Bangla Jago Desk: লোককথা মেনে মনসা পুজো উপলক্ষে ভাসানো হয় ভেলা। গ্রাম-গ্রামান্তরের মানুষ সেই পুজোয় ভিড় করেন। মথুরাপুরের বটীশ্বর গাঁয়ের সেই মনসা পুজোর আলাদা মাহাত্ম্য আছে। আর এই জনপ্রিয় মেলায় সাপ নিয়ে হাজির হন শ্যামলেন্দু হালদার নামে এক ব্যক্তি। সাপের প্রতি ভালাবাসা থেকেই তিনি এই কাজ করেন। মথুরাপুরের সেই অন্যরকম মনসা আরাধনা নিয়েই আমাদের প্রতিবেদন।
লোক সমাজে মনসার আলাদা মাহাত্ম্য আছে।যুগ যুগ ধরেই আরাধ্য দেবতাকে পুজোপাঠ করার চল রয়েছে। মূলতঃ সর্পদংশন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই মনসাপুজো করা হয় বলে বিশ্বাস। পুরাণ অনুযায়ী, শিবের মানসকন্যা হলেন মনসা, জরত্কারু ছিলেন তাঁর স্বামী। কেউ কেউ বলেন, ঋষি কাশ্যপ হলেন মনসার পিতা। জরৎকারু মনসাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মনসা এমনিতে ভক্তবৎসল হলেও তাঁর পুজো করতে অস্বীকার করলে তিনি নির্দয় হয়ে থাকেন। সেই কারণে মনসামঙ্গল কাব্যের মনসা দেবীকে পুজো করার জন্য চাঁদসদাগরের কাছে শরান্নপন্ন হন। কিন্তু চাঁদসদাগর শিবের ভক্ত ছিলেন।
তিনি মনসার পুজোয় রাজি হননি। সেই কারণেই নাকি চাঁদসদাগরের ৭ সন্তান সাপের দংশনে প্রাণ হারান। অবশেষে তিনি বেহুলার কথায় মনসার পুজো করেন। সেই থেকে মনসা আরাধনার জন্য গ্রামবাংলায় বরাবরই ধুমধাম হয়। কোথাও কোথাও আবার মনসার জন্য ভেলা ভাসানো হয়।সেরকমই এক পুজোপাঠের আয়োজন দেখা গেল মথুরাপুরের বটীশ্বর গ্রামে। দেখা যায়, গলায় সাপ নিয়ে মেলায় হাজির হয়েছেন শ্যামলেন্দু হালদার নামে এক ব্যক্তি। মনসা ভক্তের এই সাপের খেলা দেখার জন্য এই মেলায় আসেন দূরদূরান্তের মানুষেরা।
বটিশ্বর গ্রামে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনরা এসে ভিড় করেন এই ভেলা ভাসানো দেখার জন্য। ভেলা ভাসিয়ে মনসার কাছে প্রার্থনা করেন তাঁরা। উদ্যোক্তারা এই সর্পপ্রেমীর সাপকে বাঁচিয়ে রাখার ভাবনার তারিফ করছেন মনসার আর্শীবাদ পাওয়ার জন্য দেবীর উদ্দেশ্যে হাঁস ছেড়ে দেওয়া হয়।
তারপরই ছেলে বুড়ো সবাই আনন্দে মেতে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে যুবক-যুবতী নাচের তালে তালে এগিয়ে চলেন মনসা দেবীর ভেলার সঙ্গে। লোকসমাজে মনসার এই অন্যরকম আরাধনার আলাদা আবেদন আছে। সবাই মনসাকে তুষ্ট করে মানবসমাজের কল্যাণ করার এই চিরাচরিত পুজোপাঠ সমাজের সব অংশের মানুষের কাছেও বিশেষ ছাপ ফেলছে।