিৎসার সুফলও মেলে। কিছুদিনের মধ্যেই রামলাল আবার আগের মতো শক্তি ফিরে পায়।
সেই সুস্থ রামলালকেই আবার দেখা গেল রাজপথে, কখনও জিতুশোল এলাকায়, আবার কখনও গড় শালবনীতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্যুরিস্ট বাসের সামনে গিয়ে খাবার খুঁজতে। তবে খাওয়া না পেয়ে সে শান্তভাবে এলাকা ছেড়ে দেয়।
রামলালের চলাফেরা এখন একপ্রকার পরিচিত দৃশ্য হয়ে উঠেছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও সংলগ্ন অঞ্চলে। অনেকটা যেন এই এলাকা তার নিজের ঠাঁই। বনদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রামলাল যেহেতু শান্ত স্বভাবের, তাই আপাতত তাকে নিয়ে বিশেষ চিন্তার কিছু নেই। তবে নজরদারি রাখা হচ্ছে যাতে তার চলাচলে মানুষের বা তার নিজের কোনও ক্ষতি না হয়। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান কেবল সম্ভবই নয়, একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে তা সুন্দরভাবে পরিচালনাও করা যায়। রামলাল তার জীবন্ত উদাহরণ।