ad
ad

Breaking News

Lakshmi Festival

নেই গৃহস্থ পুজো! পুরো গ্রাম মেতে ওঠে লক্ষ্মী-নারায়ণ আরাধনায়, কোথায় জানেন?

পাথরে খোদাই দেবী,এক মাত্র ব্যাতিক্রম উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের ৭ নম্বর ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ভাণ্ডার গ্রাম।

Lakshmi Festival: Ancient Stone Idol Sparks 30-Year Worship

গ্রাফিক্স: নিজস্ব

Bangla Jago Desk: সত্যেন মহন্ত: উত্তর দিনাজপুর: বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বন।  আর তার মধ্যে একটি পার্বন কোজাগরি লক্ষ্মী পুজো। আর বাকিরা যখন লক্ষ্মী পুজোর দিনে বাড়িতে বাড়িতে (Lakshmi Festival) পুজো করে ঠিক তখন এক মাত্র ব্যাতিক্রম উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের ৭ নম্বর ভাণ্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব ভাণ্ডার গ্রাম।

আরও পড়ুনঃ নভেম্বরেই বিহারের ভোট! দিনক্ষণ ঘোষণা করল জাতীয় নির্বাচন কমিশন

 দশমীর পরের দিন থেকে গ্রামের কোন বাড়িতে আমিষ রান্না হয় না। গ্রামের সকলে এই লক্ষ্মী পুজো করতে ব্যস্ত থাকে। গ্রামবাসীরা জানান আজ থেকে ৩০ বছর আগে লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামে বাউল উৎসব চলছিল। সেই সময় গ্রামের কৃষক নরেশ চন্দ্র বর্মন ,স্থানীয় গোকুল চন্দ্র বর্মণের জমিতে চাষ করার সময় নরেশ বাবুর লাঙলের ফলায় আটকে যায় একটি পাথর। সঙ্গে সঙ্গে সে কোদাল দিয়ে পাথরটিকে তোলে। পাথরটি জল দিয়ে পরিষ্কার করলে দেখা যায় কালো পাথরে খোঁদায় করা লক্ষ্মী নারায়নের মূর্তি। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই সেই গ্রাম থেকে এমনকি দূরদূরান্ত থেকে কয়েক হাজার লোক হাজির হয়ে যায় ঐ মাঠে। এরপর পূর্ব ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দারা ওই কালো পাথরের মূর্তিটিকে তাঁদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। (Lakshmi Festival) 

চিত্র: নিজস্ব

লিঙ্কঃ https://www.facebook.com/Banglajagotvofficial

খবর পেয়ে কালিয়াগঞ্জ থানা, জেলা প্রশাসন ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা ছুটে আসে। মূর্তিটির পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় সেটি কষ্টি পাথরের মূর্তি। যা লম্বায় প্রায় দের ফিট, চওড়ায় এক ফিট। প্রশাসনের তরফ থেকে মূর্তিটিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে গ্রামবাসীদের বাঁধার মুখে পরে প্রশাসনকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। এরপর ৩০ বছর আগে পূর্ব ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দারা একটি মন্দির বানিয়ে মূর্তিটির পুজো শুরু করে। সারা বছর নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে দুবেলা করে পুজো করলেও কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিনটিতে মহাসমরহে পুজোর আয়োজন করা হয়। 

প্রতিবছর গ্রামের মহিলারা বাড়ির লক্ষ্মী পুজো সেরে সন্ধ্যার মধ্যে লক্ষ্মী নারায়ন পুজো মণ্ডপে এসে হাজির হন, কারন মন্দিরে পুজো না করলে তাদের পুজো সম্পন্ন হয় না। পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের সমস্ত মহিলারা উপোস থাকেন। বছরের প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ও সন্ধ্যের সময় পুজো করা হয় এখানে। এই লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির খুব জাগ্রত। এখানে কেউ কোন কিছু মানত করলে মা তাঁদের ফেরান না। তাই গ্রামে বিয়ে বা অন্নপ্রাশন হলে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে এসে গ্রামবাসীরা প্রথমে পুজো দিয়ে যান। (Lakshmi Festival)

চিত্র: নিজস্ব

এই মন্দিরে গোটা বছর ধরে প্রচুর সোনা ও রুপার গহনা দান করেন ভক্তপ্রাণ মানুষজন। এই সকল গহনা সযত্নে জমা রাখা হয় লক্ষ্মী মাতার নামে। যার জমিতে এই কষ্টি পাথরের দেবী মূর্তি পাওয়া যায়, সেই গোকূল চন্দ্র বর্মণ লক্ষ্মী নারায়ণ মূর্তির মন্দির করার জন্য ২ কাঠা জমি দান করেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এখানে লক্ষ্মী নারায়ণ পুজো নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হচ্ছে। পূর্ব ভাণ্ডার গ্রামের লক্ষ্মী নারায়ণের পুজোকে কেন্দ্র করে আশেপাশের গ্রাম থেকে কয়েক হাজার লোকের সমাগম হয় এখানে।

বিশাল মেলা বসার পাশাপাশি তিন দিন ধরে চলে বাউল গানের আসর। জেলার বাইরে থেকে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বেশ কয়েকটি দল বাউল গানে অংশ নেবেন। তবে এবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাউল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪,১৫,১৬ অক্টোবরে। বাউল গান চলাকালীন প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তিন দিন পর মহাপ্রভুর ভোগ দিয়ে মেলা ভাঙা হয়। এই পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে দূরদূরান্তের অতিথীরা এসে হাজির হন। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থেকে শুরু করে কচিকাচারা। (Lakshmi Festival)