চিত্র: সংগৃহীত
Bangla Jago Desk: ক্রমেই অবনতি হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক। সম্প্রতি দিল্লি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, বাংলাদেশ আর ভারতের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করতে পারবে না। এই সিদ্ধান্তের পালটা প্রতিক্রিয়ায় এবার বাংলাদেশও কড়াকড়ি আরোপ করল।
বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, এখন থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আর ভারত থেকে সুতো আমদানি করা যাবে না। এই সিদ্ধান্ত আজ থেকেই কার্যকর হয়েছে। এর ফলে ভারতে তৈরি সুতো বাংলাদেশে ঢোকার একটা গুরুত্বপূর্ণ পথ বন্ধ হয়ে গেল।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ-এর দাবি ছিল। তারা ফেব্রুয়ারি মাসেই সুতো আমদানিতে স্থলবন্দর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল। এরপর মার্চ মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্যারিফ কমিশন এনবিআরকে চিঠি দিয়ে জানায়, দেশের টেক্সটাইল শিল্পকে বাঁচাতে এই পদক্ষেপ দরকার।
ট্যারিফ কমিশনের মতে, দেশের সীমান্তবর্তী স্থলবন্দরগুলিতে এখনো আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সুতো যাচাই করার পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই এই মুহূর্তে শুধুমাত্র সমুদ্রপথে সুতো আমদানির অনুমতি দেওয়া উচিত। সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান নতুন এই সিদ্ধান্ত নেন।
অন্যদিকে, ভারতের ‘সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইন্ডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস’ (CBIC) গতকাল জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুনের সেই চুক্তি বাতিল করা হল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি করত। এখন থেকে বাংলাদেশ ভারতের বন্দর, বিমানবন্দর বা সীমান্ত ব্যবহার করতে পারবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইউনুস সম্প্রতি চীনে গিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাও এই টানাপোড়েনের একটা বড় কারণ। ইউনুস বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য (যাদের ‘সেভেন সিস্টার’ বলা হয়) পুরোপুরি পাহাড় ও স্থলভাগে ঘেরা, আর সমুদ্রপথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা বাংলাদেশ। এই মন্তব্য ভারতের কাছে একটি বার্তা, বাংলাদেশ চায় ওই অঞ্চলকে আলাদা করতে।
এই ধরনের মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকেই বলছেন, এই মন্তব্যই ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কফিনে শেষ পেরেক। তাই দিল্লি ব্যবসার পথ বন্ধ করে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। আর বাংলাদেশও পালটা জবাব দিয়েছে স্থলবন্দর বন্ধ করে।
দুই দেশের এই কূটনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে নেপাল, ভুটান ও মায়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়। এখন দেখার বিষয়, উত্তপ্ত এই পরিস্থিতি কতদূর গড়ায়।