চিত্রঃ নিজস্ব
Bangla Jago Desk: নিদর্শন হয়ে উঠেছে মুর্শিদাবাদের হোসেনপুর গ্রাম। এখানে ধর্ম নয়, সম্প্রীতিই মুখ্য। এই গ্রামে প্রায় পাঁচশো বছর ধরে পাশাপাশি অবস্থান করছে একটি হিন্দু মন্দির এবং একটি মুসলিম মসজিদ। সময় গড়িয়েছে, প্রজন্ম বদলেছে, কিন্তু বদলায়নি মানুষের বিশ্বাস, ভালোবাসা আর একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা।
রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এই ধর্মস্থান দুটি যেন একে অপরের পরিপূরক। একদিকে শোনা যায় আজানের সুর, অপরদিকে বাজে পূজার ঘন্টা। সকালে নামাজ পড়েন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ, সন্ধ্যায় আরতি হয় হিন্দুদের দ্বারা — তবুও একটিবারের জন্য কেউ কারো বাধা নয়। বরং একে অপরের ধর্মীয় রীতিনীতি ও অনুভূতির প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিয়ে চলেছে জীবনযাপন।
বৈশাখ মাসে যখন এখানে বসে বার্ষিক মেলা, তখন সে দৃশ্য সত্যিই দেখার মতো। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে শত শত মানুষ ভিড় করেন এই পবিত্র স্থানে। কেউ আসেন সন্তানের কামনায়, কেউ রোগমুক্তির প্রার্থনায়, কেউবা শুধু মানত পূরণে কৃতজ্ঞতা জানাতে। মন্দিরে মাথা নিচু করেন যেমন মুসলিম ভাইরাও, তেমনি হিন্দুরাও শ্রদ্ধাভরে প্রবেশ করেন মসজিদের প্রাঙ্গণে। এইখানেই ধরা পড়ে ধর্মের আসল উদ্দেশ্য — ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মানবসেবা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে শোনা যায় তাঁদের দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতা। তাঁরা বলেন, “আমরা ছোট থেকেই দেখে আসছি, এখানে কখনো কোনো বিভেদ হয়নি। উৎসব হোক বা দুর্যোগ, আমরা সবাই একসাথে থাকি। কে হিন্দু আর কে মুসলিম, তা নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলে না।” এই স্বাভাবিক অথচ অমূল্য ঐক্যবোধই হোসেনপুরকে করে তুলেছে একটি আলোকিত গ্রামের প্রতীক।
এই মন্দির ও মসজিদের সহাবস্থান যেন এক জীবন্ত পাঠশালা — যেখানে শিক্ষা দেওয়া হয় মানবতার, ভ্রাতৃত্বের এবং একতার। এখানে ধর্ম একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহযাত্রী মনে করে। সম্প্রীতির এই বার্তাই ছড়িয়ে পড়ুক আরও বহু প্রান্তে, গড়ে উঠুক অসংখ্য হোসেনপুর।