ad
ad

Breaking News

Hoogly

আজও বলাগড়ে মকর সংক্রান্তিতে দেখা মেলে ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকির

প্রথমে ঢেঁকিকে  পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। তারপর ছোট ছোট "পুয়া" অর্থাৎ কাঠ কেটে  ঢেঁকির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়।

Even today, traditional Dheki can be seen in Balagarh on Makar Sankranti.

নিজস্ব চিত্র

Bangla Jago Desk: শীত পড়লেই গ্রামগঞ্জের বাড়ি থেকে ভেসে আসতো ‘ধূপধাপ’ আওয়াজ। দুপুরের থেকে রাত পর্যন্ত চলত ঢেঁকিতে চাল কোটার কাজ। আর সেই চালের গুড়ি দিয়ে পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে তৈরি হত নানা রকমের পিঠে। তবে এখন সেসব একেবারেই কমে গিয়েছে। ঢেঁকির জায়গায় দখল নিয়েছে আধুনিক যন্ত্র। তবে কমবেশি এখনো ঢেঁকি দেখা যায় গ্রামবাংলায়। হুগলির বলাগড়ের রুকেশপুর গ্রামে কান পাতলেই শোনা যায় ঢেঁকির আওয়াজ।

সারা বছর ঢেঁকি তোলা থাকলেও পৌষ মাসের সংক্রান্তি এলেই ১০-১২ দিন আগে থেকেই গ্রামে পাতা হয় ঢেঁকি। গোটা পাড়া জুড়েই যেন একটা উৎসব মুখর হয়ে ওঠে। গ্রামের মহিলারা দলবেঁধে এসে ঢেঁকিতে চাল কুটে নিয়ে যায় বিভিন্ন স্বাদের পিঠে তৈরি করবার জন্য। রুকেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আঙুর সাঁতরার বাড়িতে প্রায় ৬০ -৬৫ বছর আগে থেকেই ঢেঁকির প্রচলন রয়েছে।

মকর সংক্রান্তি এলেই শুরু হয়ে যায় ঢেঁকিতে চাল কোটা। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের মহিলারা রাত জেগে চাল কুটতো। কিন্তু সে সব দিন এখন বদলে গিয়েছে। সেই জায়গায় দখল করেছে আধুনিক যন্ত্র। যেখানে সহজেই চাল গুড়ো করা যায়। আবার অনেকেই বাজার থেকে চালগুড়ি কিনে পিঠে তৈরির করে। আর ঢেঁকিতে চালগুড়ি করতে অনেক পরিশ্রম ও লোকের প্রয়োজন হয়। দু কেজি চাল গুড়ি করতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা।

কিভাবে পাতা হয় ঢেঁকি ?

সংক্রান্তির দিন আগে থেকেই ঢেঁকি পাতার কাজ শুরু হয়। প্রথমে ঢেঁকিকে  পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। তারপর ছোট ছোট “পুয়া” অর্থাৎ কাঠ কেটে  ঢেঁকির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর ঢেঁকির সামনের অংশে যেখানে চাল দেওয়া হয় সেখানে বসানো থাকে একটি লোহার গোলাকৃতি “গড়”। তার নিচে বসানো থাকে একটি পাথর।

গড়ের চারপাশ মাটি দিয়ে ভরা হয়। ঢেঁকির মুখের অংশ গড়ে গিয়ে পড়ে এবং সহজেই চাল গুড়ো হয়ে যায়। ঢেঁকি যত বেশি ওজন হবে তত তাড়াতাড়ি গুড়ো হবে চাল।

প্রথমে চাল ভিজিয়ে নেওয়া হয়। কিছুটা নরম হয়ে যাওয়ার পর তারপর গড়ে দেওয়া হয়। ঢেঁকির অপরপ্রান্তে পা দিয়ে চাপ দিলেই সামনের অংশ গরিয়ে গিয়ে পড়ে। তখনই চালগুড়ি হয়। এরপর সেখান থেকে চাল তুলে চালুনিতে চেলে নিলেই তৈরি হয়ে যায় চাল গুড়ি।

আর সেই চালের গুড়ি দিয়ে তৈরি হয় সরা পিঠে, পুলি পিঠে, ভাজা পিঠের মতো বিভিন্ন স্বাদের পিঠে। মেশিনে ভাঙ্গা চালের থেকে ঢেঁকির চালের গুড়ি দিয়ে যে পিঠে তৈরি করা হয় তার স্বাদও আলাদা হয়। আঙুর সাঁতরা বলেন, সারা বছর ঢেঁকি তোলা থাকে আর পৌষ সংক্রান্তি এলেই পাতা হয়। অনেক পুরনো এই ঢেঁকি। শাশুড়ির কাছে শুনেছি প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ বছর আগের ঢেঁকি।

পৌষ সংক্রান্তি এলেই আমাদের বাড়িতে গ্রামের অনেক মহিলা ঢেঁকিতে চাল ভাঙতে আসেন। সবাই একসাথে বসে চাল ভাঙ্গা হয়। হাসি আর গল্প করতে করতেই চলে চাল ভাঙ্গা।আর ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গা পিঠের স্বাদই আলাদা। এখন অনেক মেশিন বেরিয়েছে, কিন্তু ঢেঁকি চালের স্বাদের তুলনা হয় না। সরা পিঠে বা পুলি পিঠে করতে গেলে মেশিনের চালে খুব একটা ভালো হয় না যেটা ঢেঁকির চালে হয়।   

পূর্ণিমা প্রামানিক বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম সারা রাত ধরে চাল কোটা হত। গ্রামের বিভিন্ন পাড়া থেকে মানুষ এসে চাল কুটতো। ঢেঁকি বন্ধ হত না সবসময় ঢেঁকি চলত। এতটাই ভিড় হতো যে লাইন পড়ে যেত। তবে আগের থেকে এখন অনেক কমে গেছে। অনেকেরই শরীরে সমস্যা রয়েছে তাই অনেকেই মেশিনে ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসে। তবে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে ঢেঁকি কি জিনিস তা হয়তো তারা জানতে পারবে না। গ্রামের আশেপাশে কোথাও আর দেখা যায় না, শুধুমাত্র সাঁতরা বাড়িতেই দেখা যায়। এটা একটা গ্রামের ঐতিহ্য।